বন্যা থেকে মানুষকে বাঁচাতে উভচর বাড়ি (Amphibian House) বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কেরলের দুই তরুণ প্রযুক্তিবিদ। এই ধরনের অভিনব বাড়ি ভারতে প্রথম। বছরের সাধারণ দিনগুলিতে যা আর পাঁচটা বাড়ির মতোই। কিন্তু বন্যা এলেই ভেসে উঠবে জলের উপরে। ফলে বন্যার যাবতীয় বিপদ থেকে রক্ষা পাবে মানুষ।
সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বিশ্বজুড়েই চর্চা চলছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। বিভিন্ন সম্মেলনে উঠে এসেছে নানান সমাধানসূত্র, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের নীল-নকশা। তবে এই সব সতর্কতা সঠিক ভাবে গ্রহণ করলেও তত্ক্ষণাত্ বদলাবে না পরিস্থিতি। ফলে, সাম্প্রতিক পরিবেশের সঙ্গেই মানিয়ে নিতে হবে সভ্যতাকে। এবার তেমনই এক সমাধানসূত্র খুঁজেছেন কেরলের এই তরুণ প্রযুক্তিবিদেরা।
পূর্ব কিংবা উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিই হোক অথবা উত্তর-পূর্বের অসম— প্রতিবছরেই বন্যার কবলে মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। কেরলের মতো দক্ষিণের রাজ্যগুলিতেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বানভাসি মানুষকে প্রতিনিয়ত ব্যতিব্যস্ত হতে হয়। অসমে তো এবার সব রেকর্ড ভেঙে দেওয়া বন্যায় সামনে এসেছে লক্ষ লক্ষ মানুষের হাহাকারের ছবি। এই সময়েই নতুন এই গৃহনির্মাণ প্রযুক্তি ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো নিয়ে আসছে।
কেরলের তিরুবন্তপুরমের প্রযুক্তিবিদ নানমা গিরিশ (Nanma Girish) এবং বেন জর্জের (Ben George) উভচর বাড়ি তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। প্রযুক্তিবিদ্যার স্নাতকোত্তর স্তরের প্রজেক্ট হিসাবে এই ধরনের বাড়ি তৈরি করা শুরু করেছিলেন তাঁরা। তবে সেসময় সম্পূর্ণ সাফল্য মেলেনি। স্নাতকোত্তর পাশ করার পর, মোটা অঙ্কের চাকরি ছেড়ে জর্জ ও নানমা খুলে ফেলেন একটি স্বতন্ত্র নির্মাণ সংস্থা, ‘নেস্ট অ্যাবাইড’। অর্থ উপার্জনের জন্য সাধারণ বাড়ি ও অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করলেও, তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল উভচর বাড়ি সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া। শেষ পর্যন্ত যাতে সাফল্য মিলেছে।
বন্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি এই বাড়ি আক্ষরিক অর্থেই উভচর। কারণ, সাধারণ বাড়ির মতো হলেও বন্যার জলের তোড়ে ভেঙে পড়বে না এই বাড়ি। বরং প্লাবণের জলে ভেসে থাকবে। অনেকটা ভেনিসের ভাসমান বাড়ির মতোই। পরে বন্যার জল কমে এলে বাড়িটি আবার মাটির উপর যথাস্থানে ফিরে আসবে।
বিশেষ প্রযুক্তির এই উভচর বাড়িতে ভাল মানের জিআই পাইপ ব্যবহার খরচ হবে প্রতি বর্গ ফুটে ১৬০০ টাকা। ১৩০০ বর্গফুটের বাড়ি চারমাসেই হেসেখেলে বানিয়ে ফেলা সম্ভব ।
এই ধরনের বাড়ি তৈরির জন্য কানাডায় আন্তর্জাতিক প্রকল্পেরও শরিক ছিলেন এই দুই প্রযুক্তিবিদ। পরে তাঁরা নিজেদের স্টার্ট আপ কোম্পানি খুলে বন্যাপ্রবণ ভারতের সমস্যার দিকে নজর দিয়েছেন। কেরলের কোট্টায়াম জেলায় উভচর বাড়ির মডেল বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। যা ভবিষ্যতে ভারতের বন্যা মোকাবিলা ব্যবস্থায় নতুন ভাবনার জন্ম দিয়েছে।
এই দুই প্রযুক্তিবিদের উদ্যোগ আন্তর্জাতিক স্তরেও স্বীকৃতি পাচ্ছে। ফোর্বস পত্রিকায় এশিয়ার উল্লেখযোগ্য কাজকর্ম করা তরুণ ব্যক্তিদের ৩০ জনের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন নানমা গিরিশ ও বেন জর্জ।