সাফল্যের প্রতিটি উড়ানের পিছনেই থাকে ঘাম-রক্ত ঝরানোর এক অদম্য লড়াইয়ের গল্প। আলো ঝলমল মঞ্চে হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন যিনি, উচ্চতার শিখরে পৌঁছতে তাঁকেও চরম সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কষ্টেই কেষ্ট মেলার সেই সমীকরণ থেকে বাদ পড়েননি বলিউডকে একের পর এক হিট গান দিয়ে যাওয়া গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ বা কেকে। একসময়ে ঘুরে ঘুরে টাইপরাইটার পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে তাঁকে। হোটেলে হোটেলে সারারাত গান গাইতেন তিনি। মানুষ তখন তাঁর গান শোনার বদলে খাবার খেতে আর মদ্যপান করতেই বেশি মনোযোগ দিতো। বম্বের আলোকিত মেরিন ড্রাইভে দাঁড়িয়ে কেকে একসময়ে ভাবতেন, এই শহরটা আমাকে জায়গা দেবে তো?
কলকাতার নজরুল মঞ্চে ৫৩ বছর বয়সি কেকে-র সাড়া জাগানো পারফরম্যান্স, তারপরেই আকস্মিক প্রয়াণ গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। গায়ক, বন্ধুকে ঘিরে স্মৃতিচারণ সর্বত্র। আর এই সময়েই পুরনো বন্ধুকে নিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে দিয়েছেন তাঁর কলেজ জীবনের সঙ্গী, একই ব্যান্ডের সতীর্থ গৌতম চিকেরমানে। তিনি জানিয়েছেন কেকে-র জীবনের অনেক অজানা কথা।
টুইটারে গৌতম লিখেছেন,
…দিল্লির কিরোরিমল কলেজে আমাদের ব্যান্ড, হরাইজন। কেকে তার লিড সিঙ্গার, ড্রামার। জুলিয়াস, ফ্র্যানজ, টম, সন্দীপ আর আমি সেই দলে। সব কলেজে গিয়ে আমরা পারফর্ম করতাম আর প্রাইজ জিতে নিতাম। বেশিরভাগ সময়েই ফার্স্ট, না হলে সেকেন্ড। আইআইটি দিল্লি-কানপুর, শ্রীরাম কলেজ অব কমার্স, হিন্দু কলেজ— এমনকি সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামেও অনুষ্ঠান করেছি। এক রাতে পাঁচ হাজার টাকা পেলেই নিজেদের রাজা মনে হতো। তবে আমাদের সবার মধ্যে কেকে আর জুলিয়াসই স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা দেখাতো। কেকে গায়ক হিসেবে আর জুলিয়াস কম্পোজার হওয়ার কথা ভাবতো। আমরা কয়েকজন অবশ্য রোজকার কাজের মধ্যেই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছিলাম।
কেকে ছিল আমাদের ব্যান্ডের প্রাণ। চরম উৎসাহ আর ক্রিয়েটিভিটি তো রয়েইছে, একেবারে ব্যতিক্রমী ট্যালেন্ট বলা চলে। অসাধারণ গলা, কারও সঙ্গে তুলনা চলে না। ওর গলায় সুর ছিল সহজাত। কলেজে কেকে ইংরেজি গান গাইতো। মুম্বইয়ে গিয়ে হিন্দি গান গাওয়া শুরু করেছিল। পল নামে একটি অ্যালবাম রিলিজ করেছিল।
…কয়েক বছর পর মুম্বইয়ে গিয়েছি, কেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। মেরিন ড্রাইভে সারারাত হাঁটলাম আমরা। আমাদের যুবক বয়সের কথা, পরিবার, স্বপ্ন —সব কিছু নিয়ে কতো কথা হল। পুরনো গান, নতুন গান, ভবিষ্যতের গান, না গাওয়া অনেক গান নিয়ে দু’জনে কথা বললাম। কেকে আমাকে বলছিল, কীভাবে লড়াই করতে হয়েছে তাকে। একসময় বেঁচে থাকার জন্য টাইপরাইটার পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। কিন্তু সেই কাজে ওর মন সায় দিতো না। ও তো এক অন্য জগতের মানুষ। সুরের জগতের। লাইট-সাউন্ড-পারফরম্যান্স— সব সময়েই ওকে টানতো।
একদিন ওই চাকরি ছেড়ে দিল কেকে। হোটেলে হোটেলে গান গাওয়া শুরু করল। কেকে সেদিন আমাকে বলেছিল, ও যখন গান গাইছে মানুষ খাবার খাচ্ছে, কেউ মদ্যপান করছে— এটা দেখে ওর ভাল লাগতো না। তবে এমন ভাবে ১০ মিনিট চলার পর ও নিজেই ব্যান্ডের সতীর্থদের বলতো, নিজেদের জন্যই গাইতে হবে আমাদের। এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে।
এরপর বম্বে আর বলিউডে পা রাখার স্বপ্ন দেখেছিল কেকে। বিজ্ঞাপনের জগতে প্রতিষ্ঠা পেতে চেষ্টা করেছিল। ওর লড়াই আর সাফল্যকে নিয়ে সেদিন আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছিল কেকে। বলেছিল, কত ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে।…আমরা মেরিন ড্রাইভের একেবারে শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েছিলাম। কেকে আমাকে বললো, বম্বেতে এসে ঠিক এই জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে এতসব আলোর দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, এই শহরটা যদি আমাকে জায়গা করে দেয়!
পুরনো বন্ধুকে নিয়ে গৌতম লিখেছেন, সত্যি, কেকে যা চেয়েছিল, সেটাই হয়েছে। বম্বে মুম্বাই হয়েছে, আর আমাদের কেকে হয়ে গিয়েছে গোটা ভারতের কেকে।
KK somporke onek ojana toththyo jante pere sommriddho holam. Khub bhalo laglo.
Ok, it’s alright.