আব্দুল অলিল
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার কিছু কিছু জলাশয়ে শীতের আগে থেকেই পরিযায়ী পাখিরা (Migratory birds) আসতে শুরু করে। এই বাংলার জলাশয় ও জঙ্গলে মাসকয়েক কাটিয়ে সন্তানদের নিয়ে ওরা দেশে ফিরে যায়। এবছর গত কয়েকদিন ধরে জাঁকিয়ে শীত পড়তে শুরু করেছে। অবশ্য, তার আগেই পরিযায়ী পাখিরা (Migratory birds) এখানে আসতে শুরু করেছে। তবে সমস্যা হল, পরিবেশের নানা সঙ্কটে বেশ কয়েক বছর ধরেই পাখিদের মুখভার। তাই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
কী বলছে বন দফতরের সমীক্ষা
জলাশয় বা জলা এলাকায় প্রতিবছর পরিযায়ী পাখি (Migratory birds) কেমন আসে, রাজ্যের বন দফতর তার একটা সমীক্ষা করেছিল ২০২১ সালে। সেই রিপোর্টে বলা হয়, গোটা রাজ্যের মধ্যে বীরভূমের বল্লভপুর ঝিলে সব চেয়ে বেশি পাখি আসে— যার সংখ্যা ছিল ৩১ টি প্রজাতির ১৫ হাজার ৪৫৭টি পাখি। শীতকালে পাখি আসে— রাজ্যের এই রকম ৫৪টি জলাশয়ে সমীক্ষা চালানো হয়।
রিপোর্টে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৬৭৫টি পরিযায়ী পাখির তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। বল্লভপুর ঝিলের পরেই সংখ্যার বিচারে ছিল বীরভূমের বক্রেশ্বর বাঁধ। সেখানে ৩৫টি প্রজাতির মোট ১০ হাজার ১৭০ টি পাখির সন্ধান পাওয়া যায়। এর পর ছিল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকা। এখানে পাখির সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫৭৪ টি, সুন্দরবনের জম্বুদ্বীপে পাখির সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৩০৪টি, জলপাইগুড়ির গজলডোবায় পাখির সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ১১০টি,ফুলবাড়ির জলাশয়ে ৬ হাজার ৯৩৬ টি, পূর্ব বর্ধমানের চুপির চরে ৬ হাজার ২০ টি এবং হাওড়ার সাঁতরাগাছির ঝিলে পাখি এসেছিল ৫ হাজার ৬৫১টি।
তবে সর্বাধিক পাখির সংখ্যার নিরিখে বল্লভপুর ঝিল থাকলেও প্রজাতির নিরিখে এগিয়ে ছিল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার বর্তির বিল। এই বিলে ৬৫টি প্রজাতির পাখি এসেছিল। ওই বছর কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরেও সমীক্ষা চালানো হয়। ওই জলাশয়ে ১০ টি প্রজাতির ১ হাজার ৫২২টি পরিযায়ী পাখি এসেছিল। পূর্ব কলকাতার জলাভূমির মধ্যে নলবন ঝিলে ৩৯ টি প্রজাতির ১ হাজার ২১১টি প্রজাতির পাখি ভিড় জমিয়েছিল।
অন্য জলাশয়ে পরিযায়ী
পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত জলাশয়গুলি পরিযায়ী পাখিদের (Migratory birds) হাতছানি দেয় তার কয়েকটি হল, উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার মেদিয়া কঙ্কনা বাওড়, গাইঘাটা ও বনগাঁর বেড়িগোপালপুর ও পাঁচপোতা বাওড়, শশীডাঙা বাওড়, ডুমা বাওড়, ঝাউডাঙা বাওড়, আমডাঙার বর্তি বিল, স্বরূপনগরের বিলবল্লী।
এ ছাড়া, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জলাশয় ও ভেড়িগুলিতে শীত এলে দেশি পাখিদের পাশাপাশি বিদেশি পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। কিন্তু এখন অধিকাংশ জলাশয় মজে গিয়ে কচুরিপানা ও আগাছায় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পছন্দ মত পরিবেশের অভাবে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা এখানেও কমতে শুরু করেছে।
এক সময় মেদিয়া কঙ্কনা বাওড়ে জল থৈ থৈ করত, এখন বর্ষা চলে গেলেই বাওড় শুকিয়ে শুনশান হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাব এবং বাওড়ের মাঝ বরাবর রাস্তা তৈরি পর থেকে জলের ঢেউ খেলা বন্ধ হয়েছে। বাওড় দ্বিখন্ডিত হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এক সময় এই বাওড় দেশি-বিদেশি পাখিদের আতুরঘর ছিল। শীতকালে যে সমস্ত পরিযায়ী পাখি আসে, এখন তারা মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে। প্রায় ৬০০ বিঘা আয়াতনের এই জলাশয়ে মাছের সংখ্যাও কমেছে। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছে মেছো ভেড়ি ও জলাশয়। শীত পড়তেই দলে দলে পাখি ভিড় জমায় এখানে, কিন্তু এবার এখানে পাখি কম আসায় মন খারাপ সুন্দরবনবাসীদের।
স্থানীয়রা জানান, মদন টাক, স্যাংকল, হাঁস পাখি, সাদা বক, কুনো বক, কাকপাখি, ডুবুরি, মাছরাঙা, বাটাং, পানিকৌড়ি, বেকচো, ধাড়বক, কাকবক, বিল বাচ্চু-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি জলাশয় গুলিতে আসে,আর দেশীয় পাখিরা তো আছেই। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও খাবারের সন্ধানেই সুদূর সাইবেরিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাখিরা সুন্দরবনে আসে। অভিযোগ, জলাশয়গুলিতে মাছ চাষের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক খাদ্য ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। জল দূষণের কারণে পাখিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের নর্জা দিঘিতে শীত পড়তেই পরিযায়ী পাখিদের (Migratory birds) আগমন ঘটে । ভিনদেশি পাখিদের কোলাহলে সরগরম হয়ে উঠে জলাশয়টি। জলাশয় সংলগ্ন গাছের গুলোতেও ভরে যায় রংবেরঙের নানা প্রজাতির পাখি। সাইবেরিয়া, ইউরেশিয়া, তিব্বত বা হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উড়ে আসে বহু প্রজাতির হাঁস। বিদেশি নর্দার্ন পিনটেল, গ্যাডওয়াল, কমন টিলের পাশাপাশি সেই তালিকায় থাকে স্থানীয়-পরিযায়ী ছোট শরাল (লেসার হুইসলিং ডাক), বালিহাঁস (কটন পিগমি গুজ)-রাও।
উত্তরবঙ্গে পরিযায়ী
উত্তর দিনাজপুরের রাগঞ্জের কুলিক জলাশয়ে শীত আসার আগে থেকেই পরিযায়ী পাখিদের (Migratory birds) আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। কুলিক পক্ষীনিবাসে কিন্তু, এবছর পাখির সংখ্যা কমতে পারে আশঙ্কা করছেন বনদপ্তর পক্ষীপ্রেমীরা। রায়গঞ্জ শহরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এই কুলিক পক্ষীনিবাস। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে অবস্থিত সোহারই, ভট্টদিঘি ও আব্দুলঘাটা— এই তিনটি মৌজার প্রায় ১৩০ হেক্টর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে পক্ষীনিবাসটি।
উত্তর-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে মূলত ইগ্রেট, কর্মোর্যান্ট, নাইট হেরন ও ওপেন বিল স্টর্ক ৪ প্রজাতির পাখি এখানে আসে। পক্ষীনিবাসকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এখানে আছে অ্যাভিয়ারি বা মাইক্রো বনাঞ্চল যেখানে প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফিন্স, ককটেল, জাভা সহ নানান প্রজাতির পাখি। ২০২১ সালে এই পক্ষীনিবাসে প্রায় ৯৯ হাজার ৩৯৩ পাখি এসেছিল।
ইসলামপুরের শহর সংলগ্ন ভরভেড়ি জলাশয়টি পরিযায়ীদের (Migratory birds) দীর্ঘ দিনের চেনা ছবি। শোনা গেছে ইতিমধ্যে প্রায় দশ হাজার পাখি এসে পৌঁছে গেছে। পাখি দেখতে পাখি প্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর গত ২৫ বছর ধরে এই জলাশয়ে বিদেশি পাখিরা আসছে। বালিহাঁস-সহ নানা ধরনের বিরল প্রজাতির পাখি এখানে আসে। পর্যটন দফতরের দাবি, উত্তরবঙ্গে শীত পড়লে পর্যটকদের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ পরিযায়ী পাখি। উত্তরবঙ্গে দেশ-বিদেশের প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসে।
মূলত সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে। সমতল থেকে ১২০০ ফিট উচ্চতা পর্যন্ত প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়। গজলডোবা, গরুমারা, লাটাগুড়ি, চালসা, মূর্তি সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর পাখি ভিড় জমায়। কিন্তু এবছর জলাশয়গুলিতে উদ্বেগজনক ভাবে কমছে পরিয়ায়ী পাখির সংখ্যা। বিশেষ করে আলিপুরদুয়ারের নারারথলি এবং কোচবিহারের বিখ্যাত রসিকবিলে।
২০২৩ এর জানুয়ারি মাসে বন দফতর ও পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদের উদ্যোগে এই দুটি জলাশয়ে পরিযায়ী পাখি নিয়ে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা হয়। ন্যাফের দাবি , গত বছরের তুলনায় আলিপুরদুয়ারের নারারথলি জলাশয়ে পাখির প্রজাতি বেড়েছে। তবে মোট সংখ্যার বিচারে পরিযায়ী পাখি কম এসেছে। সমীক্ষায় প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, রসিকবিলে ৪০টি প্রজাতির ৫০০০ পাখি আসে।
তার আগের বছর এই বিলে ৪৭টি প্রজাতির ৬০০০ পাখি এসেছিল। সাতটি প্রজাতির পাখি যেমন এবার কম এসেছে তেমনি পাখির সংখ্যা কমেছে প্রায় এক হাজার। নারারথলির পরিসংখ্যান, গতবছর সেখানে ৩৩টি প্রজাতির ১৬০০টি পাখি এসেছিল। এবছর পাখির প্রজাতির সংখ্যা বাড়লেও মোট সংখ্যা কমেছে। নারারথলিতে এবছর ৪০টি প্রজাতির ১২০০টি পাখি এসেছে।
সংখ্যা কমলেও এই জলাশয় সাতটি নতুন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি (Migratory birds) এসেছে। কোচবিহারের রসিকবিল গোটা রাজ্যে পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আস্তানা ছিল। গত ১০ বছরের তুলনায় এখন অনেক কম প্রজাতির পাখি আসছে এই বিলে।
রূপনারায়ণ, কংসাবতীর চরে পরিযায়ী
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট পরিযায়ী পাখিদের কেন্দ্র স্থল উঠেছে। শীত আসলেই রূপনারায়ণ নদী চর সংলগ্ন এলাকায় পাখিদের দর্শন পেতে ভিড় জমায় পর্যটকরা। দেশি- বিদেশি পাখির আগমন ঘটে কোলাঘাটের বড়িষা অ্যাকাডেমি ও থার্মাল পাওয়ারের আশপাশের গাছগুলিতে।
শুধু কোলাঘাটে নয়, দুই মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন জলাশয় ও জঙ্গলে প্রতি বছর শীতে পরিযায়ী পাখিরা আসে। যেমন শালবনির গোদাপিয়াশাল, ভাদুতলা, কেশিয়াড়ির খাজরা, কংসাবতীর আশপাশে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পাখির সংখ্যা কমেছে। কেন কমছে, তার কারণ হিসেবে স্থানীয়রা মনে করছেন, জলাশয়ের দূষণ, মাইকের তাণ্ডব, মাছ ধরা, চোরাশিকারিদের উপদ্রব এবং খাদ্যের অভাব।
এছাড়া, জলাশয়গুলি কচুরিপানায় ভরে থাকে, পরিষ্কার করা হয় না। ’পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে একটি শ্রেণি জলাশয় নির্ভর। ফলে তারা পরিস্কার জল পছন্দ করে,জলাশয় অপরিষ্কার থাকলে তাদের পক্ষে সেখানে থাকা মুশকিল। আবার ইদানিং বেশ কিছু জলাশয়ে পাখির আনাগোনা বেড়েছে। তাজপুরের ঝিল ছাড়াও পাঁশকুড়া, হলদিয়ায় শালুকখালিতে একটি শিল্প সংস্থার ঝিলে প্রচুর পাখি আসছে।
কুঁকড়াহাটি, নয়াচর, হলদিয়া টাউনশিপ বন্দর এলাকার সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পের গাছেও পাখিরা আসছে। কুঁকড়াহাটিতে এক ধরনের পরিযায়ী পাখি আসছে গত দু’বছর ধরে। বেশির ভাগই বক জাতীয়। এই পাখি হুগলি নদী পারাপার করা লঞ্চের কাছেই খাদ্যের জন্য বেশি ঘোরাফেরা করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি এরা চলে আসে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকে। হলদিয়া শহরের ড্রাই ডকেও প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসছে। যদিও বন্দর আবাসনের গাছগুলিতে পাখির সংখ্যা কমেছে। অধিকাংশ গাছের ডাল কেটে দেওয়া হয়েছে। পাখিদের বাসা বাঁধার অনুকূল পরিবেশ নেই। বালুঘাটার জঙ্গলেও পাখির সংখ্যা কমছে। সন্ধে নামলেই যে জঙ্গল পাখির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠত, এখন সেখানে শ্মশানের নীরবতা।
ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির খাদারানি ও গোপীবল্লভপুর ঝিলেও আসে পরিযায়ীরা । কংসাবতীর পাড়ে গত বছরও তিনি চার রকমের মাছরাঙা, সরাল, ব্রাহ্মণী হাঁস (চখাচখি), তিন ধরনের বক, বালি হাঁস, জিরিয়া, বাটান প্রভৃতি ধরনের পাখি মানুষ দেখেছেন।
বদলে গিয়েছে চেনা জলাশয়
পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার রক্ষিতপুরের সরকারি জলাশয়টি ছিল পরিযায়ী পাখিদের প্রাণকেন্দ্র। শীত পড়লেই পাখি আসা শুরু হয়। এখন ওই জলাশয়ে পাখিদের পছন্দ মতো পরিবেশ নেই, পাখিরা এসে মুখ ভার করে ফিরে যাচ্ছে।
২০০৭ সালে এই জলাশয়কে কেন্দ্র করে বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভরতার উদ্দেশ্যে ছাগল পালনের খামার এবং মাছ চাষ শুরু হয়েছিল। তার পর থেকে জঙ্গল লাগোয়া জলাশয়টি পাখিদের পছন্দের জায়গা হয়ে ওঠে। প্রতিবছর কয়েক হাজার পাখি এখানে ভিড় জমাতে থাকে।
কিন্তু এখন ওই জলাশয়ে মাছ চাষ, ছাগলের খামার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কচুরিপানা ও আগাছায় ঢেকে ফেলেছে, এখন জলাশয়ের শ্বাসরুদ্ধ পরিবেশ। চেনা জলাশয়টি, পাখিদের কাছে এখন অচেনা।
পাখিদের সমস্যা কোথায়
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গ রাজ্য বলে পরিচিত। দেশের বৃহত্তম গাঙ্গেয় ‘ব’ অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গ। এখানে অসংখ্য নদী,খাল,বিল,বাওড়,ঝিল,দিঘি,সহ বিভিন্ন ধরনের জলাশয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মাটি নদীর পলি দিয়ে গড়া এবং উর্বর,জল ধরে রাখার ক্ষমতাও বেশি। প্রায় বারো মাস জল থাকে। ছোট বড় নানা প্রজাতির মাছ, পোকামাকড়,জীবজন্তু, পশুপাখি, উপযুক্ত পরিবেশ ও সহজলভ্য খাদ্য পাওয়ার জন্য এখানকার জলাশয় প্রাচীন কাল থেকেই পরিযায়ী পাখিদের আকর্ষণ করে।
কিন্তু এখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বাজারঘাট, উৎসব অনুষ্ঠানে মানুষের কোলাহল বেড়েছে— বাড়ছে দূষণ, অনুকূল পরিবেশ না থাকায় পাখির সংখ্যাও কমছে। অধিকাংশ জলাশয় অযত্নে শেষ হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ ভাবে ভরাট হচ্ছে জলাশয় ও জলাভূমি। তার উপরে গড়ে উঠছে বহুতল ফ্লাট, শহর,বাজার ,রাস্তাঘাট। জলাশয় সংলগ্ন বনজঙ্গলের গাছ কাটা পড়ছে।
বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে পশুপাখি, জলজ প্রাণী। প্রায় অধিকাংশ জলাশয় কচুরিপানা,নানা ধরনের আগাছায় ঢেকে থাকছে, জলাশয়ের জল দূষণে আক্রান্ত। প্রকৃতিও খামখেয়ালী— এই শীত এই গরম। আবহাওয়া পরিবর্তন ও উষ্ণায়ন, মাঝে মাঝে বঙ্গোপসাগরে নিন্মচাপের ঘনঘটা শীতের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই আবহাওয়া পাখিদের কাছে উপযোগী নয়।
পরিযায়ীদের মুখভার
শীত আসতেই সুদূর সাইবেরিয়া, সহ বিভিন্ন দেশ থেকে পরিযায়ী পাখিরা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে। প্রতিবছর চেনা জলাশয় ও জঙ্গলে ওরা অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়। কিন্তু তারা যখন দেখে আবহাওয়া তাদের পক্ষে অনুকূল নয়, শীতের আমেজ সে ভাবে প্রবেশ করেনি, জলাশয়গুলি আগাছায় ভরা, যে জঙ্গল বা গাছ গুলিতে তারা বসতো, সেগুলিও আর নেই , তখন তাদের মুখভার হয়ে যায়।
এটা আমার পছন্দের একটা বিষয়। ভালো লাগলো।