সবে সাড়ে আটাশ হাজার হয়েছে। এখনও ঢের বাকি। তবে এই বছরটাতে একটা বড়সড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে প্রসিদ্ধি সিং (Prasiddhi Singha) ও তার বাহিনী। তারা ঠিক করেছে, ২০২২ সালের মধ্যেই নিজেদের এলাকায় এক লক্ষ গাছ লাগিয়ে ফেলবে তারা। নয় বছর বয়সি পরিবেশ যোদ্ধা প্রসিদ্ধি সিং তাই লড়াইয়ে নেমেছে লক্ষ্যপূরণের।
তামিলনাড়ুর চেঙ্গলপাট্টু জেলার মানুষেরা কিন্তু জানেন, প্রসিদ্ধির বাহিনী লক্ষ্যে পৌঁছবেই।
পরিবেশের প্রতি উৎসর্গীকৃত প্রসিদ্ধি তার অবদানের জন্য ২০২১ সালে ‘প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার’ পেয়েছে। নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়তে চেয়ে বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের পাশে নিয়েছে নয় বছরের বালিকা। বৃক্ষরোপন (Plantation)কে কার্যত আন্দোলনের রূপ দিয়ে ইতিমধ্যেই ২৮,৫০০ গাছ লাগিয়ে ফেলেছে প্রসিদ্ধি ও তাঁর সহযোদ্ধারা। তৈরি করেছে ২০টি ফলের বন। আজ ‘প্রসিদ্ধি ফরেস্ট ফাউন্ডেশন’ ডিজিটাল মাধ্যমে লাগাতার প্রচার করে চলেছে বৃক্ষরোপনকে মানুষের ভাবনায় পৌঁছে দিতে। চারাগাছ লাগানোর সমস্ত কাজকর্ম ওই সংস্থার মাধ্যমেই পরিচালিত হয়।
কিন্তু কী ভাবে এ সব সম্ভব হল? আসলে ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ভারধা তছনছ করে দিয়েছিল তামিলনাড়ুকে। তছনছ হয়ে গিয়েছিল প্রসিদ্ধিদের গ্রামটিও। সেই সময় প্রথমবার গাছ লাগায় প্রসিদ্ধি। লঙ্কা একটি ছোট চারা। তারপর থেকে লক্ষ্য ঠিক হয়ে যায়।
চেন্নাইয়ের মাহিন্দ্রা ওয়ার্ল্ড স্কুলের ছাত্রী প্রসিদ্ধিকে মুগ্ধ করে প্রকৃতি। সবুজের মধ্যেই টান অনুভব করে সে। ভালবাসে ফলের গাছে মৌমাছিদের দেখতে। প্রতিবছর তাই নিজের জন্মদিনকে সবুজ জন্মদিন হিসাবে পালন করে প্রসিদ্ধি। স্কুলে ফলের গাছ লাগায়। এ ভাবেই প্রসিদ্ধি সিং এখন ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ফলের বন নির্মাতা (ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস)। তবে শুরুতে কাজটা সহজ ছিল না। সে যখন একা একা গাছ লাগাতো, অনেক বন্ধুই হাসিঠাট্টা করতো। কিন্তু প্রসিদ্ধির লাগানো গাছগুলি যখন বড় হল, তাতে ফল এল— বন্ধুরা সেই সব গাছ থেকে ফল এবং সবজি খেতে শুরু করল। সে সময়ে তারাও প্রসিদ্ধির পাশে এসে দাঁড়াল। পথ চলা শুরু হল ‘প্রসিদ্ধি ফরেস্ট ফাউন্ডেশন(Prasiddhi Forest Foundation) ’-এর। প্রসিদ্ধি এখন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগায় , কাগজের পেন্সিল তৈরি করে। আরও গাছ লাগানোর জন্য তহবিল জোগাড় করে।
শিশুদের জন্য প্রসিদ্ধি একটি অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করে। সেখানে যোগব্যায়াম শেখায় আর কী কারণে গাছ লাগানো দরকার— সে কথা বুঝিয়ে বলে গল্পের মতো করে। অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যে টাকা আসে, তা দিয়েও তৈরি হয়েছে তহবিল। এক লক্ষ গাছ লাগানো তো মুখের কথা নয়। টাকা চাই। তাই তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ। প্রতি শনিবার প্রসিদ্ধি ছুটে যায় বিভিন্ন এলাকায় গাছ লাগানোর জন্য। তার স্বপ্ন, এমন অনেক ফলের বন তৈরি করবে— মানুষ যেখান রাসায়নিক মুক্ত ফল খেতে পারবে।
উন্নত ভারতের জন্য জল সংরক্ষণ, গাছ লাগানো ও জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্য নিয়ে স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে এখন মাঠেঘাটে পৌঁছে যাচ্ছে প্রসিদ্ধি। আশা করছে, তাদের ভাবনা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে।