শ্রমজীবীর তকমা চাই— এই দাবি নিয়ে মে দিবসের প্রাক্কালে কলকাতার রাস্তায় আন্দোলনে নামছেন মহানগরের যৌনকর্মীরা। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বড় যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি। সেই মিছিল থেকে যৌনকর্মীরা দাবি তুলবেন, সরকারি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা দিতে হবে তাঁদের। আর তা দিতে হবে ‘দুয়ারে সরকার’ মডেলে, রেড লাইট এলাকায় এসে। দুর্বারের পক্ষে মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কলকাতা ও আশপাশের জেলাগুলির যৌনকর্মীরা এতে অংশগ্রহণ করবেন।
দুর্বারের সভানেত্রী বিশাখা লস্কর জানিয়েছেন, আগামী ৩০শে এপ্রিল বিকেল পাঁচটায়, শ্রমিকের অধিকার পাওয়ার দাবি নিয়ে কলকাতায় মশাল মিছিল করবেন যৌনকর্মীরা। মিছিল শুরু হবে সোনাগাছির অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট থেকে। শেষ হবে কোম্পানি বাগানের মাঠে। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি যে দাবিগুলি নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, সেই বিষয়গুলি হল,
১। রেশনকার্ডের সাফল্য এসেছে ঠিকই। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা থেকে আজও যৌনকর্মী ও তার সন্তানেরা বঞ্চিত। যৌনকর্মীদের সামগ্রিক উন্নয়নে বোর্ড গঠন করতে হবে।
২। ৪৫ বছরের বেশি বয়সি যৌনকর্মী ও ট্রান্সজেন্ডারদের পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। যৌনকর্মীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে ও রাজ্য আইন প্রণয়নে যৌনকর্মীদের পরামর্শ নিতে হবে।
৪। ট্রাফিকিং ইন পারসন ( প্রিভেনশন ,কেয়ার এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন ) বিল ২০২১ প্রত্যাহার করতে হবে। বর্তমানে আইটিপি আইনের যে সব ধারার মাধ্যমে যৌন পেশাকে অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে।
৫। সেলফ রেগুলেটরি বোর্ডের স্বীকৃতি চাই।
৬। যৌনপেশাকে শ্রম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পেশার সামাজিক ও আইনি স্বীকৃতি প্রয়োজন।
৮। যৌন কর্মীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার। সেই নির্যাতন বন্ধ হোক।
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির দাবি, ভারতের এক কোটিরও বেশি মানুষ যৌন পেশার আয়ে দিন গুজরান করেন। প্রতিটি রাজ্যের শ্রম দফতরের তালিকায় যৌনকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছে দুর্বার। তবে ভারতে যৌনপেশা বৈধ হলেও আনুসাঙ্গিক বেশ কিছু কাজ অবৈধ বলে ধরা হয়। THE IMMORAL TRAFFIC PREVENTION ACT (1956) অনুযায়ী যৌন ব্যবসাকে অপরাধ থেকে মুক্ত করা হয়নি। যৌন পেশার বিজ্ঞাপন, পতিতালয়ে যৌনপেশা চালানোকে অপরাধ হিসেবেই ধরা হয়। দুর্বার চাইছে, যৌন পেশা চালানোর যাবতীয় জটিলতা কাটানো হোক।
পতিতাবৃত্তি বা যৌনব্যবসার স্বীকৃতি, তার নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধীকরণের বিষয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের মতামত উঠে এসেছে। বালিহাঁস-এ খুব তাড়াতাড়ি এই বিষয় নিয়ে একাধিক লেখা প্রকাশিত হতে চলেছে।