শাড়ি নাকি এই দেড়শো বছর আগেও একটি একক পোশাক হিসেবে বাংলাদেশে মহিলারা ব্যবহার করতেন। পেটিকোট আর ব্লাউজ ছাড়াই। এর ফলে তাঁদের বাইরে যাওয়া আসা করা মোটেও সহজ ব্যাপার ছিল না। তিনি বিলেতে পেটিকোট আর ব্লাউজ জাতীয় পোশাক পরতে দেখেছিলেন। ফিরে এসে স্টাইলটি ব্যবহার শুরু করেন। সেখান থেকেই নাকি …
ঘোড়ায় চড়ে ময়দান ভ্রমণ, ব্লাউজ পেটিকোটের সঙ্গে শাড়ি পরা থেকে বার্থডে পালন… ঠাকুরবাড়িতে আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে এই মহিলার কৃতিত্ব কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর কথা বলছিলাম।
ইংল্যান্ড থেকে ফিরে, প্রথম ঠাকুরবাড়িতে জন্মদিনের উৎসবের আয়োজন করলেন তিনি, ১৮৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৯ তারিখে। তেরো বছর বয়সি মেয়ে ইন্দিরার। রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন। এই উপলক্ষে ‘জন্মতিথির উপহার’ নামে একটি কবিতা লিখে উপহারও দিয়েছেন আদরের “বিবি” কে।
বোধকরি এই জন্মদিনের অনুষ্ঠান দেখেই রবীন্দ্রনাথের খুব ভাল লেগে যায়।
ছ’মাস পর, ১৮৮৬ সালের ৭ মে অর্থাৎ পঁচিশে বৈশাখে লিখছেন বন্ধু শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে, ‘আজ আমার জন্মদিন— পঁচিশে বৈশাখ— পঁচিশ বৎসর পূর্ব্বে এই পঁচিশে বৈশাখে আমি ধরণীকে বাধিত করতে অবতীর্ণ হয়েছিলুম— জীবনে এমন আরও অনেকগুলো পঁচিশে বৈশাখ আসে এই আশীর্ব্বাদ করুন…।’
তার পর রবীন্দ্রনাথ ২৭ বছরে পা দিয়েছেন। ৪৯ নং পার্ক স্ট্রিটে মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ, মেজবৈঠান জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সঙ্গে থাকছেন।
১৮৮৭ সালের মে মাসের সাত তারিখ। দিনটি শনিবার। কবির ন’দিদি স্বর্ণকুমারী দেবীর মেয়ে সরলা দেবী খুব ভোরে চলে এলেন পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে। তারপর কী হল, লিখছেন সরলা দেবী—
“রবিমামার প্রথম জন্মদিন উৎসব আমি করাই। …. অতি ভোরে উল্টাডিঙির কাশিয়াবাগান বাড়ি থেকে পার্ক স্ট্রীটে নিঃশব্দে তাঁর ঘরে তাঁর বিছানার কাছে গিয়ে বাড়ির বকুল ফুলের নিজের হাতে গাঁথা মালা ও বাজার থেকে আনানো বেলফুলের মালার সঙ্গে অন্যান্য ফুল ও একজোড়া ধুতি-চাদর তাঁর পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করে তাঁকে জাগিয়ে দিলুম। তখন আর সবাই জেগে উঠলো— পাশেই নতুন মামার ঘর। “রবির জন্মদিন”,বলে সাড়া পড়ে গেলো। সেই বছর থেকে পরিজনদের মধ্যে তাঁর জন্মদিনের উৎসব আরম্ভ হলো। ” সঙ্গে উপহার হিসেবে, এই সব কিছুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন একটি ইংরেজি কবিতার বই— The Poems of Heine. রবীন্দ্রনাথের জীবনে, জন্মদিন হিসেবে এই জিনিসগুলিই প্রথম উপহার।
আর এভাবেই শুরু হয়ে গেল এশিয়ায় সাহিত্যে প্রথম নোবেল পাওয়া ভদ্রলোকের জন্মদিন নিয়ে উৎসব পালন করার চল। প্রথম বেশ কিছু বছর অবশ্য তা সীমাবদ্ধ ছিল ঘনিষ্ঠ পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবের মধ্যে। তারপর তো ছড়িয়ে পড়ল বাইরেও। ১৮৮৬ সালে, যিনি বন্ধু শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে চিঠি লিখে, জীবনে আরও পঁচিশে বৈশাখ আসুক বলে কামনা করতে বলেছেন, তিনি কি ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিলেন, জন্মের ১৬১ বৎসর পরেও পঁচিশে বৈশাখে সমানই প্রাসঙ্গিক থাকবেন তিনি।
ইংরেজি বছরের হিসেবে, পঁচিশে বৈশাখ দিনটি বড্ড ঘুরে ফিরে আসে। মে মাসে কখনও সাত, কখনও আট কিংবা নয় তারিখ। এবার, পঁচিশে বৈশাখ পড়েছে সোমবার, ইংরেজি মে মাসের নয় তারিখে। এবারও উদযাপিত হচ্ছে তাঁর জন্মদিন, বিভিন্ন প্রান্তে, নানা ভাবে, অনেক মানুষের মধ্যে। তবে যে পরিবারে ঠাকুরপুজো করার নিয়ম ছিল না, জন্মতিথি পালন করার চল ছিল না, সেই ঠাকুরবাড়িতে “হ্যাপি বার্থ ডে” পালন করার চল নিয়ে আসা— এই দিনে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর কথাও মনে করা যেতেই পারে।
কৃতজ্ঞতা— আন্তর্জালে পাওয়া তথ্য/ জীবনের ঝরাপাতা— সরলাদেবী।
বিশ্বকবির প্রথম জন্মদিন পালনের তথ্য সমৃদ্ধ নিবন্ধটি সমৃদ্ধ করেছে বালিহাঁস এর পাতাকে। বালিহাঁস এর এই ব্যতিক্রমী জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক বিশ্বময়।
সেখ আব্দুল মান্নান
মুকুন্দপুর, কলকাতা-৯৯
ধন্যবাদ আপনাকে
[…] মুদ্রা,ডাকটিকিটেও রবীন্দ্রনাথ বকুল আর বেলফুলের মালা, প্রথম জন্মদিন প… Share WhatsApp Facebook Telegram Twitter Google+ Pinterest Linkedin […]