ভারতে কোভিডের ধাক্কায় কাজ হারিয়ে শ্রমশক্তির বাইরে প্রায় ৯০ শতাংশ মহিলা!
ভারতের অর্থনীতির জন্য এমনই একটি বিপজ্জনক খবর সামনে এসেছে। দ্য পে চেক পডকাস্টের এই সপ্তাহের পর্বটিতে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ ভারতে মহিলাদের কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করা হয়েছে । বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে কর্মজীবী মহিলার সংখ্যা ২৬ শতাংশ থেকে নেমে ১৯ শতাংশে পৌঁছেছিল। তারপর কোভিড সংক্রমণ ও লকডাউনে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। মুম্বইয়ের অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেছেন, ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে মহিলাদের কর্মসংস্থান ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ভারতে বর্তমানে পুরুষ ও নারীর অনুপাত ৫২:৪৮। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪৮ জন মহিলা। অথচ ভারতের জিডিপিতে নারীর অবদান মাত্র ১৭ শতাংশ। চীনে সেই অনুপাতই ৪০ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশকে সোনালী যুগে (Amrit Kaal) নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তব হল, গ্রামীণ এলাকা, যেখানে ভারতের ১৩০ কোটি লোকের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি বাস করেন, সেখানে মহিলাদের কর্মসংস্থান ক্রমহ্রাসমান। শহরেও কর্মসংস্থানের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে মহিলাদের।
একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে। ২০১৯ সালের আগে, সাঁচুরি ভুনিয়া ওড়িশার একটি গ্রাম থেকে বেঙ্গালুরু আসেন কাজের সন্ধানে। কাজ পেয়েও যান কাপড়ের একটি কারখানায়। মাসে ৯০০০ টাকার চুক্তিতে। ঠিকঠাক চলছিল সবকিছু। কিন্তু কোভিডের ধাক্কায় ওই মহিলার আর্থিক স্বাধীনতা হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায়। ২০২০ সালে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১০ কোটিরও বেশি ভারতীয় কাজ হারান। সেই চাকরিহারাদের মধ্যে সাঁচুরি ভুনিয়াও ছিলেন। সেই সময় তাঁকে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছিল। আজও তিনি কৰ্মহীনা।
তবে আজকের পৃথিবী কোভিড মহামারী থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসছে। দুনিয়া জুড়ে চেষ্টা চলছে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার। তবে এই সময়েও অর্থনীতিবিদেরা দেখছেন অন্য একটি চিত্র। মহিলারা তাঁদের চাকরি পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এমনিতেই ভারতের মতো দেশে শ্রমশক্তিতে মহিলাদের যোগদান পুরুষের তুলনায় ভীষণ ভাবে কম। এই বিষয়ে যুদ্ধবিধস্ত ইয়েমেন ও ভারত আজ এক তালিকায়। বলা হচ্ছে, ভারতে আজ মহিলা কর্মশক্তির প্রায় বিনাশ ঘটেছে। এ এক অন্ধকারাছন্ন অবস্থা। মহিলারা শ্রমশক্তিতে যোগদান না করতে পারায় অদূর ভবিষ্যতে জিডিপিতে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে ভারত, যা দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে বিরাট ধাক্কা দিতে পারে।
২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী “বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও” নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন। যার লক্ষ্য ছিল, মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলা ও যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করা, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং মেয়েদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা। এই উদ্দেশ্যে গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার মহিলাদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে, পুরুষদের মতোই ২১ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু অর্থনীতির তথ্য বলছে, মেয়েরা ভারতে পুরুষদের উপর আরও বেশি পরিমাণে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। যে উদ্যোগ সরকারের থেকে নেওয়া হয়েছে বা তার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকছে। এই প্রবণতা শুধু গ্রামে নয়, শহরেও রয়েছে|