আপনি কি বয়স কমাতে চান? ভাবছেন, মনে মনে ইচ্ছে আছে ঠিকই। কিন্তু সেটা কী ভাবে সম্ভব? এই তো তিন মাস হল পঞ্চাশের বার্থডে। ধুমধাম করে সেলিব্রেট করলাম। বউ, মেয়েকে নিয়ে পেটপুরে খেলাম রেস্তরাঁয়। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে কত বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের শুভেচ্ছার বন্যা। পঞ্চাশে নাকি জীবনের শুরু! ক’দিন কাটতে না কাটতেই আবার সেই পঞ্চাশেরই বার্থডে! অসম্ভব!
জানি, আপনার মনের গভীরে তবু একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে— আচ্ছা, যদি এমনটাই হতো!
আপনাকে জানিয়ে রাখি, স্বপ্নের জাল যতই বুনুন না কেন, আপনার পক্ষে বয়সের অঙ্ককে কমিয়ে আনা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। বরং ভাবতে হবে…শরীরে না হোক। আমার মনের বয়স সেই আঠারো।
তবে আপনার পক্ষে বয়স কমানো অসম্ভব ঠিকই। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষদের জন্য ব্যাপারটা এবার সম্ভব হতে চলেছে। না, কোনও গল্প নয়। এমন ঘটনাই ঘটতে চলেছে কিম জং উনের প্রতিবেশী দেশটির মানুষের জীবনে।
ব্যাপারটা খুলে বলা যাক।
আসলে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বয়স গণনার ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর। কারণ, সে দেশে শিশুরা যখন জন্মগ্রহণ করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের এক বছর বয়সি বিবেচনা করা হয়। তারপর কোরিয়ান নববর্ষের দিনে সেই শিশুর বয়সের সঙ্গে আর একটি বছর যোগ করা হয়। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বোঝা যেতে পারে। ধরুন, কোনও শিশু জন্ম নিল ডিসেম্বরের ২০ তারিখে। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তার বয়স ধরা হবে এক বছর। আর কোরিয়ান নববর্ষের দিন, মানে ঠিক ১০ দিন পর শিশুটির বয়স বেড়ে হবে দুই!
দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহ্যাপ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, সে দেশের ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত’ ইউন সুক-ইওল যদি ‘কোরিয়ান এজ’-এর ধারণা বাতিল করতে সফল হন, তাহলে গোটা দেশের মানুষের বয়স এক বছর করে কমে যাবে! তবে পুরো ব্যাপারটি হবে কাগজে। দিন কয়েক আগে একটি সাংবাদিক বৈঠকে ইউন সুক-ইওল-এর গঠন করা রাজনৈতিক, বিচার বিভাগীয় এবং প্রশাসনিক সাব কমিটির প্রধান লি ইয়ং-হো,বলেছেন, তাঁরা দক্ষিণ কোরিয়ায় বয়স গণনা করার জটিল পদ্ধতিকে পরিবর্তন করতে চান। বাস্তব পরিস্থিতির কারণেই এটা করার কথা ভাবে হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স গণনার পদ্ধতির কারণে দক্ষিণ কোরিয়াকে সামাজিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অযথা লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক কর্মসুচি ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।’’
‘কোরিয়ান এজ’ নিয়মে যেমন মাতৃগর্ভে থাকার সময়কেও জোড়া হয়, পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক মানুষ বয়সের হিসাব করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত বার্থডের অঙ্কও মেলান। কেউ কেউ আবার জন্মের সময়ে শিশুর বয়স শূন্য ধরে নিয়ে নতুন বছরে এসে এক বছর যোগ করেন।
বয়স নির্ধারণে তিন ধরনের নিয়মে নাজেহাল দক্ষিণ কোরিয়া এবার মুক্তি পেতে চাইছে। ফলে প্রায় গোটা একটা জাতির সামনে সুযোগ এসেছে, নিজেদের বয়স একবছর কমিয়ে নেওয়ার।