“জি এস টি” তখন আসবে আসবে করছে। খুব আলোচনা হচ্ছে রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে। কিছু রাজ্য একটি আশঙ্কার কথা জানালো। যদি জিএসটি আসার ফলে, রাজ্যের রাজস্ব সংগ্রহ কমে যায়, তাহলে কি হবে? কেন্দ্রের তাড়া আছে। দরাজ সুরে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো, যদি কমে তাহলে কেন্দ্র , সেটাকে ভর্তুকি হিসেবে দেবে।

মোদ্দা ব্যাপার আলোচনার শেষে দাঁড়ালো, প্রতিটি রাজ্যের ১৬-১৭ তে যে রাজস্ব আদায় হয়েছিল, তার উপর, আরও ১৪ শতাংশ হারে ধরা হবে রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমাণ। যদি কোন কারণে কম হয়, তাহলে কেন্দ্র সেই টাকাটা পুরিয়ে দেবে।

অঙ্কের হিসেবে বোঝাতে চাইলে, যদি কোন রাজ্যের ১৬-১৭ আর্থিক বছরে রাজস্ব সংগ্রহ ছিল সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকা, তাহলে ১৭-১৮ আর্থিক বছরে ধরা হবে , সেটির অঙ্ক দাঁড়ানোর কথা আছে১১৪ কোটি টাকা। এবার আদায়কৃত রাজস্ব যদি ১০৫ কোটি টাকা হয়, তাহলে বাকি ৯ কোটি টাকা কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ করে দেবে। ইংরেজিতে বললে, কম্পেনসেট করে দেবে।

তা কেন্দ্র টাকাটা দেবে কোথা থেকে?

কিছু কিছু জিনিস আছে যার উপর ট্যাক্স বসলে , লোকেও খুব আনন্দ পায়।
যেমন, তামাক জাতীয় পদার্থ, পান মশলা, কোল্ড ড্রিংকস, কিছু দামি ধরণের মোটরগাড়ি ইত্যাদি। জিএসটির সবচেয়ে উঁচু শুল্ক হার হচ্ছে ২৮ শতাংশ। এই ধরনের পণ্যে এই উঁচু হারেই ট্যাক্স নেওয়া হয়। এই সব পণ্যেই বসানো হল কম্পেনসেসন ট্যাক্স।

এছাড়াও বিদেশ থেকে আমদানি করা কিছু জিনিসের উপর এই সেস লাঘু করা হয়েছে।

এই খাতে আসা টাকা পুরোটাই কেন্দ্রের তহবিলে যায়। সেখান থেকেই রাজ্য গুলোকে কম্পেনসেসন হিসেবে রাজস্ব দেওয়ার কথা।

দেখা যাক কেন্দ্রের অবস্থা কি দাঁড়ালো জুলাই ২০১৭ সালের পর থেকে।

২০১৭-১৮ সালে ৪৯০০০ কোটি টাকা কম্পেনসেসন সেস হিসেবে রাজ্য গুলিকে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮-১৯ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ালো ৮৩০০০ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ আর্থিক বছরে কেন্দ্রকে কম্পেনসেসন সেস হিসেবে দিতে হয়েছিল ১৬৫৩০২ কোটি টাকা। সেই বছর এই খাতে রোজগার হয়েছিল ৯৫৪৪৪ কোটি টাকা। এই টাকা দিতে, কেন্দ্রকে Consolidated Fund of India থেকে ৩৩৪১২ কোটি টাকা আনতে হয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সে বছর অরুণাচল প্রদেশ কোন টাকা কম্পেনসেসন সেস হিসেবে পায়নি। পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছিল ৬২০০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি পেয়েছিল মহারাষ্ট্র, ১৯২৩৩ কোটি টাকা। অসম পেয়েছিল ১২৮৪ কোটি টাকা।

এই বছর, ২০২২ সালের মে মাসে, কেন্দ্র রাজ্যদের বকেয়া জি এস টি কম্পেনসেসন সেস হিসেবে প্রাপ্য ৮৬৯১২ কোটি টাকা, পুরো মিটিয়ে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নিয়েছে, যখন এই খাতে তাদের হাতে জমা ছিল মাত্র ২৫০০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা কেন্দ্র, নিজের অন্য তহবিল থেকে জোগাড় করেছে। এই খাতে পশ্চিমবঙ্গ পেলো ৬৫৯১ কোটি টাকা। মহারাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি, ১৪১৪৫ কোটি টাকা। অসম পেয়েছে ২৩২ কোটি টাকা।

পুরো প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেয়ার জন্য কেন্দ্র ১.১ লাখ কোটি টাকা ২০২০-২১ সালে, এবং ১.৫৯ লাখ কোটি টাকা ২০২১-২২ সালে পিঠোপিঠি দুই বছরে ধার হিসেবে নিয়ে রাজ্য গুলিকে রিলিজ করেছে। জিএসটি কম্পেনসেসন সেস ঠিকমতো আদায় হচ্ছিল না বলে, রাজ্য সরকার গুলির সঙ্গে কথা বলে এই ব্যবস্থা নিয়েছিল।

আর মাত্র কিছুদিন। জুন ২০২২ এর টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পর, আর কেন্দ্রের কোন দায়বদ্ধতা থাকবে না।

আসলে কেন্দ্র এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে ছিল না কখনোই। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ইজ প্রতিশ্রুতি। তারমধ্যে আইন করে প্রমিজ করা।

তবে, জিএসটি, আইন আনার সময়ই আইন করে এটা লিখে রাখা ছিল যে এই সেস থাকবে পুরো পাঁচবছর। ১ জুলাই ২০১৭ থেকে ৩০ জুন ২০২২ সাল অবধি।

ডিসেম্বর ২০২১ থেকেই রাজ্যগুলি দাবি তুলছিল, এই সেস আরও পাঁচবছর থাকুক। দরকারে সংবিধান সংশোধন করা হোক। আসলে যথেষ্ট কারণ আছে তাদের পক্ষে এই দাবি রাখার জন্যে। নির্বিঘ্নে অন্তত ১৪ শতাংশ বার্ষিক রাজস্ব প্রতিবছর বেড়ে যাচ্ছে। বন্দুক কেন্দ্রের ঘাড়ে।

ওদিকে কেন্দ্র কিছুতেই রাজি নয়।
যদি রাজি না হয়, তাহলে রাজ্যগুলোকে নিশ্চিন্ত ভাবেই রাজস্ব বাড়াবার জন্যে নতুন কিছু উপায় ভাবতে হবে। যেগুলো জিনিসে রাজ্যের অধিকার আছে, সেগুলোতে ট্যাক্স বাড়ানো। জি এস টি কাউন্সিলে দাবি করা, শুল্কের হার বাড়ানোর জন্যে । এখন ৫, ১২, ১৮ এবং ২৮ এই চারটি মুখ্য শুল্ক হার। পাঁচ শতাংশ হারকে বাড়িয়ে ৮ অথবা ১২তে নিয়ে আসা। কিংবা, তিনটি হার রেখে, শুল্কের হার ৮, ১৮ এবং ২৮ শতাংশে আনা। যেসব জিনিসে কম্পেনসেসন ট্যাক্স নেওয়া হয়, সেগুলোর উপর অন্য কিছু সেস বসিয়ে , সেটার ভাগ রাজ্যকে দেওয়া।

কম্পেনসেসন সেস , এই ব্যাপারটা নিয়ে জুন মাসে জি এস টি কাউন্সিলের মিটিং বেশ অনেকক্ষণ হওয়ার কথা, আলোচনা হওয়ার কথা, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন।

কম্পেনসেসন সেসের ভাগ যদি পাওয়া না যায়, তাহলে,
জুন মাস শেষ হওয়ার পর, রাজ্যগুলোকে একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। কেন্দ্র হয়তো ওই ১৪ শতাংশ বৃদ্ধির ব্যাপারটা মানতে চাইবে না। তাহলে, রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য রাজ্যগুলোকে কিছু না কিছু করতেই হবে। শুল্কের হার বৃদ্ধি এবং কর্মচারীদের উপর চাপ সৃষ্টি যাতে ট্যাক্স ফাঁকির ব্যাপারটা একটু কমানো যায়, এই দুটোই , রাজ্যদের জন্যে সম্ভাব্য উপায় দেখা যাচ্ছে ।

সেপ্টেম্বর ২০২১ সালের জি এস টি কাউন্সিল মিটিংয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এই কম্পেনসেসন সেস মিটিয়ে দেওয়ার জন্য ধার নেওয়ার ব্যাপারটা উঠেছিল আলোচনায়। তখন একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল, জুন ২০২২ সালের পরও সেস ওঠানো হবে। এই ধারটা শোধ করার জন্যে। টাকা তো কম নয়। তার মধ্যে শুধু সুদ হিসেবে দিতে হয়েছে ২০২১ -২২ সালে ৭৫০০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালে দেওয়ার কথা প্রায় ১৪০০০ কোটি টাকা।

২৪ জুন ২০২২ তারিখে কেন্দ্রীয় রাজস্ব বিভাগ, একটি বিভাগীয় সূচনা জারি করেছে। ( Notification No 1/ 2022- Compensation Cess) .
এই নোটিফিকেশনের বলে, কেন্দ্র নতুন করে, ১ জুলাই ২০২২ সাল থেকে, ৩১ মার্চ ২০২৬ অবধি , কম্পেনসেসন সেস আদায় করার দিন বাড়িয়ে দিয়েছে।

কিন্তু সেই আদায় কৃত ধনের ভাগ বাটোয়ারা কী ভাবে হবে, সেটা পরিষ্কার নয়।

৪৭ তম জি এস টি কাউন্সিল মিটিং এবার চণ্ডীগড়ে। এই মাসের ২৮ -২৯ তারিখে।

কম্পেনসেসন সেস নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটাই কিন্তু মুখ্য আকর্ষণ হতে চলেছে এই মিটিংয়ের।