কথায় বলে, কোনও কিছু ধ্বংস করতে এক মিনিট, গড়তে অনেক বছর। তবে প্রকৃতিতে ধ্বংস আর সৃষ্টির চক্রের স্বাভাবিক ছন্দকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যাচ্ছে প্লাস্টিক। আধুনিক পৃথিবীতে বর্জ্য পদার্থকে যথাযথ এবং পরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার করা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর সেই কাজে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিক। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে পৃথিবীর জলে স্থলে। আর আজ পর্যন্ত জমা হওয়া এই প্লাস্টিকের মাত্র ১০ শতাংশেরই পুনর্ব্যবহার (Recycling) করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দুনিয়াকে এখন সবচেয়ে কঠিন যে ক’টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে, সেই তালিকার প্রথম সারিতে উঠে এসেছে প্লাস্টিকের দূষণ।

তবে এরই মধ্যে নতুন আশার আলো। বিজ্ঞানীদের সর্বশেষ আবিষ্কার, এক ধরনের এনজাইম। যার মাধ্যমে চিরঅক্ষত, অমর প্লাস্টিক ধ্বংস হবে এক ঘণ্টার মধ্যেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় এই এনজাইম। যা দ্রুত এবং কম তাপমাত্রায় কাজ করে। টেক্সাস শহরের ইঞ্জিনিয়াররা এনজাইমটিকে এমন ভাবে তৈরি করেছেন যা প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। এটি ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট উষ্ণতার কমে কাজ করতে সক্ষম এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্লাস্টিক ভেঙে ফেলতে পারে। ফলে স্থলভাগে ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করা যেতে পারে। অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল এই এনজাইম তৈরি করেছেন যা প্লাস্টিককে দ্রুত পুনঃব্যবহার যোগ্য করে তুলতে পারবে।

PET-পলিইথিলিন টেরেফথালেট। পলিয়েস্টারের রাসায়নিক নাম। PET হল পরিষ্কার, শক্তিশালী এবং হালকা ওজনের প্লাস্টিক যা খাবার, পানীয়, বিশেষ করে কোল্ড ড্রিঙ্কস, জুস এবং জল প্যাকেজিং-এর কাজে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্যের ১২ শতাংশ জায়গা দখল করে রয়েছে এই পলিইথিলিন টেরেফথালেট। বিশেষ এনজাইম (পিইটি হাইড্রোলেস) রাসায়নিক ভাবে PET-কে ছোট ছোট অংশে ভেঙে ফলে  ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার একত্রিত করে ‘চক্রাকার প্রক্রিয়া’ সম্পন্ন করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই এনজাইম স্থলভূমিতে জমা হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যের মোকাবিলা করতে কার্যকর বিকল্প।

 ইউটি অস্টিনের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগের অধ্যাপক হ্যাল আলপার বলেছেন, এই এনজাইমের ব্যবহার প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি অফুরন্ত সুযোগের সৃষ্টি করবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলির সামনেও সম্ভাবনা তৈরি হবে। একে ঘিরে এক ধরনের অর্থনীতির কল্পনা করা যেতেই পারে।