“কিছু করুন”…ক্লান্ত বিধ্বস্ত লোকটি একজন প্রেসিডেন্ট। পৃথিবীর সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।  মনে হচ্ছিল, তিনি কোনও বক্তৃতা দিচ্ছেন না। তাঁর গলায় দেশবাসীর উদ্দেশে আবেদনের সুর। 

টেক্সাসের ছোট শহর উভালডে-র স্কুলে সাত থেকে দশ বছরের মধ্যে ১৯টি শিশু ও দু’জন শিক্ষিকাকে হত্যা। নির্বিচারে গুলি চলেছে। নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলির যুদ্ধে মারা পড়েছে বন্দুকবাজ, বছর আঠারোর সালভাদোর রেমোস। স্কুলে রক্ত ঝরানোর আগে নিজের ঠাকুমাকেও গুলি করে গুরুতর জখম করে এসেছে সে। গোটা পৃথিবী যখন টেক্সাসের এই হত্যালীলায় শিউরে উঠেছে তখন প্রশ্ন, আমেরিকায় বারবার কেন এত প্রাণ যাচ্ছে বন্দুকবাজের হামলায়? কোথায় অসুখ এই দেশটায়? এখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জীবনের থেকে একটি বন্দুকের মূল্য বেশি?

বাধ্য হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট শোকাহত দেশবাসীকে সম্বোধন করতে।

“আমি আশা করেছিলাম আমাকে এই ভাষণ দেবার কাজটি করতে হবে না। কিন্তু আবারও এমন ঘটনা ঘটলো!” বাইডেনের পাশ দীর্ঘদিনের শিক্ষক, ফার্স্ট লেডি জিল বাউডেন। প্রেসিডেন্ট বলছেন, “আরেকটি গণহত্যা। উভালডে, টেক্সাসে। একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়। সুন্দর, নিরপরাধ, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির সব পড়ুয়া। ছোট ছোট বাচ্চারা দেখছে, তাদের বন্ধুরা মারা যাচ্ছে। তারা যেন যুদ্ধক্ষেত্রে, সারা জীবন এই স্মৃতিকে বয়ে বেড়াতে হবে।”

মনে হচ্ছে, বাইডেন বুঝতে পেরেছেন তার দেশের বিপুল ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এমন একটি অসুখ রয়েছে যা দেশটাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাইডেন বলেন, ‘‘গুলি চালিয়ে এতজনকে মেরে ফেলার এই রকম মারাত্মক ঘটনা পৃথিবীর আর কোথাও খুব কমই ঘটে।’’ হতাশা ঝরে পড়ে প্রেসিডেন্টের গলায়। বলেন, “আমাদের দেশে  মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা রয়েছে। অন্য দেশে ঘরোয়া বিবাদ রয়েছে ঠিকই। তাদের রিফিউজি সমস্যা আছে, কিন্তু আমেরিকাতে যে ধরনের গণহত্যা ,অন্যত্র তা কখনওই ঘটে না।’’

নিরপরাধ শিশু, বৃদ্ধ।  কেন এত ঘন ঘন হিংসা। চামড়ার রঙের কারণে, দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে, ধর্মের নামে বার বার। এত মৃত্যু কেন আমেরিকায় ?

হ্যাঁ, আমেরিকায় একটা অসুখ রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, টেক্সাসের গণহত্যা এবছরের মধ্যেই এই ধরনের নবম ঘটনা। ২০০৯ সাল থেকে আমেরিকাতে গণগুলির এমন ঘটনা ঘটেছে ২৭৪ বার।  এর ফলে ১৫৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৯৮৩ জন।

তা সত্ত্বেও বন্দুক লবির বাড়বাড়ন্ত কমেনি। আমেরিকার বন্দুক প্রস্তুতকারীরা ২০০০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ১৩৯ মিলিয়ন বন্দুক তৈরি করেছে। অন্যদেশ থেকে আনা হয়েছে ৭১ মিলিয়ন বন্দুক। এই সব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৯ এমএম পিস্তল থেকে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অ্যাসল্ট রাইফেল।

বাইডেন বলেন, ‘‘জাতি হিসেবে আমাদের জিজ্ঞাসা করতেই হবে, আর কতদিন এই বন্দুক লবি একটি ১৮ বছরের ছেলেকে বন্দুকের দোকানে গিয়ে অস্ত্র কিনতে দিতে পারে?” এরপরেই প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব, “যথেষ্ঠ হয়েছে! আজ আমেরিকায় বন্দুক আটকানোর আইন পাশ করা দরকার।  অসুখ আর বাড়তে দেওয়া যায় না।’’

দেখা যাক, বন্দুক লবিতে রাশ টানতে বাইডেন শেষপর্যন্ত কতটা সফল হন।