শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে বাঙালির আলোচনার অন্ত নেই। তাঁরা কী খান, কোথায় নাচেন, কোন পাহাড়ে ঘুরতে যান— তা একেবারে নখদর্পনে বাঙালির। ফলে এই দু’দিন আগে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় কী উপহার দিলেন, গোলপার্কের ফ্ল্যাটে জন্মদিনের পার্টিতে ঠিক কী হল, তা নিয়ে বাংলায় চর্চাও ছিল বিস্তর। ডিভোর্সের পর প্রথম জন্মদিন বলে কথা!

২৫ এপ্রিল নিজের জন্মদিনটা ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব এবং ঘনিষ্ঠতম শোভনের সঙ্গে কাটিয়েছেন বৈশাখী। জন্মদিনের কেক-এ ক’টা মোমবাতি ছিল, তা নিয়েও চর্চা চলছে। সে যা-ই হোক, নিজের জন্মদিনটা কে-কী ভাবে কাটাবেন, সেটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে এই বাংলাতেই অন্য ভাবে জন্মদিন পালন করেন বেশ কিছু মানুষ। যা আমাদের আলাদা ভাবে ভাবায়। এই কলকাতাতেই গতকাল হয়ে গেল এমনই একটি ব্যতিক্রমী জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান। কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের ডেপুটি সুপারিন্টেডেন্ট ডাঃ শর্মিলা মৌলিক নিজের জন্মদিন পালন করলেন একঝাঁক শিশুর মাঝখানে। আর এই শিশুদের সকলেই যৌনকর্মীদের সন্তান।

কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের ডেপুটি সুপারিন্টেডেন্ট ডাঃ শর্মিলা মৌলিক

মহানগরের ব্যস্ততম হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর ফাঁকেই জন্মদিনটা অন্য ভাবে পালন করার কথা ভেবেছেন শর্মিলা দেবী। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা। রোগী দেখা। সব সামলে জন্মদিন পালন  করতে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন নীলমনি মিত্র স্ট্রিটে, দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির দফতরে। আর সেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিল সোনাগাছি এলাকা থেকে আসা যৌনকর্মীদের সন্তান, প্রায় একশো জন শিশু। দুর্বারের অফিসঘরটি সাজানো হয়েছিল রঙিন বেলুন দিয়ে।  কচিকাঁচাদের সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকেরাও। ছিলেন দুর্বারের সভানেত্রী বিশাখা লস্কর, সম্পাদিকা কাজল বোস। দুর্বারের জনসংযোগ আধিকারিক মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হাসপাতালের ব্যস্ততার মধ্যেই এক ঘণ্টা সময় বের করে নিজের জন্মদিনটি যৌনকর্মীদের সন্তানদের মধ্যে কাটাতে চেয়েছিলেন শর্মিলা দেবী। সেই মতো গতকাল দুপুরে দুর্বারের দফতরে পৌঁছে যান তিনি। ডাক্তার ম্যাডামকে দেখতে পেয়ে ছুটে  আসে কচিকাঁচারা। সমস্বরে ‘হ্যাপি বার্থডে’ বলে স্বাগত জানায়। তারপর নাচে, গানে মুখরিত করে হয়ে ওঠে দুর্বারের সভাগৃহ। কেক কাটা হয়েছে, জন্মদিনে  যৌনকর্মীদের সন্তানদের বিরিয়ানিও খাইয়েছেন ডাক্তার ম্যাডাম।

দুর্বারের অফিসে কলকাতার ডাঃ শর্মিলা মৌলিক

জন্মদিন আসে। চলে যায়। কিন্তু সেটাকে অন্যরকম ভাবে কাটানোর কথা ভাবতে পেরেছেন শর্মিলা দেবী।  একটা সময় কেক কেটে মাইক হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। উপস্থিত সবাইকে জানিয়েছেন বিশেষ দিনটিতে তাঁর উপলব্ধির কথা।

পরে শর্মিলা দেবী বলেন, ‘‘ওখানে  যাবো ভেবে মনের ভিতরে অদ্ভূত রোমাঞ্চ হচ্ছিল। ভীষণ ইচ্ছে ছিল যাওয়ার। আজ আমার একটা স্বপ্ন সার্থক হল। এতগুলি  শিশু যখন একসঙ্গে বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে , কী আনন্দ হচ্ছিল, বলে বোঝাতে পারবো না।’’

2 COMMENTS

Comments are closed.