রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী পেট্রল-ডিজেলের দাম আকাশছোঁয়া। এর মধ্যেই গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো চিপসের সমস্যা। চিপস তৈরির অন্যতম উপাদান নিয়ন ও হেক্সাফ্লুরোবিউটাডাইন গ্যাসের প্রধান উৎপাদক রাশিয়া ও ইউক্রেন। যুদ্ধে জোগান বন্ধ হওয়ার ফলেই চিপস-এর সমস্যা তৈরি হয়েছে। মহাসঙ্কটে পড়েছে ভারত-সহ অন্য দেশগুলি।

মাইক্রোচিপস এখন আর উচ্চপ্রযুক্তির বিষয় নয়। এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। মোবাইল, চার্জার, টিভি, মাইক্রো ওভেন, ইন্ডাক্সন কুকার, এসি, কম্পিউটার তো বটেই— এমনকি, গাড়িও এখন চিপস ছাড়া ভাবাই যাবে না। এই মুহূর্তে ‘স্মার্ট’ শব্দটাও যেন  চিপসের সমার্থক হয়ে গিয়েছে। চিপস আসলে অতি ক্ষুদ্র আণবিক পরিসরে ট্রানজিস্টারের অজস্র গেট বর্তনী। যাদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে লক্ষ কোটিতে পৌচেছে, নামও ic থেকে vlsi or ulsi হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মূরের সূত্র বলে, প্রতি দুবছর অন্তর চিপসের ট্রানজিস্টার সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। আবার যুদ্ধের জেরে যে সঙ্কট, তাতে চিপস তৈরির উপাদানের যোগান কম হলে বেড়ে যেতে পারে মোবাইল, চার্জার, টিভি, মাইক্রো ওভেন, ইন্ডাক্সন কুকার, এসি, কম্পিউটারের দাম।

মাইক্রো চিপস তৈরি প্রক্রিয়াটি জটিল। বিশ্বব্যাপী কয়েকশো কোম্পানি এর জোগান শৃঙ্খলে যুক্ত। পিরামিডের মাথায় বসে তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা, চিন। ভারত এখানে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। মাথার এই কোম্পানিগুলিকে ফাউন্ড্রি বলে। যারা কেলাসিত সিলিকন ওয়েফার বা মৌচাক ফালির মধ্যে লক্ষ লক্ষ ট্রানজিস্টারের গেট বর্তনী প্রিন্ট করে। আর সেকাজ নিয়ন গ্যাসচালিত লেজার ছাড়া সম্ভব নয়। আরও একটা ধাতুর প্রয়োজন। দুষ্প্রাপ্য এই ধাতুটা হল প্যালেডিয়াম (Pd), বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ইউক্রেন থেকে। এই দুয়ের জোগান সঙ্কট আগেও একবার হয়েছিল যখন ক্রিমিয়া দখল করতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। ন্যাড়া বেলতলায় যায় ক’বার? এবার ফ্যাবস কোম্পানিগুলি মজুত করেছিল নিয়ন, প্যালাডিয়াম-সহ অতি প্রয়োজনীয় গ্যাস ধাতু। সুতরাং এখনও বড় কোনও সঙ্কট সৃষ্টি হয়নি। তবে এ মজুত র্সবোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত। যুদ্ধ প্রায় তিনমাস পেরতে চলল। ফলে কিছুদিনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ না হলে সঙ্কট গভীর হবে। চিপসের যোগান বন্ধ হলে  আপনাকেও আরও অনেক বেশি টাকা খরচ করে কিনতে হবে নতুন মোবাইল বা গাড়ি।