এখন গোটা বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৭৬৪ কোটি। ২০৬৪ সাল নাগাদ তা বেড়ে গিয়ে ৯৭৩ কোটিতে পৌঁছে যেতে পারে । সেটাই হবে চরম। কিন্তু, তারপর থেকে কমে কমে এই শতাব্দীর শেষে গিয়ে দাঁড়াবে ৮৭৯ কোটিতে। আর তখন জনসংখ্যার নিরিখে ভারত থাকবে এক নম্বরে, চিন তিন নম্বরে। ভারত কিংবা চিনের মতো দেশগুলির জনসংখ্যা কমে যাবে তখন। চিনের জনসংখ্যা হবে ৭৩ কোটি। আর ভারতে বসবাস করবেন ১০৯ কোটি মানুষ।

এমনই চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে আমেরিকার সিয়াটেল অবস্থিত আই এইচ এম ই ( Institute for Health Metrics and Evaluation)-এর একটি গবেষণা পত্রের উপর ভিত্তি করে লেখা নিবন্ধে। প্রায় ১৯৫ টি দেশের তথ্য নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা এমন পূর্বাভাস সামনে এনেছেন। তাঁদের মতে, একশো আশিটিরও বেশি দেশের জনসংখ্যা কমবে এই শতাব্দীর শেষে। এর মধ্যে তেইশটি দেশের জনসংখ্যা পঞ্চাশ শতাংশেরও নীচে নেমে আসবে। এর মধ্যে রয়েছে  চিন, থাইল্যান্ড, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া ও স্পেনের মতো দেশগুলি। প্রায় ১৪৪ কোটি মানুষ নিয়ে আপাতত পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ চিন। তবে ২০২৪ সাল নাগাদ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে স্থিতাবস্থা দেখা যাবে সেখানে। তারপর থেকে কমতে শুরু করবে এবং ২১০০ সাল নাগাদ চিনের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৭৩ থেকে ৭৪ কোটির মধ্যে।

এই গবেষণাপত্র জানিয়েছে, ২১০০ সাল নাগাদ ভারত হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি লোকসংখ্যার দেশ। তবে সেই সময়ে ভারতের জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে ১০৯ কোটিতে। গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, ২১০০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল প্রথম পাঁচটি দেশ হবে—  ভারত ( ১০৯ কোটি), নাইজিরিয়া (৭৯.১ কোটি),  চিন ( ৭৩.২ কোটি),  আমেরিকা ( ৩৩.৬ কোটি) ও পাকিস্তান (২৪.৮ কোটি)। ভারতে জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে ২০৪৮ সাল থেকে। তবে চিনের মতো খুব দ্রুত কমবে না।  ধীরে ধীরে কমবে।

ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রথম জনসংখ্যা  কমা শুরু হবে বাংলাদেশে (২০৩৯)। তারপরে  নেপাল (২০৪৩), ভুটান ( ২০৫১)  ও পাকিস্তান (২০৬২)।  আফ্রিকার বেশ কিছু অংশ, পশ্চিম এশিয়ার কিছু জায়গা ছাড়া পৃথিবীর বাকি সব দেশেই ২০১৭ সালের তুলনায় জনসংখ্যা কমে আসবে ২১০০ সাল নাগাদ।

গবেষকেরা বলছেন, এই সমস্ত বদলের পিছনে দু’টি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার। দ্বিতীয়ত, আগের থেকে নির্ভরযোগ্য জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি আবিষ্কার।

জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া কিংবা কমার বিষয়টি নির্ভর করে ফার্টিলিটি রেটের উপর। মোটামুটি ধরা হয়, ২.১ হচ্ছে নিউট্রাল ফার্টিলিটি রেট। (ফার্টিলিটি রেটের অর্থ, জীবনকালে একজন মহিলার সন্তান জন্মের হিসাব।) ১৯৫০ সাল নাগাদ, এই ফার্টিলিটি রেট ছিল ৪.৭, মানে, গড়  ধরলে প্রতি মহিলা জন্ম দিচ্ছিলেন প্রায় পাঁচজন শিশু।   ২০১৭ সালে সেটা এসে দাঁড়িয়েছে ২.৪.  গবেষকদের হিসাব মতো  ২১০০ সালে সেটা দাঁড়াবার কথা ১.৬৬ -এ। তার ফলে জনসংখ্যা কমে যাবে।

তবে সব কিছুরই দুটো দিক থাকে। পৃথিবীর লোকসংখ্যা কমারও দু’টো দিক আছে। প্রথম হচ্ছে, লোকসংখ্যা কমার মানে মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। এই শিক্ষিত মহিলারা কর্মক্ষেত্রে যোগদান করবেন, তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে এবং তার ফলে তাঁরা আর নিছক সন্তান উৎপাদনের অংশীদার হয়ে থাকতে চাইবেন না। এর ফলে জনসংখ্যা কমবে। উল্টোদিকে দেখা যাবে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে, বয়স্ক লোকেদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকবে।