(‘সব খেলার সেরা’ ফুটবলকে নিয়ে বাঙালির উৎসাহ, আবেগের শেষ নেই। আর সেই উত্তেজনার পারদ চড়বে এবছরেরই নভেম্বর মাসে। শুরু হবে কাতার বিশ্বকাপ-২০২২। তার আগে হাতে কিছুটা সময়। এই সময়ে জেনে নেওয়া যাক বিশ্বকাপকে ঘিরে অনেক অজানা, চমকে দেওয়ার মতো গল্প। ‘বিশ্বকাপের ইতিহাস’ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হবে প্রতি বুধ ও শনিবার।  লিখছেন অনিন্দ্য শর্মা।)

কাতার বিশ্বকাপ-২০২২ আর বেশি দূরে নয়। অন্য কোনও দেশ হলে এতদিনে হুজুগ চরমে পৌঁছে যেত। কারণ, অন্য দেশ হলে তো বিশ্বকাপ এতদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে!

সাধারণত জুন, জুলাই মাসেই বিশ্বকাপ হয়। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের উদ্বোধন হয়েছিল ১৩ই জুলাই। সেই ধারা বজায় রেখে বছরের এই সময়টাতেই বিশ্বকাপ করার প্রবণতা ছিল। কিন্তু কাতারের চরম আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই নভেম্বরকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

শুরু থেকেই বিতর্ক চলছে কাতার বিশ্বকাপকে নিয়ে। আমেরিকা তো নিজে সুযোগ না পেয়ে সরাসরি অভিযোগ করেছে— ফিফার কর্তারা ঘুষ নিয়ে কাতারকে বিশ্বকাপ করার সুযোগ দিয়েছে। দ্বিতীয় বিতর্ক, কাতারে অনেক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু। যা নিয়ে জলঘোলাও হয়েছে বিস্তর।

আসলে বিশ্বকাপের আয়োজন করতে গিয়ে কাতার আটটি স্টেডিয়াম ও একটি গোটা শহর বানিয়ে ফেলেছে। এ জন্য ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান থেকে প্রচুর শ্রমিক নিয়ে এসেছে তারা। অভিযোগ, শ্রমিককে দুপুরের প্রবল গরমে কাজ করানো হয়েছে ও তার ফলে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। ব্যাপারটা নিয়ে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়। ফ্রান্সের বিখ্যাত স্ট্রাইকার এরিক ক্যান্টোনা কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের কথাও বলেন। জার্মানি, ডেনমার্ক, চেক ফুটবলাররা বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছেন সরাসরি খেলার মাঠে প্রতিবাদ জানিয়ে।

যাই হোক, আপাতত ঝামেলা মিটেছে। ২১ নভেম্বর শুরু হবে এবারের খেলা। চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। জুন-জুলাইয়ে কাতারের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করে। নভেম্বরের শীতের আমেজে ফুটবলপ্রেমীরা বিশ্বকাপ উপভোগ করতে পারবেন। কারণ, শুধু খেলা দেখাই নয়, কাতার বিশ্বকাপের আয়োজনও এবার গোটা দুনিয়ার চোখ ধাঁধিয়ে দিতে চলেছে।

খরচের বহরের একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। আগের বিশ্বকাপগুলিতে খুব বেশি হলে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার। যেমন ২০১৮ সালে রাশিয়া খরচ করেছিল ১৪.২ বিলিয়ন ডলার। এবার কাতার বিশ্বকাপের বাজেট কত জানেন? ২২০ বিলিয়ন ডলার! ভাবা যায়!

সব মিলিয়ে কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে পারদ চড়তে শুরু করেছে। বিশ্ব ফুটবলের মহারণ দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই।

এই সময়ে ইতিহাসের পাতা থেকে আমরা জেনে নেবো ফুটবল বিশ্বকাপের বিচিত্র সব ঘটনার কথা।

অলিম্পিকের পর ফুটবল বিশ্বকাপই প্রথম কোনও ইভেন্ট যেখানে সমস্ত দেশকে নিয়ে খেলা হয়। ফুটবলের আগে অন্য কোনও খেলায় বিশ্বকাপের আয়োজন হয়নি। সালটা-১৯২০। -এন্টওয়ার্প (Antwerp) অলিম্পিক। বেলজিয়ামে। তখন ফিফা গঠিত হয়েছে (১৯০৪)। ফিফা দেখলো, অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড় অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। কারণ, অলিম্পিকের পবিত্রতা। পয়সা নিয়ে খেলাধুলা করা খেলোয়াড়দের প্রবেশ নেই অলিম্পিকে। ফুটবল তখন ভীষণ জনপ্রিয়। খেলোয়াড়দের পয়সাও দিচ্ছে ক্লাবগুলি। অথচ সেই ভাল খেলোয়াড়দের জায়গা নেই অলিম্পিকে।

রাস্তা খুঁজতে বৈঠকে বসলেন ফিফার কর্তারা। অনেক কথা কাটাকাটির পর, ১৯২৮ সালের ২৬ মে ফিফা পরিকল্পনা করলো পৃথক ভাবে ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু করার। সেখানে ডাকা হবে বিশ্বের সমস্ত ফুটবল-খেলিয়ে দেশগুলিকে। পেশাদার ও অপেশাদার সবাই খেলতে পারবে।

তবে ফুটবলের ইতিহাস বলে, এমন টুর্নামেন্ট আগেও হয়েছিল। ১৮৮৭ ও ১৯০২ সালে। ফুটবল ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ বা ইউনাইটেড কিংডম চ্যাম্পিয়নশিপ। নাম ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ হলেও সেখানে শুধু ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের ক্লাবগুলি  অংশগ্রহণ করেছিল। তারপর ১৯০৪ সালে সেই টুর্নামেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার একটি খেলার আয়োজন করা হয় ১৯০৯ ও ১৯১১ সালে।  স্যার টমাস লিপটন ট্রফি। ইতালির তুরিন শহরে। জার্মানি ,সুইজারল্যান্ড , ওয়েস্ট অকল্যান্ড ফুটবল ক্লাব অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতাগুলি সবটাই  ছিল দেশের ক্লাবগুলিকে নিয়ে। তবে ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সেই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে চায় নি।

ফিফার গভর্নিং বডি ঠিক করে, ১৯৩০ সালে শুরু করা হবে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। তখন ফিফার প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে (Jules Rimet)। ফ্রান্সের লোক। তাঁর নামেই হল ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফির নাম— জুলে রিমে ট্রফি। ১৯৭০ সালে তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের পর ব্রাজিল সেই ট্রফি চিরতরে তাদের দেশে নিয়ে যায়।

১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ শুরু করার কথা। কিন্তু দুনিয়ার কোন প্রান্তে হবে সেই খেলা? সেটাও ইতিহাস। বলছি পরের পর্বে।

(ক্রমশ)