৭৭৬ বিসি। সময়টা আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর আগের। কেউ কেউ বলেন, আরও ৫০০ বছর পিছিয়ে যেতে তো হবেই। তবে সেই দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি । তাই ৭৭৬ বিসি ধরে চলাই ভাল। প্রথম প্রাচীন অলিম্পিকের কথা বলছি। 

গ্রিসের অলিম্পিয়া পর্বতের পাশে (অলিম্পিক নামটিও ওই পর্বতের নামেই ) গরমকালে অনুষ্ঠিত হতো প্রাচীন অলিম্পিক।  পশ্চিম পেলোপনিস অঞ্চলে জায়গাটা ছিল একটা অভয়ারণ্য। সেখানে অলিভের সারি, আর ছিল জিউসের বিরাট মূর্তি। গ্রিসের ঐতিহ্যশালী দৌড় প্রতিযোগিতায় মেতে থাকতেন মানুষজন। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, কোরোইবস হলেন প্রথম প্রতিযোগী, যিনি প্রথম এই অলিম্পিকের পদক জিতেছিলেন। তখন অবশ্য পদক দেওয়া হতো না। দেওয়া হতো অলিভ পাতার মুকুট। কোনও কোনও ঐতিহাসিক আবার বলেন, অলিভ পাতার মুকুট দেওয়া শুরু হয়েছিল সপ্তম প্রাচীন অলিম্পিক থেকে। প্রথম থেকে ষষ্ঠ প্রাচীন অলিম্পিক পর্যন্ত নাকি জিউসের উদ্দেশে বলি দেওয়া ১০০টি  বলদের দেহ  থেকে কেটে  একটুকরো মাংস দেওয়া হয়েছিল বিজয়ী প্রতিযোগীদের। ফলে কোরাইবস পুরস্কার হিসেবে কী পেয়েছিলেন, মাংস নাকি পাতার মুকুট— সেই তথ্য অজানা। তবে পুরস্কার হিসেবে যা-ই পান,খ্যাতি যে পেয়েছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, গ্রিসের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেই দৌড় দেখতে এসেছিলেন প্রায় ৪৫০০০ মানুষ।

 প্রতিযোগীদের দৌড়তে হতো ৬০০ ফুট। এখানকার মাপ দিয়ে ব্যাপারটা অবশ্য বোঝা যাবে না। কারণ, তখন ফুটের মাপ ছিল অন্যরকম। দৌড়নোর সময়ে পা যতটা প্রসারিত করা যায়, ততটাই ছিল ফুটের মাপ। যাই হোক, ধরে নেওয়া হয়েছে  আজকের দিনে দৌড়ের মাপটা মোটামুটি ১৯২ মিটার। প্রথম প্রাচীন অলিম্পিকে কিন্তু শুধু এই দৌড়ই  হয়েছিল। ৭৭৬ বিসি থেকে ৩৯৪ এডি প্রর্যন্ত চলা এই প্রাচীন অলিম্পিকগুলিতে প্রতিযোগীরা ছিলেন পুরুষ। ১৮৯৬ সালে হওয়া প্রথম আধুনিক অলিম্পিকেও অবশ্য সব প্রতিযোগী পুরুষই ছিলেন। নারীর প্রবেশাধিকার ছিল না। 

এর একটা ব্যাখ্যাও রয়েছে। নারীদের দূরে রাখার কারণ হিসেবে অনেকে বলেন, প্রাচীন অলিম্পিকে সবাই উলঙ্গ হয়ে প্রতিযোগিতায়  যোগ দিতেন। কেন? অনেকের মতে, গ্রিকরা আসলে  দেবতা জিউসকে দেহসৌন্দর্য্য দেখাতে চাইতেন।  আবার কেউ কেউ বলেন, গ্রিক পুরুষেরা নিজেদেরকে শত্রুদের থেকে উন্নত প্রমাণ করতে পোশাক না পরেই প্রতিযোগিতায় নামতেন। 

প্রাচীন অলিম্পিকে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ থাকলেও ৬০০ বিসিতে তাঁদের জন্য একটি  খেলা আয়োজন শুরু হয়েছিল। নাম ছিল হেরান গেমস( Heraean Games)। জিউস পত্নী হেরার নামে শুরু হয়েছিল এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সেটিও একই জায়গাতেই অনুষ্ঠিত হতো। 

প্রাচীন অলিম্পিকে মহিলাদের অংশগ্রহণ না থাকলেও কিন্তু অলিম্পিক থেকে তাঁদের পুরস্কার পাবার রাস্তা খোলা ছিল। অবাক লাগছে, তাই না?  এই কাহিনীটিও খুবই চমকপ্রদ। আসলে দিন যত এগিয়েছে, অলিম্পিকে প্রতিযোগিতার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ঐতিহাসিকেরা বলেন,  ১৩তম  প্রাচীন অলিম্পিক থেকে ১৮টি নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। প্রতিযোগিতার দিনও বাড়িয়ে একদিন থেকে পাঁচদিন করা হয়। নতুন প্রতিযোগিতারগুলির মধ্যে ছিল কুস্তি, বক্সিং, পেন্টাথেলন ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ঘোড়ায় টানা রথের দৌড়। যাঁরা রথ চালাতেন, তাঁরা অবশ্য বিজয়ীর মর্যাদা পেতেন না। জয়ী ঘোষণা করা হতো রথশুদ্ধ ঘোড়াগুলির মালিকদের। এ ভাবেই স্পার্টার রাজা আর্কিদামোসের মেয়ে কিনিস্কা প্রাচীনকালে প্রথম মহিলা, যিনি অলিম্পিকে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর চারটি ঘোড়া ৩৯৬ বিসি ও ৩৯২ বিসির অলিম্পিকে ঘোড়দৌড়ে জিতেছিল।