কেরলের বাসিন্দা অ্যান্টনি জন নিজের বাড়িতে বসে একটি ইলেকট্রিক কার বানিয়ে ফেলেছেন। গাড়িটির বিশেষত্ব হল, একবার চার্জ করলে চলতে পারে ৬০ কিলোমিটার। একবার ব্যাটারি চার্জ করতে খরচ ৫ টাকা। অর্থাৎ, ৬০ কিলোমিটার রাস্তা সফরে অ্যান্টনিকে খরচ করতে হয় মাত্র ৫ টাকা।
প্রাকৃতিক তেলের দাম রোজই লাফিয়ে বাড়ছে। গোটা পৃথিবী চাইছে বিকল্প। ইলেকট্রিক কার, হাইড্রোজেন কার— এমন সব নতুন নতুন গাড়ির সম্ভাবনা সামনে উঠে আসছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা চেষ্টা করছে এই ধরনের গাড়িগুলি তৈরি করতে। কিছুদিন আগে ভারতের পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী একটি হাইড্রোজেন কার নিয়ে এসেছিলেন সংসদে। এবার আলোচনায় উঠে এল কেরলের ৬৭ বছর বয়সি কেরিয়ার কনসালটেন্ট অ্যান্টনি জনের তৈরি কম খরচের নতুন গাড়িটি।
অ্যান্টনির বাড়ি ও অফিসের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। গত ১৬ বছর ধরে স্কুটার নিয়েই অফিসে যেতেন। কিন্তু বয়স হয়েছে অ্যান্টনির। একদিন ভাবলেন, একটা গাড়ি কিনবেন যা তাঁকে রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে। তবে সেটি ইলেকট্রিক কার হতে হবে। ভারতে যে ক’টি কোম্পানির ইলেকট্রিক কার রয়েছে, তার মধ্যে টাটার Tigor EV গাড়িটি সবচেয়ে সস্তা। তবে সেটি রাস্তায় নামাতেও খরচ প্রায় ১১.৯৯ লক্ষ টাকা।
বাজার খুঁজে নিজের পছন্দ মতো কোনও গাড়ি খুঁজে পেলেন না অ্যান্টনি। সেটা ২০১৮ সালের কথা। অগত্যা নিজেই একটি ইলেকট্রিক কার তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু করলেন। গাড়ির বডি কী রকম হবে? গেলেন একটি বাস গ্যারেজে। নকশা দিলেন তাঁদের কাছে। আমার এইরকম একটি গাড়ির বডি চাই। গতি বেশি হবে না। আর দু’জন যেন পাশাপাশি বসতে পারে। হয়তো সঙ্গিনীকে নিয়ে বেরোনোর কথা ভেবেই পাশের সিটটা যোগ করতে চেয়েছিলেন।। গাড়ির বডি তো তৈরি হল কিন্তু এখন দরকার ব্যাটারি, মোটর আর তার। যোগাযোগ হল দিল্লির এক বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি অ্যান্টনিকে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি পাঠানোর আশ্বাস দিলেন। কিন্তু অ্যান্টনি প্রথমেই ভুল করেছিলেন ব্যাটারির মান বুঝতে। ফের অর্ডার দিতে হল দিল্লির বিক্রেতাকে। গাড়িটিতে নতুন করে ব্যাটারি ইনস্টল করা হল।
অ্যান্টনি জন এখন তাঁর নিজের গাড়ি নিয়েই অফিসে যান, ফিরে আসেন। ওই গাড়িতে ৬০ কিলোমিটার যাতায়তের খরচ মাত্র ৫ টাকা। বাড়ি ফিরে প্রথম কাজ গাড়িটিকে চার্জে বসানো। অফিসে না গেলে মাঝে মধ্যে বেরিয়ে পড়েন শহরের রাস্তায়। ছোট রাস্তা হোক বা বড়, তাঁর গাড়ি সব জায়গায় সমান স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করে।
ভাবছেন, এই রকম একটা গাড়ি হলে মন্দ হয় না! ৫ টাকা খরচ করে যদি এতটা পথ যাওয়া যায়। অ্যান্টনি কেরলের কোল্লামের বাসিন্দা। যোগাযোগ করে সস্তায় গাড়ি তৈরির টেকনিকটা জেনে নিতে পারেন। আরও আশার কথা, গাড়ি তৈরির খরচ কী ভাবে অনেক কমিয়ে দেওয়া যায়, অ্যান্টনি আপাতত সেই গবেষণায় মজেছেন।