(মহাবিশ্বের মহাকাশে নাসার নতুন টেলিস্কোপ। প্রথম ছবি পৌঁছে গিয়েছে দুনিয়ায়। তারাদের সংসারের অজানা রহস্যকে আরও কাছ থেকে দেখে বিস্ময় বেড়ে যাচ্ছে মানবজাতির। লিখেছেন সুবীর বিশ্বাস।)
এতদিন পর্যন্ত ১৯৯০ সালের তৈরি হাবলের টেলিস্কোপকে ধরা হতো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নভোবীক্ষণ যন্ত্র। এখন নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। গত মঙ্গলবার প্রথম টেলিস্কোপটি ছবি পাঠাল। এতদিন বিজ্ঞানীদের কাছে যা ছিল ঘোমটায় ঢাকা, এবার তা উন্মোচিত হল। মহাকাশ গবেষণায় এটা একটা বিরাট পদক্ষেপ।
পৃথিবীর মানমন্দিরে বসে মহাকাশের অনেক অংশ ঠিক মতো পর্যবেক্ষণ করা যায় না। তাই আমেরিকা, ইউরোপ ও কানাডার তিন স্পেস এজেন্সি মিলে মহাকাশে জেমস ওয়েভ টেলিস্কোপ স্থাপন করে। ১৯২১ সালে রকেটে চেপে এই টেলিস্কোপকে পাঠানো হয় তার গন্তব্যস্থলে, ভূপৃষ্ঠের ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দুরের লাগ্রারিয়ান পয়েন্টে (L2)। এটি একটি প্রতিফলক নভোবীক্ষণ। সুতরাং প্রতিসারক টেলিস্কোপের প্রতিবিম্বের গোলকাপেরন ও বর্ণাপেরন ত্রুটিমুক্ত। উদ্দেশ্য, এক্কেবারে সৃষ্টির ঊষালগ্নের অবস্থার বা বিগ ব্যাং তত্ত্বের তত্ত্বতালাশ। ১৩.৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ( ৯.৫×১০^১২ কিলোমিটার) দুরের নক্ষত্রপুঞ্জের জন্মের খুঁটিনাটি বোঝা।
বিজ্ঞানীদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন প্রথম ছবিগুলিই কামাল করে দিয়েছে।
এটা SMACS 0723 গ্যালাক্সির ছবি। বালুকা কণাগুলি হাজার হাজার নক্ষত্রপুঞ্জ আর উজ্জ্বল বিন্দুগুলি আমাদের আকাশগঙ্গার মতো বিরাট কোনও নক্ষত্র সংসার। ব্যবহার করা হয়েছে তাপ তরঙ্গ বা অবলোহিত রশ্মির ক্যামেরা (NIRCam, near infrared camera)। সময় লেগেছে মাত্র ১২.৫ ঘণ্টা, পূর্বসূরি হ্যাবল টেলিস্কোপের লাগতো প্রায় এক মাস। এই গ্যালাক্সিটি ৪.৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দুরে অবস্থিত। সুতরাং এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে ছবি গত সোমবার প্রকাশ করলেন, সেটা আসলে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগের। বর্তমানে আদৌ ওই নক্ষত্রপুঞ্জটি নেই বা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বা অন্য কোনও রূপে বিবর্তিত হয়েছে। এই নক্ষত্রপুঞ্জগুলি আবার বিরাট এক মহাকর্ষ লেন্স হিসাবে কাজ করে। কারণ, আইনস্টাইনের তত্ত্বানুসারে আলো মহাকর্ষ টানে বেঁকে যায়। ফলে পিছনের নক্ষত্রগুলির আরও বিবর্ধিত ছবি পাওয়া যাচ্ছে। এই ওয়েব ক্যামেরা মধ্য ইনফ্রারেড রশ্মির (MIRI) সাহায্যেও ছবি তোলে, যা গ্যালাক্সির ক্যালিডোস্কোপ ঝালর তৈরি করে। মহাকাশ ধুলিকণা, নক্ষত্র গঠনের মূল উপাদান, অস্তিত্ব ধরা পড়ে। নীল গ্যালাক্সিগুলির ধুলিকণা খুব কম, কিন্তু লালগুলির অনেক বেশি।
সুতরাং জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বিজ্ঞান জগতে বিরাট উল্লম্ফন ঘটালো। এখন ক্রমশ প্রকাশ্য বিগ ব্যাং তত্ত্ব।