অনেকে বলেন, বহুগামিতা নাকি মানুষের রক্তে। বিবাহিত জীবনে এ থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। কারও আবার সে সবের বালাই নেই। স্ত্রী-র সঙ্গে থেকেই অন্য মহিলার সঙ্গে যৌন সর্ম্পক গড়ে তোলে সেই পুরুষ। আর স্বামী থাকলেও কোনও মহিলার জীবনে আসে দ্বিতীয়-তৃতীয় পুরুষ। ভারতীয় লোককাহিনী এবং মহাকাব্যগুলি বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের গল্পের সংখ্যা কম নয়। আর আজ, সমাজের নানা কটাক্ষের ভিতরেও একই ভাবে চলছে গোপন প্রেম, পরকীয়া। যা কিছু নিষিদ্ধ, তার মজাই নাকি আলাদা!

তবে ভারতে পরকীয়া কি সত্যিই নিষিদ্ধ? আদালতের রায় কিন্তু অন্য কথা বলছে। কোর্ট বলছে, কে কার সাথে শুতে যাবে এটা ঠিক করা আইনের কাজ নয়। অর্থাৎ, ভারতে ‘ব্যাভিচার’ কোনও ফৌজদারি অপরাধ নয়। পরস্ত্রী-র সঙ্গে বিবাহিত বা অবিবাহিত কোনও ব্যক্তির যদি  দৈহিক সম্পর্ক থেকে থাকে, তাহলেও ভারতীয় আইন কিন্তু কোনও ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারবে না।  

 ১৫৯ বছরের পুরনো, ইংরেজ আমলের ব্যাভিচার আইনকে বাতিল করে দিয়ে ভারতের শীর্ষ আদালত বলেছে, এটি হল এমন আইন, যেখানে মেয়েদেরকে পুরুষের সম্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছে, ব্যভিচার কোনও অপরাধ নয়। আগে অবশ্য  কোনও পুরুষ স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনও মহিলার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হতো। 

২০১৮ সালে অগস্ট মাসে, ইতালিতে বসবাসকারী ৪১ বছর বয়সি ভারতীয় ব্যবসায়ী জোসেফ শাইন সুপ্রিম কোর্টে ব্যাভিচার আইন প্রত্যাহার করার আবেদন করেছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, এই আইন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জন্য কেবলমাত্র  পুরুষকেই দোষী ঘোষণা করেছে। আইনটিতে নারীকে পুরুষের সম্পত্তি হিসাবে দেখানো হয়েছে যার ফলে পরোক্ষ ভাবে মহিলাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। এতে নারীদের কোনও বস্তুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। জোসেফের যুক্তি, আইনটি  নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই বৈষম্যমূলক। সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেছিলেন, এটি বিবাহবিচ্ছেদের মতো নাগরিক সমস্যার ভিত্তি হতে পারে, কিন্তু ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য হতে পারে না।

মামলার শুনানির সময়ে ভারত সরকারের অবস্থান ছিল উল্টো। সরকারের তরফে শাইনের আবেদনের বিরোধিতা করে বলা হয়, ব্যভিচার একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসাবেই গণ্য হোক। ভারত সরকারের মতে, “ব্যভিচার আইনকে লুপ্ত করা হলে তা বিবাহের পবিত্রতাকে নষ্ট করবে। ব্যভিচারকে আইনি জামা পরালে তা বিবাহ বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।” সরকারি আইনজীবী বলেন, “ভারতে বিবাহ প্রতিষ্ঠান ও তার পবিত্রতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।”

দেখে নেওয়া যাক, ব্যভিচার আইনে ঠিক কী বলা হয়েছিল?

ওই আইন অনুযায়ী, কোনও মহিলাকে সম্পর্ক স্থাপনের প্ররোচনাকারী হিসাবে শাস্তি দেওয়া যাবে না। পরিবর্তে যে ব্যক্তির সাথে তিনি যৌন সর্ম্পক স্থাপন করেছেন, সেই পুরুষকেই প্রলোভনকারী হিসাবে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু ওই আইন মহিলাদের একজন ব্যভিচারী স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার অনুমতি দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের সকলেই বলেছেন, ব্যাভিচার আইনটি প্রাচীন, স্বেচ্ছাচারী এবং অসাংবিধানিক। বিচারপতি মিশ্র বলেন, “কোনও স্বামী, স্ত্রী-র কর্তা নন। আইনের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ সমান।’’ বিচারপতি রোহিনটন নরিম্যান বলেন, ব্যাভিচার আইনে পুরুষরাই অপরাধী এবং নারী শিকারকারী—এমন  ধারণাগুলি যুগোপযোগী নয়। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের মতে, আইনটি নারীর যৌন অধিকার, সম-অধিকার ও মর্যাদায় আঘাত করেছে। 

আইনের শিক্ষক রশ্মি কালিয়ার যুক্তি— কে কার সঙ্গে যৌন সর্ম্পক করবে— আইন ব্যবস্থার উচিত নয় তা নিয়ন্ত্রণ করা।