শান্তি পুরস্কার যদি দিতে হয় তবে কার নামে তা হওয়া উচিত? যে কোনও নামেই হতে পারে। কিন্তু কোনও মৃত্যু ব্যবসায়ীর নামে নিশ্চয়ই হবার কথা নয়। তেমন হলে সকলেই বলবেন, আর যা-ই হোক, মৃত্যুর ব্যবসায়ী কোনওদিন শান্তির বার্তাবাহক হতে পারেন না। কিন্তু সেই লোকটি যদি আলফ্রেড নোবেল হন? আর পুরস্কারটি নোবেল শান্তি পুরস্কার হয়? 

সময়টা ১৮৮৮ সাল। আলফ্রেডের ভাই লুডভিগ কানে যাবার পথে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা গিয়েছিলেন। একটি ফরাসি সংবাদপত্র ভুলবশত মৃতের পরিচয় আলফ্রেডের সাথে গুলিয়ে ফেলে। ‘মৃত্যু ব্যবসায়ী মারা গিয়েছেন’ শিরোনামে একটি জঘন্য মৃত্যুবার্তা প্রকাশ করেছিল তারা। পত্রিকাটি আরও লেখে, আলফ্রেড নোবেল (Alfred Noble) এমন ব্যক্তি, যিনি  মানুষকে দ্রুত হত্যা করার উপায় খুঁজে বার করে ধনী হয়েছেন। কারণ, আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেছিলেন। যখন জানা যায়, আলফ্রেড নোবেল মারা যাননি, তখন পত্রিকা দুঃখপ্রকাশ করে।  কিন্তু ততদিনে নোবেল ওই খবরের  কাগজে নিজের মৃত্যু সংবাদ পড়ে ফেলেছেন। দুঃখ পেয়েছিলেন আলফ্রেড। ডিনামাইট (Dynamite) কি মানব হত্যার জন্য ? একে কি মানুষের উন্নয়নে ব্যবহার করা হয় না? 

বিবেক জ্বালায় জর্জরিত হলেন আলফ্রেড। সত্যি, আমি কি এমন কিছু আবিষ্কার করেছি যা আমাকে চিরকলঙ্কিত করে রাখবে? আমি কি ধ্বংসলীলার এক নতুন পথ আবিষ্কার করলাম? শেষে কি এই ডিনামাইট আবিষ্কারের জন্য মানুষ চিরকাল আমাকে দোষারোপ করবে? এ ভাবেই উত্তরসূরিরা মনে রাখবে আমাকে? 

মনের ভিতরে ঝড় বয়ে গেল আলফ্রেড নোবেলের। ভাবতে লাগলেন, কী করে কলঙ্ক মোছাবো।  কী করলে মানুষ আমাকে ভাল কাজের জন্য মনে রাখবে?  

১৮৯৩ সালে আলফ্রেড ঠিক করে ফেললেন তিনি কী করতে চান।  তারপর দু’বছর ধরে সেক্রেটারির সঙ্গে বসে একটি উইল তৈরি করলেন। চার পাতার উইল! তাতে নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরির জন্য নিজের সম্পত্তির  ৯৪% এরও বেশি দান করলেন। টাকার অঙ্কটাও ছিল বিরাট। তখনকার ভারতীয় মূল্যে প্রায় ২৪ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা।  

আলফ্রেড নোবেলের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মানবতার জন্য কাজ করে যাওয়া। আর যাঁরা নিঃস্বার্থ ভাবে সমাজের জন্য কাজ করেছেন এবং মানবজাতির উন্নতির জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন, তাঁদের পুরস্কৃত করা। নোবেল ফাউন্ডেশন তাদের পুরস্কার দেওয়ার জন্য পাঁচটি বিভাগ বেছে নিয়েছিল। রসায়ন, সাহিত্য, চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা ও শান্তি। আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর, ১৯০১ সালের ডিসেম্বর থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছিল।  

আর এ ভাবেই একটি ভুল মৃত্যুসংবাদ সুইডিশ উদ্ভাবক এবং শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেলের ভাবনায় আলোড়ন তোলার পর তাঁর নামটিকে শান্তির সমার্থক করে তুলেছিল।