প্রথমবারের মতো চাঁদের মাটিতে চারাগাছ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের এই সাফল্যকে বিজ্ঞানের পথচলায় একটি বিরাট পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাপোলো ১১, ১২ ও ১৭ মহাকাশযানগুলি চাঁদের থেকে নিয়ে এসেছিল মাটি। সেই মাটিতেই তৈরি হয়েছে চারাগাছ। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সফল ভাবে এই কাজ বাস্তবায়িত করেছেন। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, চাঁদের পৃষ্টে জীবনের সঞ্চারের বিষয়ে এটি মস্ত বড় পদক্ষেপ। তবে বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন তাঁরা।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা অ্যারাবিডোপসিস উদ্ভিদ থেকে বীজ রোপণ করেছিলেন— যা সাধারণত থ্যাল ক্রেস নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক জার্নাল “কমিউনিকেশনস বায়োলজি”-তে বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত পরীক্ষার বিস্তারিত গবেষণাপত্র সামনে এসেছে। যেখানে জানানো হয়েছে, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জলসেচ ও পরিচর্যার পরে বীজগুলি চারাগাছে রূপান্তরিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই গবেষণার ফলে অদূর ভবিষতে চাঁদে খাদ্য বা অক্সিজেনের সংস্থানের প্রধান উপায় নিশ্চিত করা যাবে।

নাসার (NASA) আর্টেমিস প্রোগ্রাম অনুযায়ী, ২০২৫ সালে চাঁদকে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলার পরিকল্পনায় এই পরীক্ষাটি বেশ কিছু বছর ধরে করা হচ্ছিল। এই পরীক্ষার প্রধান দুই গবেষক, আনা-লিসা পল এবং রবার্ট ফেরল গত  ১১ বছর ধরে নাসা থেকে চার বার চাঁদের মাটি নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। বলা যায়, চতুর্থবারে সফল হয়েছেন তাঁরা।

চাঁদের মাটি ব্যবহার করার পাশাপাশি, গবেষকরা জেএসসি-১ এ, আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে অ্যারাবিডোপসিস বীজ রোপণ করেছেন। এই আগ্নেয়গিরির মাটি অনেকটা চাঁদের মাটির সমতুল্য।

চাঁদের  মাটিতে রোপণ করা সমস্ত বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মাটিতে হওয়া চারাগাছের সঙ্গে রেগোলিথ ( চাঁদের মাটি) এবং পৃথিবীর মাটিতে রোপণ করা বীজগুলির মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করেছিলেন পল এবং ফেরল। চাঁদের মাটিতে কিছু গাছ পৃথিবীর মাটিতে লাগানো গাছের তুলনায় ছোট, আকারে বৈচিত্র্যময় হয়েছে। একটি সাক্ষাৎকারে পল বলেছেন, গাছগুলি শিঁকড় বৃদ্ধিতে যে কোনও বাধা সরিয়ে ফেলতে সক্ষম।

নাসার সিনিয়র বিজ্ঞানী শর্মিলা ভট্টাচার্য পরীক্ষার ফলাফলকে ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘গবেষকদের এখন দেখা দরকার চাঁদের মাটিতে গাছগুলি কতটা ভাল ভাবে বেড়ে ওঠে।’’ ফেরল বলেছেন, ‘‘চাঁদের নমুনাগুলির সাথে কাজ করা স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তবে যদি আমরা এই কাজ চাঁদে গিয়ে করতে পারি, তাহলে মানব সভ্যতা ও বিজ্ঞানে একটি নতুন দিক উন্মোচিত হবে।’

1 COMMENT

Comments are closed.