সদা সত্যবাদী যুধিষ্টিরও মিথ্যে বলেন। আবার তার অজুহাত ও দেন। মিথ্যে! সেতো যুধিষ্ঠির ভালোর জন্য বলেছেন। তার মানে মিথ্যের ভালোমন্দ বিচার হয়। আর সেই বিচার হয় রঙের মাধ্যমে।
সারাদিনে কতই না মিথ্যে বলে মানুষ। কিন্তু মিথ্যেরও রং (Color Of Lie)! শুনতে কেমন লাগে।  তবে ব্যাপারটা আর্শ্চযের হলেও যাঁরা এ সব নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন, তাঁরা মিথ্যে কথার শ্রেণিবিভাগও করে ফেলেছেন! আর সেই শ্রেণিবিভাগ হয়েছে নিছক কয়েকটা রঙের মাধ্যমে। সেগুলি কোন রং বলুন তো!

গবেষকেরা বলছেন, সাধারণ ভাবে মিথ্যের চারটি রং। সাদা, ধূসর, কালো আর লাল। তবে আরও একটি রং রয়েছে মিথ্যের। সেটা একেবারে শেষে বলব।  

সাদা মিথ্যে

প্রথমে সাদা মিথ্যে বা হোয়াইট লাই। এই ধরনের মিথ্যে কথাকে অনেকে সামান্য মিথ্যে বলে থাকেন। এমন মিথ্যেয় পরোপকার লুকিয়ে থাকে। যেমন, কারও মনে  আঘাত না দিয়ে, সত্যকে চেপে রেখে সামান্য মিথ্যে বলা। অন্যকে খুশি করা। ছোট একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরুন, কোনও মহিলা  নতুন ধরনের হেয়ার স্টাইল করেছেন। যা আপনার পছন্দ হয়নি। কিন্তু তিনি যখন জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন লাগছে? আপনি জবাব দিলেন, awesome ! খুব সুন্দর। কিন্তু মনে মনে আপনি জানেন, মিথ্যে বলছেন। কিন্তু কাছের মানুষ যাতে কষ্ট না পান,  তাই মিথ্যে বললেন। এতে সেই মহিলার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, আপনারও ক্ষতি হল না।  শিশুদের কোনও কাজ থেকে নিরস্ত করতে বাবা-মা কিংবা কাছের লোকেরা হামেশাই সাদা মিথ্যে বলে থাকেন। তবে  ব্যবহারিক জগতে পুরো খাঁটি সাদা মিথ্যে পাওয়া একটু কঠিন। কারণ, সাদা মিথ্যে প্রায়শই ধূসর মিথ্যের সাথে মিলে যায়।  আসে সাদা মিথ্যে কথা সেইগুলি যাতে নিজের কোনও উপকার হয় না শুধু মানসিক তৃপ্তি ছাড়া। 

ধূসর মিথ্যে

এ বার ধূসর মিথ্যে  বা গ্রে লাই। আমরা যে সব মিথ্যে বলি তার বেশিরভাগই ধূসর মিথ্যে। এই ধরনের মিথ্যে বলার সাথে স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। তবে যাকে এই মিথ্যে বলা হচ্ছে তার ও উপকার হচ্ছে, সেই সঙ্গে নিজের।  এই মিথ্যের বৈশিষ্ট হল, আংশিক ভাবে অন্যদের সাহায্য করা  এবং আংশিক ভাবে নিজেকেও সাহায্য করা। সাহায্য ও ক্ষতির ভারসাম্যের উপর নির্ভর করে তারা ধূসর ছায়ায় পরিবর্তিত হতে পারে। ধূসর মিথ্যের সংজ্ঞা দেওয়াটা কঠিন। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন,  আপনি কোনও বন্ধুকে সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে মিথ্যে বলতে পারেন। কিন্তু তারপরে তাকে দিয়ে আপনার জন্য মিথ্যে বলিয়ে  পারস্পরিক সুবিধা অর্জন করতে পারেন।

কালো মিথ্যে

কালো মিথ্যে  বা ব্ল্যাক লাই অবশ্য আমি সর্বস্ব। কোনও জটিলতা নেই তার মধ্যে। আমার ভাল ,আমার সমৃদ্ধি ,আমার ইচ্ছে  সব কিছু পূরণের জন্যই যে মিথ্যে, তার রং কালো। ইংরাজিতে বলা হয়, Black lies are simple and callous selfishness, এতে কার কী ক্ষতি হল, মানুষটা কতটা বিপদে পড়ল, তা দেখার কোনও ব্যাপারই নেই। একেবারে নিষ্ঠর স্বার্থপরতা।  কালো মিথ্যে থেকে  মিথ্যেবাদীর পাশের লোকেরা  কিছুই পায় না। এর উদ্দেশ্য, নিজেকে সমস্যা থেকে বার করে আনা, নিজের ক্ষতি কমানো কিংবা যা চাই তা অর্জন করা। কখনও কখনও এমন মিথ্যে অন্যদের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।  

লাল মিথ্যে

আবার যে মিথ্যেয় প্রতিশোধ ও হিংসার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, তার রং লাল। এই ধরনের মিথ্যে বা রেড লাই-এ মিশে থাকে হিংসা। যদি নিজের ক্ষতি হয়, তা-ও কোনও মানুষ এমন মিথ্যে বলতে পিছপা হয় না। কারণ, তার উদ্দেশ্য অন্যের চরম ক্ষতি করা। সময়ে সময়ে প্রাণঘাতী হয় এই মিথ্যে । প্রতিশোধ ! এই একটা কথাই মনে আসে তখন। চরম রাগ থেকে নিজেকে যখন কোনও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার মনে হয়, তখনই লাল মিথ্যে বলা হয়। পরিণাম কী হবে, সেই চিন্তাশক্তি লোপ পেয়ে যায় যেন। 

এই চারটি রঙের বাইরেও আরও একটি রং রয়েছে মিথ্যের। সেটা অনেকটা সাদা মিথ্যের মতোই,  কিন্তু ব্যাপ্তি অনেক বড়। এই মিথ্যে এমনই যা  কারও জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এর রং হলুদ। ইয়েলো লাইস এমন মিথ্যে, যা সচারচর কাছের কোনও মানুষের জন্যই বলা হয়। ধরুন, আপনার কাছে কোনও মানুষ মৃত্যুশয্যায়। জীবনের সব আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সেই সময়ে  জীবনের প্রতি তাঁর আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে কোনও মিথ্যে বললেন। সেই মিথ্যেই হবে হলুদ মিথ্যে। তবে এর রংটি কেন হলুদ হল, তা জানা নেই।  

এতো গেল মিথ্যের কথা। সত্যেরও কি কোনও রং হয় ?  সেই রহস্য নিয়ে আর এক দিন আলোচনা করা যেতে পারে।