না, কোটি টাকার হিসাবে আর যাচ্ছি না। বরং ডলারের হিসাবেই বলি। এই ২০২১-২২ সালের আর্থিক বছরে ভারত ৪০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মাল রফতানি করেছে। একটু বেশিই করেছে। প্রায় ৪১০ বিলিয়ন ডলার।
স্বাধীনতার পর, এই বছরই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি মূল্যের রফতানি। এর আগে ছিল ৩৩১.০২ বিলিয়ন ডলার রফতানি। হয়েছিল ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে।
‘বাণিজ্য এবং উদ্যোগ মন্ত্রণালয়’-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই বছর বিদেশের রিটেল বাজারে বিক্রি জিনিসপত্রের (merchandise exports) মূল্য ফেব্রুয়ারি ২০২২ অবধি দাঁড়িয়েছিল ৩৭৪.৮১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। গেল আর্থিক বছরে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেটা ছিল ২৫৬.৫৫ বিলিয়ন ডলার। স্বাভাবিক ভাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল উচ্ছসিত। বলছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র কামাল দেখছি সবাই। অনেকগুলি জিনিস অবশ্যই বাধার সৃষ্টি করেছিল। কোভিড তো রয়েছেই, রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধেও ক্ষতি হয়েছে ব্যবসার। না হলে আরও হতো।
এইবার এক্সপোর্ট বেশি হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং মেশিনপত্র, পেট্রোলিয়াম আর রাসায়নিক পদার্থের। তবে ওষুধ পত্র কমেছে আগেরবারের থেকে প্রায় ১.৭৮ শতাংশ। ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবসা বেড়েছে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ। কৃষিপণ্য রফতানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। চাল , চিনি,গম, মশলা, এগুলিই বেশি গিয়েছে।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, রফতানি বাড়ার কারণ অনেক। প্রথম হচ্ছে অনেকগুলি দেশই এখন কোভিডকালীন নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়েছে। সরকার দেশে উৎপাদন বাড়াতে নজর দিয়েছে। বেশ কিছু দেশের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি হয়েছে। এক্সপোর্টারদের ট্যাক্স রিফান্ড দেয়ার নিয়ম কানুন সহজ হয়েছে। আগামীতে আরও রফতানি হবে। এই খাতে রোজগার বাড়বে, এমনটাই আশা।
এই ফাঁকে একটু বলে রাখা ভাল, চীনের রপ্তানির পরিমাণ। ২০২১ সালের হিসাব পাচ্ছি। ৩.৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার। ২১-২২ সালে এসেছে ৯৪.১৬ বিলিয়ন ডলারের মাল। কি না আসে? চকোলেট থেকে শুরু করে সিমেন্ট অবধি। আর ভারত থেকে ২১-২২ সালে চীনে রফতানি হয়েছিল মাত্র ২১.২৫ বিলিয়ন ডলারের মাল।
কোন ধরনের জিনিস যায়? আয়রন ওর, কটন এবং এরকমই কাঁচামাল। সেগুলিই ফের তৈরি হয়ে ফেরত আসে। মাল আসে বেশি, যায় কম। ২০-২১ সালে চীন, ট্রেড ডেফিসিট হিসাবে ভারত থেকে পেতো ৬৯.৩৮ বিলিয়ন ডলার। এই বছর আরও বেশি। ৪১৯.৬৫ বিলিয়ন ডলারের মাল রফতানি হলেও, এই বছর ভারত আমদানি করেছে প্রায় ৬১১.৮৯ বিলিয়ন ডলারের মাল। ট্রেড ডেফিসিট দাঁড়াচ্ছে ১৯২.২৪ বিলিয়ন ডলার। তত্ত্বকথা যতই বলা হোক, ব্যাপারটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। আয় থেকে ব্যয় বেশি হওয়াটা কি উচিত কাজ?
২০২১-২২ সালে ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে আমেরিকার। মাল এসেছে ৪৩.৩১ বিলিয়ন ডলারের। আর মাল গিয়েছে ৭৬.১১। আমেরিকার সঙ্গেই ট্রেড ব্যালেন্স ভারতের পক্ষে।

২০১৩ -১৪ থেকে ২০১৭-১৮ অবধি চীনই ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় ট্রেড পার্টনার। তারপর ২০২০-২১ সালেও। সে অবশ্য কোভিডের জন্যে। ২০২১-২২ সালে দ্বিতীয় স্থানে। তারপর সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ( ৭২.৯ বিলিয়ন ডলার) , তারপর যথাক্রমে সৌদি আরব (৪২.৮৫ বিলিয়ন ডলার) ,ইরাক (৩৪.৩৩ বিলিয়ন ডলার) এবং সিঙ্গাপুর (৩০ বিলিয়ন ডলার)।
অধিকাংশ দেশের সঙ্গেই আমাদের চলছে ট্রেড ডেফিসিট। সেটাকে সামলে রাখাই আগামী বছরগুলিতে সরকারের কাছে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ।