ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, পরিবর্তিত বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি মানব সমাজের উপর ক্ৰমবৰ্ধমান প্রভাব ফেলে। ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (IPCC) তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পরিধি এবং মাত্রা পূর্ববর্তী মূল্যায়নে অনুমানের চেয়ে বড়। তারা প্রতিবেদনে লিখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্য ও জলের ঘাটতি এবং মানব জীবন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং জীববৈচিত্র্যকে একটি বড়সড় ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকার প্যানেল (IPCC) হল, বিজ্ঞানের মূল্যায়নের জাতিসংঘের সংস্থা (United Nation)। জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু বিজ্ঞান সংস্থাটি প্রতিবেদনে আরও বলেছে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রকৃতিতে এবং সমাজে মারাত্মক এবং ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে- আমাদের পুষ্টিকর খাদ্য বাড়ানোর বা পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করার ক্ষমতা হ্রাস করছে, এইভাবে মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে প্রভাবিত করছে এবং জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
IPCC সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে যে বার্তা দিয়েছে তা খুব ষ্পষ্ট – জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি সমস্ত পরিবেশগত সূচকের বাইরে চলে গেছে আর তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই গ্রহের কোটি কোটি মানুষ।
প্রতিটি অতিরিক্ত মাত্রার উষ্ণায়নের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি তীব্র হওয়া প্রত্যাশিত। তাই গ্রহ-উষ্ণায়ন নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। বিংশ শতাব্দী থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় আট ইঞ্চি আর শেষ কুড়ি বছরে এই উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ২ ইঞ্চি(বাৎসরিক বৃদ্ধি ৩.৪ মিমি)।
পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির দুটি কারণ সামনে এসেছে- জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং নির্বিচারে বন উজাড় করা। মানুষের করা এই কাজগুলি প্রচুর পরিমাণে উষ্ণতা নির্গমন করে যা বায়ুমণ্ডলে আটকে যায়। অতিরিক্ত তাপ পৃথিবীর সিস্টেমগুলিকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়, জলবায়ু পরিবর্তনকে চালিত করে, যার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সেইসাথে ঘন ঘন চরম আবহাওয়ার পরিবর্তন।
জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রশমিত করার জন্য IPCC দুটি লক্ষ্য নির্দেশ করেছে।
উষ্ণতার প্রশমন বলতে মানুষ কর্তৃক উষ্ণতা নির্গমন কমানোর প্রচেষ্টাকে বোঝায়। এর জন্য দরকার শক্তির দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসগুলিকে ব্যবহার করা, এবং নিজেদের সেই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া। এছাড়াও ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সমুদ্রের প্রাচীর নির্মাণ, বা আরও তীব্র বৃষ্টিপাত থেকে বন্যা প্রতিরোধ করার জন্য নিষ্কাশন অবকাঠামোর উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বিশ্বের প্রায় ২০০ বিজ্ঞানীর একটি দল আইপিসিসি রিপোর্ট-এ উল্লেখ করেছে যে বিশ্ব উষ্ণতা প্রশমনে অগ্রগতি অসম। আর সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল পরিকল্পনা ও কার্যের মধ্যে বিস্তর তফাৎ। ভারত এই রিপোর্টটিকে স্বাগত জানিয়েছে ও তাদের নির্দেশিত পথে চলতে রাজি হয়েছে।