মেঘালয়ের লোককথা

খাসি-জয়ন্তিয়া পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। এর সৌন্দর্য বর্ধিত করেছে পাহাড় থেকে নেমে আসা রুপোলি জলপ্রপাতগুলো। কা লিকাই জলপ্রপাতটি এদের মধ্যে একটি।  এই জলধারা থেকে উৎপন্ন নদীটি রাংজির্টে গ্রাম থেকে বয়ে চলেছে নংরিটাট গ্রামের পাশ দিয়ে। লাইটকিনচেউ গ্রাম থেকে জলপ্রপাতটিকে ভাল ভাবে দেখা যায়। পর্যটকরা চেরাপুঞ্জি ভ্রমণে গেলে কা লিকাই অবশ্যই দেখে আসেন।  শরৎকালে এর শাোভায় চোখ জুড়িয়ে যায়। এই জলপ্রপাতটিকে নিয়ে একটি কাহিনি খাসি-জয়ন্তিয়া পাহাড়ে লাোকমুখে শোনা যায়।

রাংজির্টে গ্রামে কোনো এক সময়ে কা লিকাই নামে একটি মেয়ে ছিল। বিয়ের কিছুদিন পর কা লিকাই একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিল। মেয়েটি যখন এক-পা, দু-পা করে হাঁটতে শিখেছে তখন কা লিকাইয়ের স্বামীর মৃত্যু হল। ওদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। দুঃখকষ্টের মধ্যে কা লিকাই মেয়েটিকে বড় করছিল। মেয়েটি কিছুটা বড় হবার পর, কা লিকাই দ্বিতীয়বার বিয়ে করল।

কা লিকাইয়ের দ্বিতীয় স্বামী মেয়েটিকে প্রথম দিন থেকেই সহ্য করতে পারত না। বেশ কিছুদিন কেটে যাবার পর স্বামীর মনে হল, কা লিকাইয়ের তার প্রতি কোনও মনোযোগ নেই, সব সময়ই মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এর একটা বিহিত করতেই হবে। মেয়েকে শেষ করে দিলেই কা লিকাই সম্পূর্ণ ওর হয়ে যাবে— মনে মনে ভাবল সে।

একদিন সকালে কা লিকাই যখন কাজে বেরিয়ে গেলে ওর দ্বিতীয় স্বামী ছোট্ট মেয়েটিকে কেটে টুকরো টুকরো করে মাংস রান্না করল। মেয়েটির মাথা এবং হাড়গুলো দূরে ফেলে দিল এবং আঙুলগুলো পান-সুপুরি রাখার ঝুড়ির নীচে লুকিয়ে রেখে দিল।

কা লিকাই মাঠের কাজ করছিল। দুপুরবেলা বাড়িতে খেতে এসে মেয়েকে না-পেয়ে স্বামীকে জিগ্যেস করল, ‘‘মেয়ে কোথায় ?’’ স্বামী বলল, ‘’কাছেই  হয়তো খেলছে। তোমার খাবার ঢেকে রেখে দিয়েছি। খেয়ে নিয়ো।’’ এই বলে স্বামী সামনে থেকে চলে গেল। কা লিকাইকে আবার কাজে বেরিয়ে পড়তে হবে, ও আর দেরি করল না, খেতে বসে গেল। মাংসের ঝোল রান্না হয়েছে দেখে কা লিকাই ভাবল, হয়তো কেউ পুজোতে ‘বলি’দিয়েছিল, প্রসাদ দিয়ে গিয়েছে। মাংস, খেতে ভালই লাগল।

খাওয়া শেষ করে কা লিকাই পানের ঝুড়ি থেকে পান নিতে  গেল। তখন ঝুড়িটা হাত থেকে পড়ে গেল। কা লিকাই চমকে উঠল, ঝুড়ির নীচে কচি কচি আঙুলগুলো চিনতে একেবারেই ভুল হল না। ও বুঝতে পারল, কিসের মাংস খেয়েছে। মুহূর্তের মধ্যেই একটা দা হাতে নিয়ে  চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে কা লিকাই জলপ্রপাতের দিকে ছুটে গেল। কান্না শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসেছিল। কিন্তু ওর উন্মত্ত অবস্থা এবং হাতে দা দেখে কেউ বাধা দিতে পারেনি। কা লিকাই জলপ্রপাতের উপর থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করল।

শোকাহত মায়ের নামে সেদিন থেকেই জলপ্রপাতটির নাম হল কা লিকাই।