নরক নিয়ে অনেকেরই মনে নানারকম কল্পনা রয়েছে। ধর্ম কিংবা অধর্ম নিয়েও তর্কের শেষ নেই। কিন্তু জানেন কি, নরক, ধর্ম কিংবা অধর্ম  আসলে এক একটি পৌরাণিক চরিত্র। এমন কি যে মৃত্যু নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই তিনিও আসলে পুরানের একটি চরিত্র। 

বলা হয়, জগতের সমস্ত সৃষ্ঠির পিতা হলেন দেবাদিদেব ব্রক্ষ্মা।তাই যদি হয় তবে ধর্মের সৃষ্টি কোথা থেকে ? বিষ্ণুপুরাণের একটি স্তোত্রে ধর্ম ও অধর্মকে দুটি পৌরাণিক চরিত্র হিসাবে দেখানো হয়েছে। সৃষ্টির দূত প্রজাপতিগণের একজন ছিলেন দক্ষ। তার কন্যাদের সন্তানরাই ধর্মের বংশধর। যেমন, দক্ষ কন্যা শ্রদ্ধা (বিশ্বাস) -এর পুত্র কাম (আকাঙ্ক্ষা), ধৃতি (স্থিরতা)-এর পুত্র নিয়ম (আদেশ)। এই ভাবে লক্ষ্মী (সমৃদ্ধি) থেকে দর্প (অহংকার), তুষ্টি থেকে  সন্তোষ , পুষ্টি থেকে  লোভ, মেধা থেকে  শ্রুত , ক্রিয়া থেকে দন্ড বুদ্ধি থেকে বোধ , লজ্জা থেকে বিনয়,শরীর থেকে অধ্যবসায় এর জন্ম হয়।এঁরা সবাই কিন্তু এক একজন চরিত্র। শান্তির থেকে জন্ম হয় সমৃদ্ধির। এইভাবে  সিদ্ধি থেকে সুখ এবং কীর্ত্তি  থেকে যশ (খ্যাতি)।এরা সবাই ছিল ধর্মপুত্র।এঁদের মধ্যে কামের স্ত্রী ছিলেন নন্দী (আনন্দ ) আর তাঁদের সন্তান হর্ষ। 

আবার ধর্মের মতো অধর্মের বংশধরদেরও একইভাবে বিষ্ণুপুরাণে দেখানো হয়েছে। যেমন -অধর্মের স্ত্রী ছিলেন হিংসা। এদের মিলনে পুত্র অণুতা (বা অনরিতা)মানে মিথ্যা এবং একটি কন্যা নিকৃতি (অনৈতিকতা) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।অণুতা ও নিকৃতি দুই ভাই ও বোন হওয়া সত্ত্বেও তারা বিবাহ করেছিলেন। তাদের ছিল দুই যমজ পুত্র-ভয় ও নরক, যমজ কন্যা-মায়া বা ছলনা  ও বেদনা।এরাও নিজেদের মধ্যে বিবাহ করেছিলেন।ভয় ও মায়ার সন্তান হলেন মৃত্যু।নরক ও বেদনার সন্তান দুঃখ। মৃত্যুুর সন্তানরা হলেন ব্যাধি (রোগ), জরা (ক্ষয়), শোক  (দুঃখ), তৃষ্ণ (লোভ) এবং ক্রোধ। এদের বলা হয় দুর্দশার প্রবর্তক, এবং অধর্মের বংশধর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।মৃত্যুর সন্তানেরা কেউ বিবাহ করেন নি ,এদের কোনো সন্তান নেই কিন্তু এরা বিষ্ণুর ভয়ঙ্কর রূপ, চিরকাল জগতের ধ্বংসের কারণ হিসাবে কাজ করেন। 

অন্যদিকে, দক্ষ এবং অন্যান্য ঋষিরা মানবজাতির প্রাচীন ও চিরকালীন সংস্কারকে মাথায় রেখে কাজ করেছেন।যাতে মানুষ পরাক্রমশালী শক্তিতে সমৃদ্ধ এবং সত্যের পথে পদচারণা করতে পারে। 

আবার শ্রীমদ-ভাগবত থেকে জানা যায় , অধর্ম হলেন  ব্রক্ষ্মার এক ছেলে।.তার দ্বারা কৃত কর্মগুলি এই জগৎ সংসারে আক্ষরিক ভাবে অধার্মিক কাজ হিসাবে বিবেচিত হয়।  প্রশ্ন হল,  তিনি কী এমন কাজ করেছিলেন যা আমরা মেনে নিতে পারি না। অধর্ম তার নিজের বোন মার্শা কে বিবাহ করেছিলেন। ভাই বোনের যৌনতার সম্পর্ক কোনও সমাজ মান্যতা দিতে চায় না। তাই এই কাজটির পর থেকে এই জগৎ সংসারে অধর্মের শুরু। ঘটনাটি থেকে একটা জিনিস বোঝা যায়, সৃষ্টির শুরুতে ব্রহ্মা কেবল সনক, সানতানা এবং নারদের  মতো সাধু পুত্রকেই সৃষ্টি করেননি। নিরতী, অধর্ম, দম্ভ ও ফলসির মতো পৈশাচিক বংশও সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মা দ্বারা সবকিছু তৈরি হয়েছিল। নারদ  সম্পর্কে জানতে পারা যায়, তিনি তাঁর পূর্ববর্তী জীবনটিতে অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন এবং তাঁর সংস্কার খুব ভাল ছিল, তাই তিনি নারদ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অন্যরাও তাদের নিজস্ব গুন্ বা নির্গুণের জন্য তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।এখানে বলা হয়েছে, কর্মের বিধি জন্মের পরেও অব্যাহত থাকে।যখন নতুন সৃষ্টি হয়, একই কর্মফল জীবিত সত্ত্বার সাথে ফিরে আসে। সংক্ষেপে, তোমার কর্ম  সে জীবদ্দশাতেই হোক বা মৃত্যুর পরেই হোক ধর্ম বা অধর্ম হিসাবে  বিবেচিত হবে।  আমরা কি বলতে পারি কর্মই হল ধর্ম। অধর্মের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।

1 COMMENT

Comments are closed.