১। কলেজে-পড়া জনৈক যুবক একবার মুষ্টিযোদ্ধা মহম্মদ আলিকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমি আমার জীবনটা নিয়ে কী করলে ভাল হয় বুঝতে পারছি না। পড়া চালিয়ে যাব না কি কোনও কাজ খুঁজে নেব?’ আলি একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘আমার মনে হয় তোমার পড়া চালিয়ে যাওয়াই ভাল হবে। সাহেবরা যদি পচা ব্রেড থেকে পেনিসিলিন বের করতে পারে , তারা তোমার কাছ থেকেও কিছু বের করে নিতে পারবে।’
 ২। হলিউডের এক বিখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক উডি এলেন একবার রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। এমন সময় হঠাৎ কোথা থেকে ছুটে এলো তাঁর এক অনুরাগী। উত্তেজিত হয়ে সে বলল, ‘এলেন, আপনি সত্যি একজন বড় স্টার।’ শুনে উডি এলেন বললেন, ‘বটে। এ বছর আমি স্টার, কিন্তু আগামী বছর আমি কী হব? একটা কৃষ্ণ-গহ্বর (Black-hole)।’
  ৩। বীথোভেনের স্বাস্থ্য কোনো কালেই ভালো ছিল না। শেষ বয়সে মৃত্যুর ঠিক কিছু দিন আগে তাঁর শরীরের অবস্থা আরও বেশি খারাপের দিকে চলে যাচ্ছিল। কিডনির অসুখ, বাত ইত্যাদি নানা রোগ তাঁকে কাহিল করে ফেলেছিল। ১৯২৬-২৭ সালের শীতের সময় জণ্ডিস, জ্বর আর কাশিতে এমন অবস্থা হয়েছিল যে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। ১৯২৭ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ বিছানায় অসার হয়ে পড়ে থাকার সময় অকস্মাৎ বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতের শব্দে তিনি উঠে বসেন এবং আকাশের দিকে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে কী সব গালাগালি করেন। তারপর ফের শুয়ে পড়েন। এবং সঙ্গে সঙ্গে মারা যান।
 ৪। বীথোভেন কোনোদিন ভাবেননি সুরস্রষ্টা হবেন। শুরুতে তিনি ছিলেন পিয়ানোবাদক। সে সময় তিনি খ্যাতিমানও ছিলেন না, পয়সাকড়ির মুখও দেখছিলেন না। তখন তিনি লেখক হবার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। ভাবছিলেন বিখ্যাত সুরস্রষ্টা জর্জ ফ্রেডেরিক হেণ্ডেল, মহাকবি গ্যে’টে প্রভৃতির মতো বই লিখবেন, লিখে প্রকাশকের হাতে তুলে দেবেন। প্রকাশক সে বই প্রকাশ করবেন এবং নিয়মিত তাঁকে  লাভের অংশ দিয়ে যাবেন। আর সেই টাকায় তিনি দিব্যি এক পারবেন। তাঁর এই ইচ্ছের কথা এক বন্ধুকে বলায় তিনি বলেছিলেন, ‘বন্ধু, তুমি হেণ্ডেলও হতে পারবে না, গ্যেটেও হতে পারবে না, সে ক্ষমতা তোমার নেই। তেমন বিরল প্রতিভার মানুষ পৃথিবীতে একবারই জন্মায়। তুমি কোন সাহসে ভর করে এমন কথা ভাবছ?’
৫। রূপকথা লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন হান্স খ্রীষ্টিয়ানা অ্যাণ্ডারসন। তিনি বিয়ে করেননি। শেষ বয়সে বিস্তর অসুখে ভুগেছিলেন। দীর্ঘদিনের সাথি ব্রংকাইটিসের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল লিভার ক্যানসার। নিঃসঙ্গ অ্যাণ্ডারসন নিরুপায় হয়ে কোপেনহেগেনের কাছেই সাগরের পারে ছোট্ট একটা জায়গায় এক বন্ধুর সঙ্গে বাস করতে শুরু করেন। একদিন সকালে চা খাওয়ার একটু পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় তাঁর হাতে ছিল চল্লিশ বছর আগে ভালোবাসা একমাত্র প্রেমিকার বিদায় পত্রখানা।
 ৬। স্যার উইনস্টন চার্চিলের সঙ্গে আলাপ হবার পর জনৈক মহিলা গৌরবের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘জানেন, আমার বেবিটা দেখতে ঠিক আপনার মতো!’
  ‘আসলে কি জানেন, পৃথিবীর সমস্ত বেবিই আমার মতো দেখতে।’ জবাবে চার্চিল বলেছিলেন।
 ৭। জুলিয়াস সিজারের দ্বিতীয়া স্ত্রী ছিলেন পম্পিয়া। সে সময় ‘মহান ঈশ্বরীয় ভোজ’ নামের এক ধরনের উৎসবের প্রচলন ছিল। শুধু মহিলারাই সেখানে অংশ নিতে পারতেন। একবার খবর শোনা গেল যে বদমাস ও দুশ্চরিত্র পাব্লিয়াস ক্লিডিয়াস মহিলার ছদ্মবেশে সেই উৎসবে গিয়ে পম্পিয়ার সঙ্গে অবৈধ মিলনে লিপ্ত হয়েছে। কথাটা কানে আসার সঙ্গে সঙ্গে জুলিয়াস সিজার পম্পিয়াকে ত্যাগ করেন। কিন্তু তখন সেখানে নিয়ম ছিল এমন ঘটনার তদন্ত হতে হবে। যথারীতি তদন্ত চলল। তদন্তের শেষে দেখা গেল, অন্য অনেকের সঙ্গে সিজারের বাড়ির লোকেরাও এই বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে কথাটা সত্যি নয়, পম্পিয়া নির্দোষ। বিচারসভা সিজারের কাছে পম্পিয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ চাইল। সিজার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারলেন না। তখন বিচারক জিজ্ঞেসা করলেন, ‘আপনার হাতে কোনো প্রমাণ নেই অথচ আপনি বিবাহ-বিচ্ছেদের পথ নিলেন। এর কারণ কী?’ সিজার বললেন, ‘সিজারের স্ত্রীকে সব সময় সমস্ত রকমের সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকা চাই।’
৮। বিখ্যাত লেখক আলেকজান্ডার ডুমা একবার এক নাট্যকার বন্ধুর লেখা নাটক দেখতে গিয়েছিলেন। নাটক দেখতে দেখতে তিনি খেয়াল করলেন দর্শকের আসনে বসে থাকা একজন দর্শক চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছেন। সেদিকে ইঙ্গিত করে পাশে বসা বন্ধুকে বললেন, ‘দেখ, তোমার নাটকের প্রভাব দেখ। নিজের চোখে দেখ…।’  বন্ধু কোনো জবাব দিলেন না।  
পরদিন ছিল ডুমার নিজের লেখা একটি নাটক। সেদিন তাঁর সঙ্গে সেই বন্ধুও গিয়েছিলেন নাটক দেখতে। এবারও দেখা গেল একজন দর্শক আগের দিনের মতো চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছেন। তা দেখে বন্ধু খুব উল্লসিত। এবারে বদলা নেওয়া যাবে। ডুমাকে তিনি বললেন, ‘বন্ধু, ওই দেখ, দেখতে পাচ্ছ? তোমার নাটকের দর্শকের কী অবস্থা বুঝতে পারলে? শুধু যে আমার নাটক দেখে দর্শক ঘুমিয়ে পড়ে তা নয়, তোমার নাটকেরও একই অবস্থা।’ বন্ধুর কথা শুনে ডুমা বললেন, ‘নাহ্, তুমি ভুল বুঝছ। ইনি আসলে গতকালের সেই দর্শকই। তোমার নাটক দেখে সেই যে বেচারা ঘুমিয়েছিল আজও ঘুম থেকে ওঠার লক্ষণ নেই। ঘুমোচ্ছে তো ঘুমোচ্ছেই।’
৯। কুখ্যাত রোমান সম্রাট ক্যালিগুলা( প্রকৃত নাম ছিল জিয়াস সিজার।) নিজেকে দেবতাদের সমকক্ষ ভাবতেন। পূর্ণিমা রাতে তিনি নাকি চন্দ্রদেবীকে তাঁর বিছানায় ডেকে আনতেন।
  “তুমি দেখতে পাওনা নাকি?’ ক্যালিগুলা একদিন অউলাস ভিটেলিয়ামকে ( ইনিই পরবর্তীকালে রোমানদের সম্রাট হয়েছিলেন।) জিজ্ঞেসা করেছিলেন।
  ‘না, আমি দেখিনি।’ তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘আপনারা দুজনই দেবতা কিনা তাই একজন আরেকজনকে দেখতে পান।’
 
১০। ক্যালিগুলার সারা শরীর লোমে ঢাকা ছিল।পা দুটো ছিল লিকলিকে। তাঁকে দেখতে অনেকটা ছাগলের মতো লাগত। কথাটা মাথায় রেখে তিনি এক আদেশ জারি করেন। কেউ যেন ভুলেও তাঁর সামনে ছাগল শব্দটা উচ্চারণ না-করে।