১৯৯৪ সালে ব্যারাকপুরের বাসভবন আরণ্যক-এ বসে, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রমা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের দাম্পত্য জীবনের অনেক ব্যক্তিগত কথা শুনিয়েছিলেন। এতদিন ধরে অপ্রকাশিত সেই আলাপচারিতা বিভূতি-পত্নীর বয়ানে তুলে ধরেছেন কাকলি ভট্টাচার্য

আমার বাবা ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের বদলির চাকরি ছিল। সেই সূত্রে বাবার সঙ্গে দেশবিদেশ ঘুরে বেড়াতাম। একসময় বনগাঁয় আসি। তার আগে বালুরঘাটে। বালুরঘাটে থাকার সময়েই ‘পথের পাঁচালী’ আর ‘দৃষ্টিপ্রদীপ’ পড়েছি। বনগাঁ তখন যশোর জেলায়। ‘পথের পাঁচালী’-র লেখকের ওখানে একটি বাড়ি ছিল। বোন, ভাগ্নে, ভাগ্নীকে নিয়ে তিনি সেখানে বাস করতেন। বনগাঁ থেকে মাইল পাঁচেক দূরে চালকি বারাকপুর। ওখানেই ওঁদের আদি বাড়ি ছিল।

ওঁর কাছে প্রথম গেছিলাম অটোগ্রাফ নিতে। তখন আমার ১৬ বছর বয়স। গ্রাম সম্পর্কের এক পিসিমা, এক বোন আর আমার পরের বোন সঙ্গে ছিল। মনে আছে, অটোগ্রাফে তিনি লিখেছিলেন—‘গতিই জীবন, গতির দৈন্যই মৃত্যু।’ সেটা ১৯৩৯ সালের অগ্রহায়ণ মাস। অটোগ্রাফ দিয়ে তিনি বলেছিলেন—“আমার এখানকার বাস এবার উঠে গেল। অন্যান্য কথাবার্তার শেষে ওঁকে আমাদের বাড়ি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। পরদিন আমাদের বাড়িতে এলেন। কথাবার্তার মাঝে বাবাকেও বললেন, ‘‘আমার এখানে বাস উঠে গেল।” ওঁর বোন মারা যাওয়ার ফলে উনি ব্যথা পেয়ে একথা বলেছিলেন। বাবা বলেছিলেন,—“আমারও তো বদলির চাকরি। যতদিন বনগাঁয় থাকবো, আসবেন।’’

উনি বাবার সঙ্গে গল্প করতে মাঝে মধ্যে আসতেন। অগোছালো সংসার, অসহায় অবস্থা দেখে একসময় ওঁর বন্ধুরাই বললেন—এবার তুমি বিয়ে কর। ওখানকার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ওঁর বন্ধু ছিলেন। ওঁদের কথাতে রাজি হয়ে গেলেন। আর আমিও তাঁর কষ্ট দেখে দুঃখ অনুভব করতাম মনে মনে। এর পরে ওঁর মামার কাছে গিয়ে আমার বাবা বললেন—“আপনার ভাগ্নের সঙ্গে আমার মেজ মেয়ে কল্যাণীর বিয়ে দিতে চাই। আপনি মত দিন ও মেয়ে দেখে আসুন গিয়ে।’’ মামা শ্বশুর বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাটপাড়ায় বাস করতেন। তিনি এককথায় রাজি হয়ে বললেন, ‘‘আমার মত আছে। ও যদি রাজি হয়, আমার আপত্তি নেই। ও নিজেই বিয়ে করতে চায় না।’’ উনি আগে একবার বিয়ে করেছিলেন। তিনি মাত্র এক বছর বেঁচেছিলেন। স্ত্রী মারা যাবার পরে উনি আর বিয়ে করতে চাননি। এর আগে বহু চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি, বিয়ের পিড়িতে বসেও নাকি উঠে এসেছেন। মামা শ্বশুর বললেন, ‘‘এখন যদি আপনার মেয়ের শিব পুজোর ফল থাকে, তাহলে আমার আপত্তি নেই, আপনি বিয়ে দিন।” এই কথায় আমার বাবা বিয়েতে অগ্রসর হলেন।

রমা বন্দোপাধ্যায়ের সাথে আলাপচারিতায় লেখিকা। উপস্থিত রয়েছেন বিভূতিভূষণের পুত্র তারাদাস বন্দোপাধ্যায়।

এরপর উনি একদিন আমাকে ডেকে বললেন—“দেখ তোমার সঙ্গে কয়েকটা কথা আছে।’’ আমি বললাম, “বলুন।’’ উনি বললেন, ‘‘আমার কিন্তু বয়স হয়ে গেছে। তুমি আমার মাথায় হাত দাও।’’ আমি বললাম, ‘‘কেন মাথায় হাত দিতে বলছেন?’’  বললেন- “আমার মাথায় চুলটুল অনেক পেকে গেছে। দেখ, তুমি আমার চাইতে অনেক ছোট। আমি আগে মারা যাব। আমি যদি হঠাৎ মারা যাই আর তুমি ছেলেপুলে নিয়ে আটকে পড়ো তখন দোষ দিও না। ভেবে দেখ। এখন তুমি বিয়ে না-ও করতে পার। আমি দেখে তোমার বিয়ে দেবো।’’ দু-একটি সম্বন্ধের কথা শুনিয়ে বললেন, “আমার হাতে ছেলে আছে, যদি বিয়ে কর।’’ আমি বললাম, “আমার এমন কোনো ব্যাপার নেই যে এখুনি বিয়ে করতে হবে। বিয়ে হলে এখানেই হবে, নইলে হবে না। এ আমার মনের কথা।’’ তিনি বললেন,—“তুমি কিন্তু দুঃখ করতে পারবে না পরে। আমি তোমাকে সব বিষয়েই বলে নিচ্ছি। কারণ, হঠাৎ তোমার অসুবিধা হতে পারে। তুমি পরে মত দিও। চিন্তা করে নাও।’’ আমি তখনই বললাম, ‘‘এ বিয়েতে আমার মত আছে।’’

বাবা-মা আমার বিয়ের আয়োজন করতে লাগলেন। আত্মীয় স্বজনরা এলেন। মামা শ্বশুরই বিয়ে দিয়েছিলেন। আর মামা শাশুড়ি মেয়েদের আচার অনুষ্ঠান যা করতে হয় সে সব করেছিলেন। এই ভাবে ১৭ই অগ্রহায়ণ, বুধবার, ইংরেজি ১৯৪০ সালের ৩রা ডিসেম্বর আমাদের বিয়ে হয়। বরযাত্রী এসেছিলেন গোপাল হালদার, সজনীকান্ত দাস, নিরোদরঞ্জন দাশগুপ্ত, শনিবারের চিঠি-র সহকারী সম্পাদক সুবল বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও অনেকে। বিয়ের পরে আমার বাবা যতদিন বনগাঁয় ছিলেন ততদিন সেখানে থেকেছি। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগলো। কলকাতা থেকে সব লোকজন পালাতে লাগলো। তিনি বললেন, ‘‘দেখ, আমাদের স্কুলটা বোধহয় উঠে গেল।’’ খেলাৎ ঘোষ ইনস্টিটিউশনে উনি কাজ করতেন ভাগলপুর থেকে আসার পরে। পরে গোপালনগর স্কুলে। সে সময় সমস্ত স্কুল কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বললেন—“চল, আমরা ঘাটশিলায় গিয়ে থাকি। ঘাটশিলায় যেতে উনি বললেন, “দেখ, আমার চিরদিনই দেশে বাস করার খুব ইচ্ছে। কিন্তু গৌরী মারা যাওয়ার পরে মা মারা গেছেন। তারপরে কোনদিন আমার দেশে বাস করা হয়নি। যখন যাই লোকের বাড়িতে গিয়ে থাকি। নিজের বাড়ি ভেঙে গেছে। আমার সইমার বাড়িটায় কেউ এখন থাকে না। যারা উত্তরাধিকারী, তারাও উঠে চলে গেছে। আমার কাছে বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছে। সেটা এখন ভাঙা অবস্থায় আছে। চল, বাড়িটা সারিয়ে নিয়ে আমরা বাস করি।’’ এরপরে বনগাঁ এসে ওই বাড়ি সারিয়ে বাস করতে থাকি।

সেই বাড়িতে প্রতিদিনই উনি ঘুম থেকে উঠতেন খুব ভোরে। ঘুম থেকে উঠে স্নান করতে চলে যেতেন। সেই আমাদের গ্রাম, এখন একটু অবশ্য অন্যরকম হয়ে গেছে। সেই গ্রাম্য বনপথ দিয়ে, ফুলগাছ দুটো চারটে পেরিয়ে, সেই আসশেওড়া, ঘেঁটু ফুল, গোলক চাঁপার ফুল, সাঁই বাবলা গাছের তলা দিয়ে তিনি স্নান করে ফিরতেন। অনেক সময় আমিও যেতাম ওঁর সঙ্গে স্নান করতে। দু’জনে ইছামতীতে স্নান করতে গিয়ে ওপারে নলখাগড়ার বন দেখতাম। সেখানে গা ধুতেও যেতাম অনেক সময়। স্নান করতে তো যেতামই। এসে চা করে রান্না চড়িয়ে দিতাম। উনি স্নান করে এসে ঠাকুর পুজো করতেন।

ঠাকুরের আসনে শ্বশুর মশায়ের পুঁথি, শাশুড়ি ঠাকরুনের কড়াই আর মাঝখানে আমার লক্ষ্মীর পট ছিল। শাশুড়ি ঠাকরুনের কড়াইয়ের ব্যাপারে একটা কথা আছে। আমার শাশুড়ি ঠাকরুন যখন দেশের বাড়ি থেকে চলে যান তখন উনুনের ওপর নাকি কড়াই বসানো ছিল। আমাদের পুরনো ভিটে নষ্ট হয়ে গেল। নতুন বাড়ি কেনা হল। তারপরেও ওই কড়াই একই অবস্থায় মাটির ভেতর গেঁথে ছিল। উনি বললেন—“তুমি এটা মাথায় করে নিয়ে চল। তোমার জন্যে মা এটাই রেখে গেছেন, আর কিছু রেখে যাননি। এটা দিয়ে আমরা জীবন অতিবাহিত করবো।’’ তারপরে সেই কড়াই নিয়ে গিয়ে তার ওপরে ফুল দিতাম রোজ। উনি নিজেও দিতেন, আমিও দিতাম।

পুজো করে উনি লিখতে বসতেন। সময় তখন সাড়ে ছটাও বাোধহয় নয়। উনি একমনে বসে লিখতেন। সাড়ে ন’টা-পৌনে দশটার সময় উঠতেন। তখন আমার রান্না হয়ে যেত। উনি লেখা ছেড়ে উঠলে বুঝতাম খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। খুব সাধারণ ভাবে রান্নাঘরের মেঝেতে বসে খেতেন। পিঁড়ি পেতে বসতেন। অনেক তরকারি খেতে ভালবাসতেন না তিনি। মুগের ডাল খেতে ভালবাসতেন। ওই মাছ যদি হল একটা আর আলুভাতে কিংবা মুগের ডালের সাথে গাওয়া ঘি। মাছ দিয়ে একটু খেলেন, ডাল দিয়ে একটু খেলেন। নইলে শুধুই ডালভাত। ভাত খেয়ে বলতেন—একটু দুধ দাও। আর রাত্রিবেলা দুধ খেতেন। এই অভ্যেস ছিল।

রাত্তিরের দিকে উনি খুব লিখতেন। আর ছুটি-ছাটা থাকলে কেউ না এলে অপরাহ্নবেলার দিকে একটু লিখতেন। সন্ধের সময় আবার স্নান করতেন। দোরে জল দিয়ে শাঁখ বাজিয়ে সন্ধে প্রদীপ দেওয়া হত। তিনি ঠাকুরের কাছে ধূপ ধুনো দিতেন। আর বাবলু হওয়ার পর খুব খেলা করতেন বাবলুকে নিয়ে। পাড়ার অনেকে আসতো সন্ধের সময়। সে সময় একটা আসর বসতো। উনি খুব জমাটি ছিলেন। এসব খুব ভালবাসতেন। কখনও সন্ধেয় প্রদীপ জ্বালানো হয়ে গেলে উনি বন্ধু ইন্দু রায়ের বাড়িতে চলে যেতেন। ইন্দু রায় অনেক রকম গল্প করতে পারতেন। সে সব থেকে উনি অনেক গল্পের প্লট পেতেন। একটা গরু চুরির গল্প উনি ইন্দু রায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। সে গল্পের নাম রাসু হাড়ি।

আর উনি যখন লিখতেন, সেখানে বসে আমরা কখনও গল্প করেছি, কত লোক এসেছে-গেছে, ওঁর কোনো কিছু অসুবিধা হত না। উনি একদম আত্মমগ্ন হয়ে থাকতেন। আর একটা কথা বলি, যখন মারা যান, তার কয়েক মিনিট আগে, হয়তো মিনিট পাঁচেক আগে উনি বলেছেন, ‘‘আজ আমার আর লেখা হয়নি।’’ সে কথা স্পষ্ট মনে পড়ে। সেই চেহারা, তাঁর দৃষ্টি, সব মনে আছে। বলেছিলেন,  “আমার লেখা হল না আজকে।’

অনেক লেখক বা শিল্পীর ক্ষেত্রে নানারকম বাতিক থাকে। যেমন কেউ আপেলের উপর হাত রেখে, কেউ বা বরফের উপর পা রেখে নিজের কাজ আপনমনে করে গেছেন। আমি এরকম কিছু কিছু পড়েছি। ওঁর ব্যাগে একটা দেশলাই থাকতো। উনি ওটা কাউকে দিতেন না। একদিন আমি দেশলাইটা নিয়েছিলাম। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন—“তুমি দেশলাইটা নিয়েছ?’’ আমি বললাম, হ্যাঁ, কেন? ওই দেশলাইটার ব্যাপার কি? উনি বললেন—‘‘এটাতে আমার ইছামতীর প্লট আছে।’’ ওই দেশলাইটা উনি কখনোই খরচ করতেন না বা কাউকে ধরতেও দিতেন না। ওটা নিয়ে নাকি নাড়াচাড়া করলেই ‘ইছামতী’-র প্লটটা মাথায় আসতো। যতদিন উপন্যাসটা মাথা থেকে না নেমেছে, ততদিন ওই দেশলাইটা তাঁর ব্যাগের মধ্যেই ছিল। ওঁর অনেক প্লট লেখা একটা খাতাও ছিল।

ওঁর সঙ্গে বনে বনে অনেক বেড়িয়েছি। ঘাটশিলার দিকে সারান্ডার জঙ্গলে গিয়েছি। চাইবাসাতে মি. জে,এ সিনহা, ফরেস্ট অফিসার ওঁর বন্ধু ছিলেন। তাঁর বাড়িতে আমি মাঝে মাঝে যেতাম। জে. এ. সিনহা হিন্দিতে লিখেছিলেন ‘পথের পাঁচালীকে বিভূতিভূষণ’ নামে বইখানি। তার বাংলা অনুবাদও হয়েছে। ওঁর আর এক বন্ধু সুকুমার ঘোষের ওখানে গিয়েছি। বানিয়াবুরু নামে আর একটি জায়গায় গিয়েছি ওঁর সঙ্গে। সেখানে গহন অরণ্য। হাতি, বাঘ, ভালুক ছাড়াও অন্যান্য অনেক প্রাণী আছে। তিনি জঙ্গল খুবই ভালবাসতেন।

ওঁর চরিত্রের আর একটি দিক হল— উনি মেয়েদের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাবান ছিলেন। কত বছর আগের কথা— সেই সমাজে বাস করেও তিনি জাতপাত মানতেন না। ওঁর মায়ের সই ছিলেন হাজারি জেলেনি। ওই গ্রামেরই মেয়ে। তখন তাঁর আশির ওপর বয়স। ওঁকে নাম ধরেই ডাকতেন। ওঁর ছোটবেলায় হাজারি জেলেনিই গাইয়ের দুধ সরবরাহ করতো। আমার শ্বশুরমশাই খুব পণ্ডিত ছিলেন। কাশীতে অধ্যাপনা করেছেন। অনেকদিন ওখানে ছিলেন। তবে তিনি এতই দরিদ্র ছিলেন যে হাজারির দুধের দামটাও দিতে পারেননি। একদিন হাজারি নড়বড়ে শরীর নিয়ে আমাদের বাড়িতে দেখা করতে এসেছিল। ফর্সা গায়ের রং। মাথায় একরাশ লম্বা পাকা চুল। ওঁকে নাম ধরে ডেকে বললে—“বিভূতি, আমার দুধের দাম দিবি না?”  উনি বলেছিলেন—“তোমার দাম আর দেবো না। ওইটা আমি নিয়ে নিলাম। তোমার কাছে আমি ঋণী থাকতে চাই।’’

আমি কোনোদিন মাছ না নিতে চাইলেও সে জোর করে বড় বড় চিংড়ি মাছ দিয়ে যেত। আমি তাকে মেয়ে বলে ডাকতাম। আমি যদি কখনও বলতাম যে—“দেখ মেয়ে আমি কখন কাটবো-কুটবো। তখন ও বলতো—তোর কাটতে হবে না। তুই না কুটলি, আমি কেটে দিয়ে যাই।’’ ও তুই বলতো আমাকে। তখনও সে দুধের যোগান দিত আমাদের বাড়িতে। একদিন হয়েছে কী, হাজারি কাঁদতে কাঁদতে আমাদের বাড়িতে এসেছে। প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছে। আমি বললাম, ‘‘মেয়ে তুমি এরকম জ্বর গায়ে এসেছ কেন?’’ ও বললো, ‘‘ছেলের কাছে এসেছি। ওর সঙ্গে আমার কথা আছে।’’ উনি তখন ঠেসচেয়ারে বসে লিখছিলেন। বললেন—“তুমি এত জ্বর গায়ে এসেছ কেন?’ বলে উনিও খুব সন্ত্রস্ত হয়ে উঠলেন। এই কথা বলতে বলতে হাজারি ওইখানে শুয়ে বমি করে ফেললো, সব কাপড় চোপড় ভিজে গেল। পাড়ার লোকেরা গিয়ে তাঁর ছেলেকে খবর দিল। তাঁর ছেলে-বউ এসে তো খুব বিব্রত হয়ে পড়লো বাড়ি এত নোংরা করেছে দেখে। আমি বললাম, ‘‘তাতে কী হয়েছে। হাজারির ছেলে অমূল্য মুখখানি করুণ করে বললো, ‘‘দাঠাকুর, আমি এসে এক্ষুণি ধুয়ে মুছে দিয়ে যাচ্ছি।’’ তখন উনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন— “না না, অমূল্য তুমি জানো না, তোমার মা আমার মায়ের সখি ছিল। তাঁর কাজ কেন আমার স্ত্রী কল্যাণী করবে না? ও নিজে এইসব পরিষ্কার করবে।’’ তারপর উনি আমাকে বললেন, “তুমি এসব পরিষ্কার করে দাও। আমি এতে সব চাইতে বেশি খুশি হব, মায়ের আত্মাও খুশি হবে। তুমি কর।’’

আজ থেকে এত বছর আগে, জাতপাত না ভেবে একজন জেলেনির নাোংরা পরিষ্কার করায় যে কতখানি বুকের পাটা ছিল, আজ তা ভাবলে অবাক হতে হয়।