সব মিলিয়ে ৪৫ লক্ষ শিশু! ইউনিসেফ জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের (Ukraine War) প্রায় ২০লক্ষ শিশু মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ঘরছাড়া হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে আরও ২৫ লক্ষ শিশু। সরকারি হিসাবে, যুদ্ধের আগে ইউক্রেনে শিশুদের মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৫ লক্ষ। যুদ্ধের সময়ের মধ্যে গোটা দেশের অর্ধেকের অনেক বেশি শিশু বাড়িছাড়া (Homeless Child)! সংখ্যাটা  রোজই বাড়ছে। ক্রমশই শিশুশূন্য হয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন (Ukraine War)। বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। বাড়ি, স্কুল, অনাথ আশ্রম এমনকি হাসপাতালে বোমাবর্ষণে অসংখ্য শিশু চিরতরে পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। অগুনতি শিশু নিহত।

যারা বেঁচে রয়েছে, সেই শিশু ও তাদের পরিবারের ঠাঁই হয়েছে ভূগর্ভস্থ সাবওয়েগুলিতে। কী ভাবে দিন কাটছে তাদের— সেই ভয়াবহ ছবি নিয়মিত ভাবে সামনে আসছে। শুধু খারকিভ শহরের পাতাল রেল স্টেশনগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১৫০০ শিশু ও তাদের মায়েরা।

একটি ছোট গাড়ির কামরায় বসে আছেন লিউডমিলা ভোলোশেঙ্কো ও তাঁর ১০ বছর বয়সি মেয়ে সোনিয়া। ভোলোশেঙ্কো মেয়ের চুল বেঁধে দিচ্ছেন। সোনিয়ার মুখ পাংশু ,ভয়ার্ত (Child Trauma)। “আজ, আমার মা আর আমি কিছু জিনিস নিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম, খুব ভয় করছিল আমার”— বলছে ছোট্ট মেয়েটি। সংবাদ মাধ্যমে মেয়েটির কথা সামনে এসেছে। রোজই সোনিয়ার মতো লক্ষ লক্ষ শিশুকে মূল্য দিতে হচ্ছে এই যুদ্ধের।  অস্ত্রের লড়াই তাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে শিক্ষা , নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ, মুখের হাসি। কেউ জানে না কখন, কোন পথ দিয়ে মৃত্যু আছড়ে পড়বে। 

ইউক্রেনের (Ukraine War) শিল্পী সাশা মাকোভি, তাঁর ছোট্ট মেয়ে ভেরার পিঠে পরিবারের সমস্ত বিবরণ লিখে রেখেছেন। একজন মা আশঙ্কা করেছেন, যদি তাঁর মৃত্যু হয় , শিশুটি যদি অনাথ হয়। যদি তাঁর শিশুকে শরণার্থী (Homeless Child) হিসেবে কোনও দেশ গ্রহণ করে, অন্তত পরিচয়টুকু তো থাকবে!

যুদ্ধের গোলাগুলি বিমান হানার পরেও ইউক্রেনের এই শিশুরা যদি বেঁচে থাকে— কী হবে তাদের ভবিষৎ?  সে দেশের ‘এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজ’-এর ডিরেক্টর সেরহি লুকাশভ লিখছেন, “এই যুদ্ধ ভবিষতে একটি মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত প্রজম্ম তৈরি করবে।” কারণ কি? ধরুন, কোনও একটি রৌদ্রজ্জ্বল দিনে শিশুরা খেলা করছিল মাঠে। কিংবা পাড়ার গলিতে। সেই সময় খবর এল, যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যুদ্ধ জিনিসটা ঠিক কী, সে তখন বুঝতে পারেনি। তারপর ঘন ঘন গোলাবর্ষণ, বোমাবাজি আতঙ্কিত করে তুললো শিশুদের। প্রথম প্রতিক্রিয়া, পালাতে হবে। নিজের বাড়িতে? না সেটাও তো নিরাপদ নয়। তাহলে কোথায়? কোন জগতে? শিশু মস্তিষ্ক বুঝতে পারছে না কিছু। চারদিকে পোড়া গন্ধ। ওই তো পুড়ে যাচ্ছে আলেক্সের বাড়ি। কিন্তু আলেক্স কোথায়?  চারিদিকে  পোড়া লাশের স্তূপ, একজন লোকের হাত-পা বাঁধা, মাথায় বুলেটের ছিদ্র…। আজ এমনই সব দৃশ্য চোখের সামনে দেখছে ইউক্রেনের শিশুরা।  মস্তিষ্কে গাঁথা হয়ে যাচ্ছে সেই ছবি। যুদ্ধের ভয়বহতা তাদের মধ্যে তৈরি করছে ট্রমা (Child Trauma)— এটেনশন ডেফিসিট  হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে স্নায়ুতন্ত্রের সব নিয়মগুলি।