(আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। লিখেছেন সঞ্জয় গুপ্ত।)

বছরকার বেশ কয়েকটা দিন, জাতিসঙ্ঘ দাগিয়ে রাখে বিশেষ কিছু তকমা লাগিয়ে। আজ হচ্ছে World Population Day. ইকনমিক্স বলে একটি বিষয়, স্নাতক হওয়ার সময় পাঠ্যসূচির মধ্যে ছিল। পড়াশুনা তখন বেশ সহজ ছিল। কমন প্রশ্নের যুগ সেটা। একটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে। ভারতের “ইকনোমিক গ্রোথ এন্ড পপুলেশন”।

প্রতিটি মানুষ “একটি মুখ কিন্তু দুইটি হাত” নিয়ে জন্মায়, এধরনের তাত্ত্বিক কথাবার্তায় কোনওদিনই বিশ্বাস ছিল না বলে, মন খুলে লিখে দিতাম জনসংখ্যার বিস্ফোরণই মূল কারণ।
মন খুলেই, তিন চার পাতা জুড়ে, জনসংখ্যা বাড়ার কারণ সমন্ধেও পরীক্ষক মশাইকে জ্ঞান দিতাম। কারণ হচ্ছে, একদিকে অশিক্ষা অন্যদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি। উত্তরণের পথ নিয়েও তিন চারটে পথ নির্দেশিকা দিতে ভুলতাম না।
ছেলেদের বাদ দিয়ে, মেয়েদের শিক্ষা খাতে ভয়ঙ্কর রকম ব্যয় বাড়ানো, চাকরি টাকরি দিয়ে ব্যস্ত করিয়ে দেয়া আর অন্যদিকে নগদ ক্যাশ দিয়ে, ছেলে মেয়েদের উৎসাহিত করার টোটকা । যত বয়েস কম হবে, তত বেশি টাকা জন্মনিয়ন্ত্রণের ছুরির নীচে নিজেকে নিয়ে এলে । ব্যাপারটা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে …
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে, এ দেশে চাইনিজ খাবার ছাড়া, চাইনিজ জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নেওয়াটাও দরকার , এ ব্যাপারে আমার সুচিন্তিত অভিমত পেয়ে , পরীক্ষার খাতা যিনি দেখতেন, তিনি যে যথেষ্ট ইম্প্রেসেড হতেন, সেটা মার্কস পেয়ে বোঝা যেতো।
এসব প্রশ্ন এখন বোধহয় আর আসে না। কাউকেই এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে, লিখতে দেখি না। রাজনৈতিক ভাষণও শুনি না।
অথচ, সমস্যাটি বোধকরি রয়েছে।
যতই ওভারব্রিজ হোক, রাস্তা চওড়া হোক, চাকরির সুযোগ বাড়ুক, মিড ডে মিল আসুক, কোয়ালিটি অফ লাইফ , আপামর জন সাধারণের খুব একটা বাড়বে না। বাড়বে না, কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির তালের সঙ্গে উন্নয়নের তাল মেলানো, ভারতে … শুধু ভারত কেন, অধিকাংশ দেশেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে
আট বছরের একটি বাচ্চা, তার দু বছরের ছোট ভাইয়ের মৃতদেহ কোলে করে বসে রয়েছে রাস্তায়। এই দৃশ্য কাগজের দৌলতে পুরো ভারতবর্ষের মন খারাপ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
এরকম ছবি দেখলে, সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা মনে পড়ে।
“এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ।
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
কিন্তু কত জঞ্জাল সরাবেন আপনি? একবার ভাবুন তো সেই, জন্মদাতা পরিবারটির কথা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব থাকে নিশ্চয়ই। কিন্তু পরিবার পিছু সদস্য সংখ্যার উপর নিয়ন্ত্রণ যদি না করা যায়, তাহলে একটি পরিবারের কত জন সদস্যদের মুফত নাগরিক সুবিধা প্রদান করতে পারে রাষ্ট্র?

নাসবন্দি ব্যাপারটা নিয়ে , ভারতে সিরিয়াসলি কিছু করার কথা, চেষ্টা বোধহয় সঞ্জয় গান্ধী করে দেখেছিলেন। প্রচুর জোর জুলুম করেছেন। খুব বদনাম কামিয়েছেন। ইলেকশন হারার অন্যতম কারণ সেটাও ছিল।
তারপর থেকে , জোর জবরদস্তির পথ সরকার আর নেয়ার চেষ্টা করেনি। অন্য পথ দেখেছে।
জনসংখ্যা অবশ্য কমেনি । কোন কিছুই,” বাবারে… “সোনা মারে” বলে করাতে চাইলে হয় না।
আজ পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। বিয়ের বয়েস ১৮ আর ২১ জানিয়ে। বাদবাকি জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপায় জানিয়ে। আর এক কোনায় রয়েছে, কেউ যদি Non- scalpel Vasectomy (NSV without surgery) অথবা Laparoscopic Sterilization (LS) Minilap, Post Partum Sterilization ( PPS) করেন— তাহলে, যথাক্রমে ৩০০০ কিংবা ২০০০ টাকা দেওয়া হবে। অপারেশনগুলোর খটমট নামগুলো ইংরেজিতেই লিখলাম, বুঝতে না পেরে। মনে হয়, যাদের টার্গেট করে লেখা, তারাও বুঝতে পারবে না। কিন্তু যে জিনিসটা বুঝতে পারতো, অর্থাৎ আর্থিক কম্পেনসেসন, সেটা নিতান্তই কম। ওই টাকায় আজকের দিনে কেউ কি উৎসাহী হবে?
অথচ আজকের দিনে, জনসংখ্যাই হওয়া উচিত বিশ্বের, অনেকগুলো দেশের অন্যতম বড় সমস্যা। সেটাকে ট্যাকেল করা…
কিন্তু এসব কথা কেই বা শুনছে, আর কেনই বা শুনবে?