জুলিয়াস সিজার একবার বন্ধুদের সঙ্গে সান্ধ্য-ভোজে বসেছেন। সেখানে এ-কথা সে-কথার পর কথা উঠল, কোনধরনের মৃত্যু সবচাইতে ভালো মৃত্যু? এর উত্তরে অন্যরা কেউ কিছু বলার আগেই জুলিয়াস সিজার উত্তর দিলেন, ‘হঠাৎ মৃত্যু।’

 পরদিন এক আততায়ীর হাতে জুলিয়াস সিজারের  মৃত্যু হয়।

পারস্য দেশ থেকে বিতারিত হয়ে সূর্য উপাসক পারসীরা পালিয়ে গুজরাতের সঞ্জনন নামের এক জায়গায় প্রবেশ করেন। তাঁরা রাজা জরি রানাকে অনুরোধ করেন যাতে শরনার্থী হিসেবে তাঁদের সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়। জরি রানার ইচ্ছে ছিল না তাঁদের সেখানে থাকতে দেবার। তিনি মুখে কিছু না-বলে একটি কলসে দুধ ঢেলে কলসটাকে কানায় কানায় ভর্তি করেদেন যাতে আর একবিন্দুও দুধ তাতে ঢালা না-যায়। তারপর কলসটা তাঁদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এর দ্বারা তিনি বুঝিয়েছিলেন যে তাঁর রাজ্যে তাঁদের থাকতে দেবার মতো এক-কণাও জায়গা নেই। এর প্রত্যুত্তরে পারসীরা কলসের দুধে সামান্য চিনি মিশিয়ে দিয়ে কলসটা আবার রাজার কাছে ফেরত পাঠান। রাজ রানা বুঝতে পারলেন যে দুধ যতই না-কেন কলসের কানায় কানায় ভরা থাকুক, সামান্য চিনি নেবার ক্ষমতা কলসের আছে। তা ছাড়া চিনি মেশানোতে দুধের স্বাদও খানিকটা বাড়িয়ে দেবে। তেমনি পারসীরাও চিনির মতো করে এখানে থাকতে পারবেন এবং থাকতে পারলে রাজার নাগরিকদের মধ্যে বৈচিত্র বাড়বে। পারসীদের উপস্থিত বুদ্ধিতে মুগ্ধ হয়ে রাজা জরি তাঁদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হন।

জুলিয়াস সিজারের হত্যা

খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে মেসিডোনিয়ার এক রাজা ছিলেন হেরোল্ড আর্কিলউস। তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষৌরকার ছিল খুব বাচাল। সবসময় তার মুখে কথার খৈ ফুটত। একবার রাজার চুল কাটতে গিয়ে সে রাজাকে জিগগেস করেছিল, ‘আপনি কেমন চুল কাটা পছন্দ করেন?’ রাজা বলেন, ‘নীরবে।’

রাজা অগাস্টাস চরিত্রহীনতার অপরাধে তাঁর এক কর্মচারীকে কাজ থেকে বরখাস্ত করেন। বরখাস্ত করায় সেই কর্মচারী এসে তাঁর পায়ে পড়ে, ‘প্রভু, এ আপনি কী করলেন? আমার এখন কী হবে? আমি আমার বাবাকে গিয়ে কী বলব? আমাকে ক্ষমা করে দিন, প্রভু!’ সম্রাট অগাস্টাস বললেন, ‘তুমি বাড়ি গিয়ে তোমার বাবাকে বলো যে তোমার মালিককে তোমার পছন্দ হয়নি তাই কাজ ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছ।’

রাজা অগাস্টাসের রাজ্যাভিষেক

চৌদ্দ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে উইলিয়াম ব্ল্যাক গিয়েছিলেন সেকালের বিখ্যাত খোদাই শিল্পী উইলিয়াম রাইলেণ্ডের কাছে। ব্ল্যাক ঘুরে ঘুরে পুরো স্টুডিওটা ভালো করে দেখলেন। খুবই সুন্দর। তাঁর ভালো লেগেছে। বাবা তাঁকে রাইলেণ্ডের হাতে তুলে দিয়ে যাবার কথা ভাবলেন। কিন্তু ব্ল্যাক কোনো অবস্থাতেই সেখানে থাকতে রাজি হলেন না। তার কারণ রাইলেণ্ডের মুখটা তাঁর আদৌ পছন্দ হয়নি। তাঁর কেবলই মন হচ্ছিল যে এই লোকটা বেঁচে আছে ফাঁসিকাঠে ঝোলার জন্য। রাইলেণ্ড সে সময় অত্যন্ত মান্যগন্য, বিখ্যাত ও অবস্থাপন্ন শিল্পী ছিলেন। ফলে, স্বভাবতই, ব্ল্যাকের কথায় কেউ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু বাবা ছেলের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। তার কিছুদিন পর আর একজন নাতিখ্যাত খোদাই শিল্পী জেমস বেসায়ারের হাতে ছেলের দায়িত্ব তুলে দেন। তার বছর কয়েক পর দেখা গেল উইলিয়াম রাইলেণ্ড দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রতারণামূলক কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি ধরা পড়েন। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।

গত শতকের বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেত্রী এথেল বেরিমোর সৌজন্য-ভদ্রতায় অতুলনীয়া ছিলেন। তাঁর আদব-কায়দা ও আচার-আচরণও ছিল ত্রুটিহীন। শুধু তা-ই নয়,তিনি নিজেও অন্যদের কাছ থেকে অনুরূপ আচরণ প্রত্যাশা করতেন। একবার তিনি অল্পবয়স্কা জনৈকা অভিনেত্রীকে ডিনারে নিমন্ত্রণ করে উধাও হয়ে যান। কিন্তু পরে এজন্য তিনি সেই অভিনেত্রীর কাছে না দুঃখ প্রকাশ করেন না মার্জনা চান। পরের সপ্তাহে তিনি নিউইয়র্কের  গ্যালেরি অব্ মডার্ন আর্ট-এ প্রদর্শনী দেখছিলেন। তখন সেখানে তিনি মুখোমুখি হন সেই অল্পবয়স্কা নবীন অভিনেত্রীর। তিনি তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সম্ভবত আমি গত বৃহস্পতিবারে আপনার বাড়িতে ডিনারে নিমন্ত্রিত ছিলাম?’

   ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ,’ এথেল বেরিমোর বললেন, ‘তা… তুমি খেয়েছিলে তো?’

স্মরণীয় ফরাসী ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগো তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘লা মিজারেবলস্’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি জনৈক প্রকাশকের কাছে পাঠিয়েছিলেন পড়ে দেখার জন্য। পরে তিনি মতামত চেয়ে একটি চিরকূট পাঠালেন যেখানে শুধু ছিল একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন :‘?’। তার উত্তরে প্রকাশক লিখে পাঠালেন কেবল একটি বিস্ময়বোধক চিহ্ন : ‘!’।

  মহাবীর আলেকজান্ডার এশিয়া মাইনরের দিকে অভিযান চালাবার সময় একবার এক শক্ত অসুখে আক্রান্ত হয়েছিলেন।তাঁর সঙ্গে যে চিকিৎসকরা ছিলেন তাঁরা তাঁর চিকিৎসা করতে অসম্মতি জানান এই বলে যে কোনো কারণে তাঁরা অসফল হলে মেসিডোনিয়ার সেনাবাহিনী সন্দেহ করবে। ভাবতে পারে, তাঁদের অবহেলার জন্য আলেকজাণ্ডার ভালো হননি। এরকম এক পরিস্থিতিতে ফিলিপ দা আরকানেনিয়া এগিয়ে আসেন চিকিৎসা করাতে। তিনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন আর রাজার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। রাজাও তাঁর প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। ডাক্তার ফিলিপ ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর যখন ওষুধ প্রস্তুত করায় ব্যস্ত ছিলেন তখন আলেকজান্ডার তাঁর এক শত্রুর কাছ থেকে চিঠি পেলেন। তাতে লেখা :ফিলিপ পারস্য দেশের রাজার কাছ থেকে ঘুস খেয়ে ওষুধে বিষ মিশিয়ে  তাঁকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছেন। আলেকজান্ডার কোনো ধরনের বিস্ময় বা উত্তেজনা প্রকাশ না-করে চিঠিখানা বালিশের তলায় রেখে দিলেন। একটু পরে এলেন ডাক্তার ফিলিপ, হাতে ওষুধের কাপ। আলেকজান্ডার এক হাত বাড়িয়ে কাপটা নিলেন আর অন্যহাত দিয়ে বালিশের তলা থেকে চিঠিখানা বের করে এগিয়ে দিলেন চিকিৎসকের দিকে। ডাক্তার ফিলিপ যখন চিঠিটা পড়ছিলেন তখন আলেকজান্ডার ওষুধটা খেয়ে শেষ করেন। সঙ্গে সঙ্গে অপবাদে রুষ্ট ও আতঙ্কিত হয়ে ডাক্তার ফিলিপ আলেকজাণ্ডারের বিছানার পাশে বসে পড়লেন। আলেকজাণ্ডার তখন তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, ‘ভয় নেই, ওষুধটা আমি ইতিমধ্যে খেয়ে ফেলেছি এবং আপনার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।’

 ঠিক তিন দিনের মাথায় আলেকজান্ডার সুস্থ হয়ে ওঠেন।

আলেকজান্ডার শয্যাশায়ী

  রোমের এক সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যক্তির মৃত্যু হলে পর দেখা গেল যে তিনি বিপুল পরিমাণের ঋণের বোঝা রেখে গেছেন। কথাটা তিনি আগে কাউকে জানাননি। তাঁর সম্পত্তি নিলামে উঠল। প্রথম রোমান সম্রাট তাঁর হয়ে নিলামে যোগ দিতে যাওয়া প্রতিনিধিকে বলে দিলেন, ‘ভদ্রলোকের বালিশ দুটো কিনবে। যত দামই উঠুক না-কেন, বালিশ দুটো ছেড়ো না।’এই অদ্ভুত কথা শুনে উপস্থিত সবাই বিস্মিত হল। সম্রাট তখন সবাইকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘বালিশ দুটো নিশ্চয় ঘুমের জন্য অনুকূল যার দরুন সেই বালিশের মালিক এত ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিব্যি আরামে ঘুমোতে পারতেন।’

  উনিশ শতকের সুইজারল্যন্ডের রাজা সাভোজা একবার এক সভায় তাঁর মন্ত্রী-আমলাদের ডেকে কিছু কথাবার্তা বলার পর হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্যামুয়েল হিন্ড ছাড়া আর সবাইকে  সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। সবাই বেরিয়ে যাবার পর রাজা বললেন, ‘ডাক্তার, আমি চললাম।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিছু বুঝতে না-পেরে জিগগেস করলেন, ‘আপনি কোথায় যাবার কথা বলছেন?’ রাজা তাঁর ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে হাত দিয়ে বিদায় নেবার ভঙ্গী করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।