মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ভারতে চিকিৎসার সেরা প্রতিষ্ঠান এইমসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তারপর ডাক্তারি ছেড়ে ২২ বছর বয়সেই আইএএস। কিছু সময় কাটতে না কাটতেই দেশের যুব সমাজের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সেই সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি নেমে পড়েছেন ব্যবসায়। আর আজ, ভারতে শিক্ষা প্রসারের জগতে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে সামনে এসে পড়েছেন। বানিয়ে ফেলেছেন ২৬০০০ কোটি টাকার কোম্পানি।
আসুন, পরিচয় করিয়ে দিই। ভারতের এই সফলতম যুবকের নাম রোমান সাইনি। মগজাস্ত্রের ধার দেখিয়ে দেশের প্রেস্টিজিয়াস চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এ রোমান জায়গা করে নিয়েছিলেন ১৬ বছর বয়সেই। আর এজন্য নিজের মা-কেই কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন রোমান। তাঁর কথায়, ‘‘মা যদি আমাকে কম বয়সে স্কুলে ভর্তি না করতেন, তা হলে এত কম বয়সে এইমসে পড়তে যাওয়া সম্ভব হতো না। কারণ, ১৬ বছর বয়সেই আমি বারো ক্লাসের পরীক্ষা শেষ করতে পেরেছিলাম।’’
এমইসের মতো প্রতিষ্ঠানে নিজেকে শিক্ষিত করে নিয়েছেন রোমান সাইনি। তবে সেখানেই আটকে থাকেননি তিনি। ডাক্তার হিসেবে ছয় মাস কাজ করার পরই বসেছেন ইউপিএসসি-র পরীক্ষায়। আর ২২ বছর বয়সেই দেশের কঠিনতম এই পরীক্ষায় উতরে যান তিনি। নাম লেখান ভারতের নবীন আইএএস অফিসারদের দলে।
আইএএস রোমান যোগ দিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশ সরকারের কাজে, জেলা শাসকের ভূমিকায়। কিন্তু কিছু সময় পর সেই কাজও ছেড়ে দেন তিনি। চালু করেন নতুন কোম্পানি— unacademy, আর সেই প্রতিষ্ঠান গড়তে বন্ধু গৌরব মুঞ্জালকে সহযোগী হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। রোমানের প্রতিষ্ঠান এখন দেশে আইএএস হতে চাওয়া হাজারো যুবক-যুবতীকে সহযোগিতা করে থাকে।
আদতে রাজস্থানের বাসিন্দা রোমানের বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার, তাঁর ভাই ও বোন ডাক্তার। তবে রোমান শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছেন অন্য পেশাকে।
একদিন এইমসে চিকিৎসার কাজ সেরে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। ঘুম থেকে উঠে দেখেন, মোবাইলে তিনশোটিরও বেশি মিসড কল। বুঝতে পারেন, কিছু একটা ঘটেছে। রোমান জানতে পারেন, আইএএসের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। আর এরপর থেকেই ইউটিউবে ভিডিও করতে শুরু করেন রোমান। শহরের বাইরে থাকা পড়ুয়াদের ইউপিএসসি পরীক্ষার বিষয়ে জানাতে তাঁর ভিডিওগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। পরে শুরু হয় unacademy-র ওয়েবসাইট। বিভিন্ন ধরেনের পরীক্ষাগুলি সম্পর্কে পড়ুয়াদের তথ্য দিতে শুরু করেন রোমান। এরপর কোম্পানি প্রতিষ্ঠা আর এগিয়ে চলা নতুন ভাবে।যে দেশে চিকিৎসক কিংবা আইএএস হবার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার চল, সেখানে নিজেকে অন্য রাস্তায় নিয়ে গেলেন কেন রোমান সাইনি? তাঁর কথায়, ‘‘এই দু’টো ক্ষেত্রেই শুধু কাজ করার সুযোগ আছে, ব্যাপারটা তেমন নয়। আজকের পড়ুয়াদের সঙ্গে যখন কথা বলি, দেখি কেউই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় না। অনেকেই ইউটিউবার হতে চায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাপ রাখতে চায়, কেউ আবার শিক্ষা জগতে থেকে যেতে চায়…।’’
ভারতের পড়ুয়ারা কি নিজেদের কেরিয়ার গড়ার প্রশ্নে বদলাচ্ছে? চালু ধ্যানধারণাগুলিকে পাল্টে ফেলতে চাইছে তারা? বেঙ্গালুরুতে বসে সম্ভাবনার সেই জগৎকেই উস্কে দিতে কাজ করে চলেছেন রোমান সাইনি। আর এই কাজে তাঁর মন্ত্র সেই বিখ্যাত উক্তি— ভুল আর ব্যর্থতার পথ পেরিয়ে না এলে কোনও কাজেই সফল হওয়া যায় না।