(প্রেসিডেন্সির অধ্যাপক ওটেন সাহেবের নিগ্রহের ঘটনায় সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ওই কলেজেরই ছাত্র অনঙ্গমোহন দাম। বিভিন্ন তথ্য ও বয়ানে স্পষ্ট— নেতাজি নন, অধ্যাপক নিগ্রহে মূল ভূমিকা ছিল অনঙ্গমোহনেরই। ওই ঘটনার জেরে আত্মগোপন, ছয় বছরের জেল। তারপর বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অনঙ্গমোহন। গণপরিষদের সদস্যও হয়েছিলেন তিনি। সিলেটের আদি বাসিন্দা এই মানুষটি দেশভাগের কয়েকবছর পর থেকে দীর্ঘ সময় উত্তর ২৪ পরগনার উদ্বাস্তু নগরী অশোকনগরে বসবাস করেছেন। ইতিহাসের ধুলো উড়িয়ে উপেক্ষিত বিপ্লবীর জীবনের বিভিন্ন দিককে তুলে ধরেছেন সাংবাদিক সুকুমার মিত্র।)
প্রেসিডেন্সি কলেজে সুভাষচন্দ্র বসু তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই সময়েই কলেজের অধ্যাপক ওটেন সাহেবকে নিগ্রহের অভিযোগে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল তাঁকে। তবে সুভাষ একা নন, একই সঙ্গে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন আরও একজন, প্রেসিডেন্সির ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্র, সুভাষের অগ্রজ বিপ্লবী অনঙ্গমোহন দাম । ওটেন সাহেবের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। তবে সুভাষ নন, দেশের অপমানের জবাব দিতে সেদিন ওই শিক্ষককে নিগ্রহ করেছিলেন অনঙ্গমোহনই। পরবর্তীতে যিনি উদ্বাস্তুনগরী অশোকনগরে এসে দীর্ঘ সময় স্থায়ী ভাবে বসবাস করেছিলেন। অশোকনগরের নাগরিক জীবনের শুরুর পর্বে এই বিপ্লবী মানুষটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নিয়েছিলেন। তবে অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনঙ্গমোহনের অবদান কার্যত উপেক্ষিত। তাঁকে পুরোপুরি ভুলে গিয়েছে আজকের অশোকনগর। এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা জানেনই না প্রেসিডেন্সি কলেজে সেদিনের ঘটনায় অনঙ্গমোহন দামের ভূমিকা। এমনকি, তিনি যে অশোকনগরে দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন, সেকথাও জানেন না কেউ।
অথচ ওটেনকে যে অনঙ্গমোহনই মেরেছিলেন, তা সুভাষচন্দ্র বসু একসময় নিজেই জানিয়েছিলেন। জেল জীবনের সঙ্গী নরেন্দ্রমোহন চক্রবর্তীকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওই গন্ডগোলের সৎকর্মটি যে কে করেছিল ঠিক বুঝতে পারিনি। মনে হয়, ওই বাঙালটাই (অনঙ্গমোহন দাম) মেরেছিল।’’ পরে আর এক সহপাঠী স্বামী ওঁকারানন্দও বলেন, মারটা তো দেন অনঙ্গমোহন দাম। ওই দিনের ঘটনায় বিপিন দে নামে প্রেসিডেন্সির আর এক ছাত্র ওটেনকে মারেন। সুভাষচন্দ্র বসুর নাম প্রচার হলেও সেদিনের ঘটনায় বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্সির ছাত্র যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা পরবর্তীকালে প্রকাশ্যে আসে।
প্রেসিডেন্সির ঘটনা নিয়ে অনেক পরে ওটেন সাহেব বলেন, তিনি ওই সময় সুভাষকে দেখেননি। যদিও তিনি জানতেন, সুভাষ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র বংশীলাল নামে এক বেয়ারার সাক্ষীর ভিত্তিতে সুভাষ ও অনঙ্গমোহনকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সুভাষ নিজেও এই ঘটনার দায় অস্বীকার করেননি। তিনি লিখেছেন— মিস্টার ওটেন… ওয়াজ় বিটেন ব্ল্যাক অ্যান্ড ব্লু। অনঙ্গমোহন স্বয়ং লিখেছেন, ‘‘ওটেন পড়ে গেলে আমি ও বিপিন দে তাঁকে দু-চার ঘা দিই। ওই মারামারিতে সুভাষ ছিল না।’’ নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘নেতাজি সঙ্গ ও প্রসঙ্গ’ বইটিতেও এই বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। নেতাজির আর এক সহপাঠী প্রমথনাথ সরকার লিখেছেন, ‘‘তখন তিনটে কি চারটে বাজে, শেষ পিরিয়ডের শেষে ওটেন সাহেব সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন। তখন হিন্দু হস্টেলের কয়েকজন বাছা বাছা ছেলে, যাঁরা পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছিল, তাঁরাই মেরেছিল।’’ সুভাষচন্দ্রও এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, ওই দিন সন্ধ্যায় ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ নিগ্রহের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের নামের তালিকা তৈরি করে ওটেনকে দেয়, তাতে তাঁর নাম অন্যদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ওটেন সাহেবের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাটি প্রেসিডেন্সির বারান্দায় নয়, সিঁড়িতে ঘটেছিল। বিপ্লবী অনঙ্গমোহন দাম, বিপিন দে, সুভাষচন্দ্র বসুদের হাতে ওটেন সাহেবের নিগ্রহের ঘটনায় এতটাই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নীরব থাকতে পারেননি। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘একজন শিক্ষককে ছাত্র নিগ্রহ করছে— এর থেকে হীন অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। তবে ছাত্রের মাতৃভূমি নিয়ে অপমানজনক কোনও মন্তব্য শিক্ষকরলে তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে।’’
ওটেনকে নিগ্রহের ঘটনায় সুভাষচন্দ্র বসুর নামই ছড়িয়ে পড়ে। আর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর দীর্ঘদিন বিপ্লবী অনঙ্গমোহন কারান্তরালে চলে যান। সেই সময় কলকাতায় একটি বইয়ের দোকান ছিল অনঙ্গমোহনদের। বইপত্র বিক্রি ও পড়াশুনা দু’টোই চলতো। ভিড় করতেন প্রেসিডেন্সি ও কলকাতার ডাক্তারি পড়ুয়ারা। দোকানটিকে ঘিরে বিপ্লবী কাজকর্ম চলতো। প্রেসিডেন্সির ঘটনার পর সেই দোকান থেকেই গ্রেফতার করা হয় অনঙ্গমোহনকে। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে, পরে পাঠানো হয় আসামের জেলে। জমিদার পরিবারের পুত্র অনঙ্গমোহনকে জেল থেকে সরিয়ে গৃহবন্দি করে রাখার আপিল করা হয়। প্রায় ছয় বছরের জেলজীবনের শেষ পর্বে গৃহবন্দি রাখা হয়েছিল অনঙ্গমোহনকে। জেল থেকে ছাড়া পাবার পর অনঙ্গমোহনকে বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে পরিবার। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দেন, দেশের স্বাধীনতার লড়াই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড়, ভারত ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার কোনও ইচ্ছেই তাঁর নেই। গান্ধীজির ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে পূর্বভারতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অনঙ্গমোহন দাম। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তখন জেলে। ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় অনঙ্গমোহনের ভূমিকাকে তুলে ধরে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, ‘হু ইজ দ্য ম্যান বিহাইন্ড…।’
স্বাধীনতা ও দেশভাগ অনিবার্য হয়ে পড়লে দেশবাসীর সামনে আসে ব্রিটিশ ভারতে গঠিত গণপরিষদ। ১৯৪৬ সালে গণপরিষদের সদস্য হন অনঙ্গমোহন দাম। স্বাধীনতার সময়ে রেডক্লিফ রেখায় বিভাজিত হয়ে যায় ভারত। জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র, পাকিস্তান। সেই রেডক্লিফ রেখার ফর্মুলায় সিলেটের থাকার কথা ভারতের সঙ্গে। কিন্তু কাছাড়ের কিছু অংশ ও শিলচর বাদে গোটা সিলেট (পূর্বতন শ্রীহট্ট) চলে গেল পাকিস্তানে। প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন বিপ্লবী অনঙ্গমোহন। সিলেটে গণভোট করার বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। বরং প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সিলেট-কাছাড় ও ত্রিপুরার সমতল এলাকায় বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলি নিয়ে পৃথক পূর্বাচল রাজ্য গড়ে তোলা হোক। এই বিষয়ে গান্ধীজি-সহ কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দৃষ্টিআর্কষণ করেন তিনি। অনঙ্গমোহন দামের বড় ছেলে আশিস দাম জানান, গান্ধীজিও চাননি সিলেট পাকিস্তানে যাক। তবে সেদিন অনঙ্গমোহনের প্রতিবাদ ও প্রস্তাব স্বাধীনতা ও দেশভাগের ডামাডোলের মধ্যে হারিয়ে যায়। বিভাজনের আন্তর্জাতিক বোঝাপড়া রেডক্লিফ রেখাতেও চিড় ধরে। গণভোটে সিলেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয়। সিলেট, আসাম থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তানে যায়। তবে সিলেটের করিমগঞ্জের কিছু থানা ও আশপাশের অধিকাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। সিলেটে ১৯৪৭-এর ৬ ও ৭ জুলাই গণভোট হয়েছিল। গণভোট হয় এই প্রশ্নে— সিলেট ভারতের সাথে যুক্ত হবে নাকি পূর্ব বঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন দেশ পাকিস্তানে যোগ দেবে। সেটা ইতিহাসের অন্য এক অধ্যায়।
তবে দেশভাগের পর ভারতেই থেকে যান অনঙ্গমোহন দাম। তাঁর ছেলে আশিসবাবু বলেন, “কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোডের একটা বাড়িতে বাবা থাকতেন। দেশভাগের পর, ১৯৪৮ সালে শান্তাদি, আমি, এক কাকা, কাকিমা সেই বাড়িতে চলে আসি। কিছু দিন পর আর এক কাকা ও কাকিমা কলকাতায় আসেন। সেই সময় লোয়ার সার্কুলার রোডের বাড়ি ছেড়ে বাবা আমাদের পার্ক সার্কাসের একটা বাড়িতে নিয়ে যান। ১৯৫৪ সাল থেকে উত্তর ২৪ পরগণার উদ্বাস্তুনগরী অশোকনগরে বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলের বিপরীতে বহু বছর বাবা ও আমরা বসবাস করেছি। সেখান থেকে বাবার সঙ্গে আমরা চলে আসি সোদপুরে গভর্ণমেন্ট হাউসিং এস্টেটে।” আশিসবাবু জানান, অনঙ্গমোহন দাম কলকাতা মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। সেখানে বিপ্লবী কিরণশঙ্কর রায়ও (যাঁর নামে পরে বিবাদী বাগ এলাকায় কিরণশঙ্কর রায় রোড নামকরণ হয়) পড়াতেন। এক সময় প্রেসিডেন্সি কলেজে নেতাজি ও অনঙ্গমোহনের মূর্তি স্থাপনের বিষয় আলোচনা হলেও তা কার্যকরী হয়নি।
১০ ডিসেম্বর, ১৮৯০ সিলেটের মৌলবীবাজার এলাকার সতেরসতী পরগণার সাধোয়াটির জমিদার পরিবারে জন্ম অনঙ্গমোহনের। তবে তাঁর জন্মের সাল নিয়ে মতান্তর রয়েছে। অনঙ্গমোহন দামের বড় ছেলে আশিস দামের মতে, প্রেসিডেন্সিতে নেতাজির থেকে তিন বছরের উঁচু ক্লাসে পড়তেন তাঁর বাবা। সেই হিসেবে অনঙ্গমোহন দামের জন্ম ১৮৯৩ সালের ১০ ডিসেম্বর— এমনটাই অনুমান করা হয়।
অশোকনগরে থাকাকালীন হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজের প্রতিষ্ঠাতা গর্ভনিং বডির সম্পাদক ছিলেন অনঙ্গমোহন দাম। এলাকার কংগ্রেস নেতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। নেতাজির দাদা শরৎ বসুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। নেতাজির পরিবারের অন্য অনেকের সঙ্গেই কথা হতো। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আজীবন বিপ্লবী অনঙ্গমোহন দাম অশোকনগরে উদ্বাস্তুদের বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক ছিল কেন্দ্রীয় উদ্বাস্তু পুনর্বাসন মন্ত্রী মেহেরচাঁদ খান্নার। মেহেরচাঁদ খান্না ছিলেন অবিভক্ত পাঞ্জাবের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। বয়সে অনঙ্গমোহনের চেয়ে সাত বছরের ছোট। অনঙ্গমোহনের চিঠি পেয়ে দিল্লি থেকে মেহেরচাঁদ চলে আসেন অশোকনগরে। ৮ নম্বর কালীবাড়ি মোড়ে অনঙ্গমোহনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন পাঞ্জাবের এই বিপ্লবী। সেদিন অনঙ্গমোহনের অশোকনগরের বাড়িতে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
অশোকনগরে বসবাস করার সময় গোলবাজারে স্টেটসম্যান পত্রিকার প্রাক্তন কর্মী প্রয়াত জীবনকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের বাড়িতে নিয়মিত ভাবে আসতেন অনঙ্গমোহন নানা বিষয়ে চিঠিপত্র, লেখালেখি টাইপ করাতে। জীবনবাবুর পুত্র কমলেন্দু ভট্টাচার্য সেকথা জানিয়েছেন। আবার অশোকনগরে থেকেও সিলেটের প্রতি মন পড়ে ছিল অনঙ্গমোহনের। যাকে বলে শিকড়ের টান। পাঁচের দশকের শেষের দিকে অশোকনগরের বাসিন্দা বীরেশচন্দ্র দওের কলকাতার ব্রজদুলাল স্ট্রিটের বাড়িতে গিয়েছিলেন অনঙ্গমোহন। সেখানে সিলেটের বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন তিনি। প্রয়াত বীরেশবাবুর ছেলে চয়ন দও একথা জানিয়েছেন।
নেতাজির কথায় ‘বাঙাল’ বিপ্লবী অনঙ্গমোহন দাম যে দীর্ঘসময় অশোকনগরে কাটিয়েছেন, তা নিয়ে এলাকাবাসীর তেমন গর্ববোধ কখনও দেখা যায়নি। স্থানীয় ইতিহাসেও উল্লেখ নেই তাঁকে নিয়ে। এমনকি অভিযোগ, জনৈক বিমল বক্সী একবার এই বিপ্লবীকে হেনস্থা করেছিলেন। সেই ঘটনা প্রশাসনের উঁচু মহলে জানাজানি হওয়ায় রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা ছুটে এসেছিলেন। প্রতিবাদ সভাও হয়েছিল। ৬ জানুয়ারি, ১৯৭৮ সোদপুর গভর্ণমেন্ট হাউসিং এস্টেটে ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হন অনঙ্গমোহন দাম। তাঁর মৃত্যুর পর শ্রীচৈতন্য কলেজে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। স্মরণসভা করে অশোকনগর সংযুক্ত নাগরিক সমিতিও। নাগরিক সমিতির পক্ষে ডাঃ সাধন সেন অনঙ্গমোহনের পরিবারের কাছে শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন। তারপর থেকে অবশ্য এই বিপ্লবীকে আর মনে রাখেনি স্থানীয় মানুষ। ইতিহাসের পাতাতেও উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছেন অনঙ্গমোহন দাম।
[…] […]
দিনটা ছিল ১৫ জানুয়ারি শীতকাল ১৯১৬ সাল হবে। প্রেসিডেন্সি কলেজের শেষ পিরিয়ড করিয়ে আনুমানিক বিকাল চারটে নাগাদ ওটেন স্যার সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন। পথ মধ্যেই কলেজেই ছাত্ররা প্রস্তুত হয়েছিলেন মারবেন। কারণ উনি কথা কথায় বাঙালিদের ব্ল্যাকি ইন্ডিয়ান, কাওয়ার্ড, নেটিভ এ সমস্ত গালিগালাজ করতেন। চূড়ান্ত বর্ণবিদ্বেষী। অসহিষ্ণুকারী। জটলার মধ্যখান থেকে কথা কাটাকাটি হতে হতে মুখচোরা অনঙ্গমোহন দাম সপাটে মুখে বুকে ঘুসি চালিয়ে কেটে পড়েন। সেদিন কিন্তু সুভাষ বোস ওখানে ছিলেন না তবু নাম পড়ে এসে সুভাসের। যেহেতু সুভাষ বরাবর প্রতিবাদ প্রতিবাদ করতেন। কেবলমাত্র এক জন বেয়ারার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত সুভাষ ও অনঙ্গমোহনকে কোনও রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাড়াহুড়ো করে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই হিমালয়সদৃশ ভুলটি সংশোধন করে নিয়ে গভর্নিং বডির এক সভায় এই বহিষ্কার-আদেশটি রদ করা হয়। সেই ঐতিহাসিক সভায় সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক বিশ্বনাথ দাসের।
তিনি অশোকনগরে কংগ্রেস সমর্থক ছিলেন ঠিকই কিন্তু তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনা। সামগ্রিক অশোকনগর গড়ে ওঠার পেছনে উনি ছিলেন না বোধহয়। সম্ভবত ১৯৬২/৬৪ সালে অশোকনগরে প্লট নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। তাও দীর্ঘস্থায়ী নয়।
তথ্যনিষ্ঠ ভালো লেখা
[…] […]