১-৫ বছর বয়সী শিশুদের বাবা মায়েরা প্রায়ই অভিযোগ করে বলেন, তাদের বাচ্চারা খেতে চায় না। আর বাচ্চাদের জোর করে খাওয়ানোর জন্যে নতুন বাবা মায়েরা কত যে নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন করেন, সেটা জানলে অবাক হবেন। কেউ তার একরত্তি মেয়ে খেতে চায়না বলে জিভে লঙ্কা ঘষে দেন তো কেউ আবার খাবার মুখে পুরে দিয়ে নাক চেপে ধরেন! তারপর বমি করলে পিঠে দুমাদুম। এর সাথে বকাঝকা, রাগারাগি তো আছেই।
বাচ্চারা খেতে না চাওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে খাবার নিয়ে অতিরিক্ত জোরাজোরি করা বা ভয় দেখানো। অনেকক্ষণ ধরে বাচ্চাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করার ফলও বেশ খারাপ।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যানেমিয়া, কৃমি সংক্রমণ, হজমের গোলমাল, ফুড অ্যালার্জি, ইটিং ডিসঅর্ডার বা বি ভিটামিনস ও জিংকের অভাব থাকলেও বাচ্চাদের স্বাভাবিক ক্ষিদে কমে যায়।
যেসব বাচ্চাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ফাস্ট ফুড, চকোলেট, দুধ বা ফলের রস খাওয়ানো হয়, তাদের ক্যালরির চাহিদা মিটে যাওয়ায় ভাত, রুটির মতো মুখ্য আহারে আগ্রহ থাকে না।
কেন বাচ্চার সঠিক ডায়েট দরকার?
এই ১-৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের দেহের ওজন ও উচ্চতার পাশাপাশি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মানসিক বিকাশ ঘটতে থাকে। ফলে বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ, আকৃতি, অবস্থা সম্পর্কে তাদের মনে বেশ স্বচ্ছ ধারনা জন্মায় এবং তারা পছন্দ-অপছন্দ বিষয়ে পরিষ্কার মতামত জানাতে পারে। তাই বড়রা যদি এই সময়েই হেলদি ডায়েট সম্পর্কে বাচ্চাদের মনে একটা ধারণা গড়ে দিতে পারেন, তবে তার সুদূরপ্রসারী সুফল পাওয়া যাবে। বাচ্চারা স্বভাবতই অনুকরণ প্রিয় হয়। কাছের প্রিয় মানুষকে অনুকরণ করে করে তারা অনেক কিছুই শিখে যায় বড়দের অজান্তেই। তাই বাচ্চার ফুড হ্যাবিটস ঠিক করতে হলে নিজেদের ডায়েটের ওপরেও নজর দিতে হবে।
বাচ্চাকে খেতে শেখানোর থাম্ব রুল:
১. বাচ্চাকে জোর করে খাওয়াবেন না। ক্ষিদের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতির সাথে পরিচিত হতে দিন।
২. একেবারে বেশি খাবার না দিয়ে বারবার অল্প অল্প করে খাওয়ান।
৩. দিনে ২ টো মেইন মিল, একটা টিফিন আর ২/৩ টে স্ন্যাকস দেওয়ার চেষ্টা করুন।
৪. হেলদি স্ন্যাকস হিসেবে তাজা মরসুমী ফল, বাদাম, শুকনো ফল, ডিম সেদ্ধ ইত্যাদি বেশ ভালো।
৫. বাচ্চার সারাদিনের আহারে দানাশস্য, ডাল, শাকসব্জি, ফল, বাদাম, মাছ/মাংস/ডিম, দুধ/ দুধ জাতীয় খাবার, তেল/ মাখন ইত্যাদি অত্যাবশকীয় ফুডগ্রুপ গুলি থেকে বাছাই করা খাবার থাকা বাঞ্চনীয়।
৬. বাচ্চাকে দিনে ৫০০মিলির বেশি দুধ/ দুধজাতীয় খাবার দেবেন না।
৭. ফলের রসও দিনে ২০০ মিলির বেশি নয়। পারলে গোটা ফল দিন।
৮. বাচ্চার খাবারে অতিরিক্ত নুন চিনি মেশানো চলবে না।
৯. চেষ্টা করুন ২ টো মিলের মাঝে মাঝে জল খাওয়ানোর।
১০.গ্লুটেন অ্যালার্জি থাকলে চলবে না গম/ গম জাতীয় কোনো খাবার।
১১. ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে ভুলেও বাচ্চাদের দুধ/দুধ জাতীয় খাবার দেবেন না- অন্তত ৫ বছর অবধি।
তবে আমন্ড মিল্ক, সয়া মিল্ক, ওটস মিল্ক ইত্যাদি চলতে পারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সাপেক্ষে।
১২. বাচ্চার খাবারে অঙ্কুরিত ছোলা, মুগ, ডালসেদ্ধ, মেটে, শাক, খেজুর, কিসমিস ইত্যাদি থাকলে আয়রনের অভাব হবে না।
১৩. দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখার জন্য রোজের খাবারে আম, তরমুজ, টম্যাটো, পাকা পেঁপে, কুমড়ো, গাজর, পালংশাক ইত্যাদি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
১৪. লেবু ও লেবুজাতীয় ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি, যা দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
১৫. খাবারে জিংক ও বি ভিটামিনের অভাব হলে শিশুর অরুচি, হজমের গোলমাল, পেটভার, ক্ষিদে কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। ডায়েটে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিল, বাদাম, ডিম, মাছ ইত্যাদি রাখা গেলে এই সমস্যা হয় না।
১৬. কোনও পুষ্টিকর খাবার যদি বাচ্চা একবারে খেতে না চায়, তবে ২/৩ দিন পরে আবার অল্প পরিমানে চেষ্টা করে দেখুন। জোর করবেন না।
১৭.খাওয়ার সময় শিশুকে বকাঝকা করবেন না।
১৮. দু তিন বছরের বাচ্চার খাবার হবে প্রাকৃতিক ভাবে রঙিন, আকর্ষক, সুস্বাদু এবং অবশ্যই ফিঙ্গার
বাইট।
১৯. চেষ্টা করুন বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ির সবাই একসাথে খেতে।
২০. খাওয়ার ব্যাপারে কোনও শর্ত আরোপ করবেন না- তা সে শাস্তি বা পুরস্কার যা-ই হোক না কেন।