তৈরি হতে সময় লেগেছিল ২০০০ বছর। কিন্তু শেষ তিন দশক ধরে দ্রুত গলে যাচ্ছে এভারেস্টের সর্বোচ্চ হিমবাহ ।
এভারেস্টের দক্ষিণ কল হিমবাহ—সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৭৯০৬ মিটার (২৫৯৩৮ ফুট ) উপরে অবস্থিত। গত পঁচিশ বছরে এই হিমবাহের থিকনেস কমে গিয়েছে ৫৫মিটারের (১৮০ফুট) মতো। বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল নেচার-এর একটি প্রতিবেদনে এই খবর সামনে এসেছে।
আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সমীক্ষা বলছে, এই হিমবাহ তৈরি হতে ২০০০ বছরের বেশি সময় লেগেছে। কিন্তু উষ্ণায়নের ফলে এই হিমবাহ ৮০ গুণ বেশি গতিতে পাতলা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভলপমেন্ট (ICIMOD) জানিয়েছে, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে এভারেস্ট উল্লেখযোগ্য ভাবে বরফ হারিয়েছে।
নেচারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হিমবাহের দ্রুত গলে যাওয়ার ফলে হিমালয়ের পাদদেশে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের পানীয় ও সেচের জলের সরবারহে অপ্রতুলতা দেখা দেবে। এছাড়াও এভারেস্টে বরফের চাদরে যে ক্ষত সৃষ্টি হবে, তাতে বিপদে পরতে পারেন পর্বতারোহীরা।
এই পরিস্থিতির জন্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং প্রবল বাতাসকে দায়ী করা হয়েছে। এভারেস্টের হিমবাহ নিয়ে যে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে প্রধান গবেষকদের একজন মারিউস পোটকি বলেছেন, গবেষণায় যে ফলাফল সামনে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ কল হিমবাহ হয়তো উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
রিপোর্টের আর এক লেখক এবং লন্ডনের কিংস কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানী ডঃ টম ম্যাথুস বিবিসিকে বলেছেন, ওই অঞ্চলের জলবায়ুতে কোন পরিবর্তন ঘটেনি যাতে গলন বৃদ্ধির সূচনা হয়। কিন্তু তাপমাত্রায় ক্ৰমবৰ্ধমান বৃদ্ধি হিমবাহকে গলিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে এভারেস্টের ওই অঞ্চলে পরিবর্তন আসছে। তারা আরও উল্লেখ করেছে যে হিমবাহের পুরু তুষারপ্যাকটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে, হিমবাহের ভিতরের ‘ব্ল্যাক আইস’কে সূর্যের কাছে উন্মুক্ত হয়েছে তার ফলে গলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১০ জন বিজ্ঞানীর একটি দল হিমবাহটি পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তাঁরা বিশ্বের দুটি সর্বোচ্চ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রও স্থাপন করেছেন। ১০ মিটার দীর্ঘ (প্রায় ৩২ ফুট) বরফের ভিতর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই অভিযানের নেতা পল মায়েউস্কি বিবিসিকে বলেছেন, হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ায় গোটা বিশ্বের জলবায়ুতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে।
শুধু এভারেস্টের এই হিমবাহ-ই নয়, গত বছর ফরাসি গবেষকদের একটি দল জানিয়েছে, বিশ্বের প্রতিটি হিমবাহই দ্রুতগতিতে গলে যাচ্ছে।