দিনক্ষণের হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮-র মাঝদুপুর। স্থান – কলকাতা শহরের ওবেরয় গ্র্যাণ্ডের বলরুম। শ’ দুয়েক মানুষের সমাবেশ সেই বিরাট প্রশস্ত কক্ষে। সকলেই অপেক্ষমান বিশিষ্ট একজনের জন্য। সেই উন্মুখ সুবেশ জনতার একজন আমিও। অথচ যাঁকে উপলক্ষ করে অভ্যাগতের এই ভিড়, তিনি এখনও গরহাজির। দুপুর ১টা বাজতে মিনিট কয়েক বাকি। আচমকাই সমবেত গুঞ্জন স্তব্ধ! সব দৃষ্টি বলরুমের অতিকায় প্রবেশপথে গাঁথা। না, কোনও রাজনীতিক নয়, জনপ্রিয় চিত্রতারকা নয়, নয় কোনও খ্যাতনামা গায়ক কিংবা লেখক। দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে  কেতাদুরস্ত পোষাকে প্রায় সাড়ে ছ’ফুট উচ্চতার শালপ্রাংশু এক প্রবীণ ভিনদেশি পুরুষ। চিনতে এক মুহূর্তও লাগলো না – এভারেস্ট জয়ী স্যর এডমাণ্ড হিলারী! সেই কিংবদন্তি যিনি তেনজিং নোরগের সঙ্গে উচ্চতম শৃঙ্গে পৌছেছিলেন ১৯৫৩-র ১৯ মে। আমাদের নির্বাক দৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে এক জলজ্যান্ত ইতিহাস। এমন একজনও সেই মুহূর্তে বলরুমে উপস্থিত নেই যাঁর দৃষ্টিতে ঝরে পড়ছে না অপার বিস্ময় মেশানো সম্ভ্রম।

অজস্র মুগ্ধ চোখের সামনে দিয়ে ধীর পায়ে ঢুকলেন স্যর এডমাণ্ড। লালচে আভা সারা মুখে। পরণে গাঢ় নীল স্যুট। এমন ঋজু, শালপ্রাংশু কাঠামো ছাড়া ওই উন্নত পর্বতশীর্ষে কাকে মানায়! এই উনসত্তর বয়সের ভার এতটুকুও ন্যুব্জ করে দিতে পারে নি। অতি সাধারণ চেহারার শত মানুষের ভিড়ের মাঝে তিনি মাউন্ট এভারেস্টের মতোই বিশালত্বে বিরাজমান। লিলিপুটদের দেশে গালিভার। আর, ঠিক তাঁর পাশটিতে ছায়াসঙ্গী এক বিদেশিনী। বয়েস কাছাকাছিই হবে। ওঁর বান্ধবী, পরবর্তীকালে স্ত্রী। উপস্থিত অভ্যাগতদের সঙ্গে পরিচয় পর্ব চলছে। স্যর এডমাণ্ডের পরিচিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি মাত্রা। আপাতত তিনি ভারতে নিযুক্ত নিউজিল্যাণ্ডের হাইকমিশনার হিসেবে দিল্লিবাসী।

এডমাণ্ড হিলারী ও তার বান্ধবীর সাথে লেখক

এবার অনুষ্ঠান শুরুর পালা। সুসজ্জিত মঞ্চে উঠলেন স্যর এডমাণ্ড। পকেট থেকে চশমা উঠে এল নাকে। শুরু হল বক্তৃতা। নিস্তব্ধ বলরুমের মাইক্রোফোনে গমগম করে উঠল তাঁর জলদগম্ভীর কন্ঠ। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে। শুনছি আমিও। কিন্তু আমাকে তোলপাড় করছে অন্য ভাবনা, অন্য উদ্বেগ। কারণ, আমার আগমন স্যর এডমাণ্ডের কাছে একটি একান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য সময় চাওয়া, কলকাতার ইংরেজি দৈনিক ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’র তরফে। গত কয়েকদিনে পত্রিকার লোকজনের মুখে শুনেছি উনি বদমেজাজি, দাম্ভিক প্রকৃতির মানুষ। সহজে মুখ খুলতে নারাজ। আমার দুর্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে এইসব সাবধানবাণী। আমার আবদারে যদি উনি কর্ণপাত না করেন, তাহলে? ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়া যাবে না। একেই বলে ‘ডু অর ডাই’।

ওদিকে সময় গড়িয়ে চলেছে। চলেছে ভাষণও। এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা রোটারি ক্লাব। তার দুজন কর্মকর্তার সহায়তা চাইলাম। তাঁদের অবস্থাও তথৈবচ। বললেন, সম্ভব হলেও দু-এক মিনিটের বেশি সময় কিছুতেই বের করা যাবে না। ভীষণ ব্যস্ত স্যর এডমাণ্ড। ঠাসা কর্মসূচি নিয়ে মাত্র দু-দিনের জন্য এসেছেন কলকাতায়। আকাশ-পাতাল ভেবে চলেছি, ওদিকে বক্তৃতা শেষ, অনুষ্ঠানও।

এবার মধ্যাহ্নভোজনের পালা। মঞ্চ থেকে নেমে আসার পর অতিথি-পরিবৃত হয়ে খেতে বসে গেলেন স্যর এডমান্ড। খেতে খেতেই কথাবার্তায় ব্যস্ত তিনি। এই মুহূর্তে যদি গিয়ে একফাঁকে নিবেদন করি ‘এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ চাই আপনার, সময় দেবেন একটু’ – তাহলে প্রত্যাখ্যাত হবার সম্ভাবনা নিরানব্বুই শতাংশ। হয়তো বিরক্তও হবেন। কিন্তু আলাদা করে ধরার সুযোগ কোথায়? দুদিন ধরে এই হোটেলে যাতায়াত করছি, কাজের কাজ হয় নি। গ্র্যান্ড হোটেলের যে স্যুইটে উনি রয়েছেন, গতকাল বিকেলে রিসেপশনের ইন-হাউস টেলিফোন থেকে বার কয়েক ডায়াল করেছি, বেজে বেজে থেমে গেছে। তাঁকে ঘরে পাওয়া যায় নি। রিসেপশনিস্টরা বলেছেন, বেরিয়েছেন বোধহয় কোথাও। অতঃ কিম্?

গোকিয়ো থেকে এভারেস্ট

বুফে লাঞ্চ দ্রুত শেষ করে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে সতর্ক নজর রাখছি, একটি নিমেষ যদি ফাঁকা পাওয়া যায়। কথাবার্তার মাঝখানে গিয়ে ব্যাঘাত ঘটানোটাও অভদ্রতা। চট করে মাথার ভেতরে একটা আলোর ঝলকানি টের পেলাম। দেখি, স্যর এডমাণ্ডের প্রবীণা সঙ্গিনী দু-এক জনের সঙ্গে প্রীতি বিনিময় করছেন মৃদু হাসি নিয়ে। কাল বিলম্ব না করে, কফির কাপ নামিয়ে রেখে সোজা তাঁর খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালেন। দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা। আমি নিজের পরিচয় দিয়ে অভিপ্রায় জানালাম। উনি প্রশ্রয়ের হাসি হেসে দু-চার কথা জিজ্ঞেস করে একটু অপেক্ষা করতে বললেন। তারপর একটু ফুরসৎ পেতেই ডানদিকে ফিরে হিলারী সাহেবের কাঁধে মৃদু চাপড় দিয়ে ডাকলেন। নিচু কন্ঠে দুজনের বাক্যবিনিময় চললো কয়েক মিনিট। কথা শেষ হলে উনি ইঙ্গিতে আমায় ডেকে নিয়ে স্যর এডমাণ্ডের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। করমর্দন করে হিলারী সাহেব আমায় বললেন, একটু অপেক্ষা করতে হবে এ সবকিছু শেষ হওয়া অবধি। আমি তখন উল্লসিত। হাজার ঘন্টা অপেক্ষা করতেও রাজি। মিনিট পনেরো পর অনুষ্ঠান পর্ব সাঙ্গ হল।

ওঁদের দুজনের দিকে তাকাতেই প্রবীণা ইশারায় ডাকলেন। কাছে যেতেই স্যর এডমাণ্ড বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে চলো’। বুঝে গেলাম, অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইতে এসে ইন্টারভিউটাই পেয়ে যাচ্ছি। সমস্যা হল, টেপ রেকর্ডারটা তো সঙ্গে আনিনি আজ। যাক গে! প্রশ্ন করা এবং লেখা দুটো কাজ একই সঙ্গে চালাতে হবে। আমার সঙ্গী ফোটোগ্রাফার সুমিত সিনহাকে নিয়ে ওঁদের সঙ্গে লিফটে উঠে পড়লাম। লিফট চালু হতেই স্যর এডমাণ্ড আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ঘন্টাখানেক বাদে আমাদের একটু মার্কেটে বেরোতে হবে। তার আগে ছেড়ে দেবে তো’? কান এঁটো করা হাসি দিয়ে আশ্বস্ত করলাম তাঁকে।

ওঁদের স্যুইটে ঢুকে মুখোমুখি বসলাম তাঁর। ছোটবেলা থেকে যে কিংবদন্তির কীর্তিগাথা মুখস্থ, তাঁরই সামনে বসে রয়েছি। একটু যেন অবাস্তব লাগছে সবকিছু। উনসত্তরে এসেও কী মজবুত দৃঢ় চেহারা! খবরের কাগজে পড়েছি, মাত্র বছর কয়েক আগে পর্বতারোহণে গিয়ে খাদে পড়ে তাঁর ছোট ছেলের অকালমৃত্যুর সংবাদ। সেই শোক এই প্রশস্ত বুকের কোন কন্দরে আত্মগোপন করে রয়েছে বোঝা দুষ্কর।

সোজাসুজি ওঁর দিকে তাকিয়ে হালকাভাবে বললাম, ‘কখনও খেয়াল করেছেন ইংরেজি H অক্ষরটির সঙ্গে আপনার জীবনের আশ্চর্য যোগ’? উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে বললেন, ‘না তো! কিরকম’? আমি বললাম, ‘Hillary from the Himalayas to High commission’। শুনে খুব হেসে উঠলেন হো হো করে, ‘তাই তো! ভেবে দেখিনি আগে কখনও। বেশ ইনটারেস্টিং’! সব গাম্ভীর্য ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়লো সেই হাসিতে। স্বস্তি পেলাম। এবার নিজে থেকেই বলতে শুরু করলেন, ‘এটা একটা কোইনসিডেন্স। তবে হিমালয় থেকে হাই কমিশনে পৌঁছোনোর মাঝে কেটেছে অনেকটা সময়। এভারেস্টে উঠেছিলাম সেই ৩৫ বছর আগে। আর হাই কমিশনে এসেছি মাত্র বছর তিনেক হল’।

জিজ্ঞেস করলাম, ‘সারা জীবন যিনি দুর্গমের ডাকে ছুটে বেড়িয়েছেন, ঘরে বসে এই দূতগিরির চাকরি তাঁর কি আদৌ ভাল লাগে’? জবাব যেন তৈরিই ছিল, ‘বেশ ভালোই তো লাগে। দুটোই খুব ইনটারেস্টিং আর চ্যালেঞ্জিংও বটে। এই অভিজ্ঞতাটাও আমার কাছে আনকোরা নতুন। চিরটাকালই তো আমি ব্যক্তিগত তাগিদে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার খোঁজে ছুটে বেড়িয়েছি। এখন নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি দূত হিসেবে। এর স্বাদ একেবারেই আলাদা’।

এডমাণ্ড হিলারী ও তেনজিং নোরগে

জানতে চাইলাম, ‘আপনি পর্বতারোহী হয়ে উঠলেন কিভাবে’? প্রশ্নটা শুনে দৃষ্টি চালান করে দিলেন জানলা দিয়ে বাইরে দূরে। মনে হল স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন। একটুক্ষণ চোখ বুজে বলতে শুরু করলেন, ‘ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় একবার পাহাড়ে গিযেছিলাম সহপাঠিদের সঙ্গে। আমার বয়েস তখন ষোল। আমার দেশ নিউজিল্যাণ্ডে প্রচুর পাহার-পর্বত। দেখলাম বরফ আর বরফ। এত বরফ আমি আগে কখনও দেখিনি। খুব উত্তেজনা হচ্ছিল। আমি বরফ ভালোবেসে ফেললাম। স্কীয়িং করলাম ওখানে। সেই শুরু। তখন থেকেই তুষারাবৃত পাহাড় আমাকে খুব টানে’।

দুটি প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খেয়েই চলেছে। সেই বিলিয়ন-ডলার প্রশ্নটি তো না করে উপায় নেই, ‘আচ্ছা স্যর এডমাণ্ড, আপনি এবং তেনজিং নোরগে প্রথম ওঠেন এভারেস্টের চূড়োয়, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা কেউই এটা জানি না যে দুজনের মধ্যে কে আগে উঠেছেন। দুজনে নিশ্চয়ই হাত ধরাধরি করে একসঙ্গে ওঠেন নি? দুজনের মধ্যে প্রথমে তাহলে কে’?

স্মিত হাসি ফুটে উঠলো প্রবীণ পর্বতারোহীর মুখে, ‘এই প্রশ্নটা বোধহয় সারাজীবনেও আমার পিছু ছাড়বে না। শোনো, আগে-পরে নয়, আমরা দুজন একই সঙ্গে পা রেখেছিলাম সেই চূড়োয়। আরও একটা কথা বলি, সত্যিই আমাদের দুজনের কাছে এ প্রশ্নটা অর্থহীন’। রহস্য উদ্ধারের চেষ্টা ব্যর্থ হল আমার। অগত্যা বললাম, ‘চূড়ায় পৌঁছোনোর ঠিক পরমুহূর্তে আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন হয়েছিল’?

হাসলেন স্যর এডমাণ্ড। স্মৃতিমেদুর হাসি। বললেন, ‘আনন্দে আত্মহারা হওয়ার অবকাশ ছিল না মোটেই। হ্যাঁ, একটা অদ্ভুত শান্ত, সুন্দর ভালো লাগার অনুভব হয়েছিল বুকের ভেতরে। কিন্তু আমরা দুজনেই জানতাম নেমে আসার কাজটাও কতটা কঠিন। খুশি হয়েছিলাম খুবই। কিন্তু জীবিত অবস্থায় সমতলে নেমে আসার দায় তখন মাথায়। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি সেখানে ছিল না।

‘আপনি তো বহু পর্বতে অভিযান করেছেন। কোন অভিযান আপনাকে সবচেয়ে বেশি বেগ দিয়েছে’?

‘অবশ্যই মাউন্ট এভারেস্ট। আমার জীবন ও মানসিকতায় এভারেস্টের প্রভাব বিরাট। মিডিয়ায় এত হইচই পড়ে গিয়েছিল যে ফিরে আসার পর লোকে আমাকে ‘এভারেস্ট ম্যান’ বলে ডাকতে শুরু করে’।

সেটাই কি তেনজিং নোরগের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বের শুরু’?

হ্যাঁ, আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই পরস্পরের। ১৯৫৩-র পর কতোবার আমাদের দেখা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। দেখাসাক্ষাৎ সব সময় সম্ভব হয় না। তেনজিং এর ইংরেজিটা খুব খারাপ ছিল প্রথম দিকে। জানতোই না বলতে গেলে। ফলে বেজায় অসুবিধে হত। পরে বেশ ভালোই রপ্ত করে ফেলেছে। আমি দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বেশ কয়েকবার গেছি। পেয়েছি সেখানকার সাম্মানিক ডিরেকটর পদও। সেজন্য খুব গর্বিতও বটে আমি।

কথাপ্রসঙ্গে এসে পড়লো তাঁর অন্যান্য আরও দুর্গম অভিযানের বৃত্তান্ত। শুধুই পাহাড় নয়। এভারেস্ট জয়ের তিন বছর পর তিনি আন্টার্কটিকা অভিযানে নিউজিল্যাণ্ড অভিযাত্রী দলের অধিনায়ক। সেটা ১৯৫৬। তার নিজের জবানিতে, ‘এগোতে গিয়ে এক সময় দেখলাম বরফের স্তূপ এত নিরেট যে আর চলা অসম্ভব। তখন খামারের ছোট ছোট ট্র্যাক্টর দিয়ে বরফ কেটে এগোতে হয়েছে’। তাঁরা দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছোন ১৯৫৭ সালে। এরপর শোনান উত্তর মেরু অভিযানের কাহিনি। সেই যাত্রায় তাঁর সঙ্গী ছিলেন মহাকাশচারি নীল আর্মস্ট্রং, যিনি অ্যাপোলো ১১-য় চেপে চাঁদের মাটিতে পদার্পণ করেছিলেন। বললেন, ‘নীল বড়ো ভালো মানুষ। শান্ত, ভদ্র, অমায়িক। এত বড়ো কৃতিত্বের অধিকারি, অথচ এতটুকু অহঙ্কার নেই ওর মধ্যে। নীল আমায় বলেছিল, দ্যাখো এডমাণ্ড, আমি লাক-টাকে বিশ্বাস করি না। এফর্ট, এফর্ট, চেষ্টাই সব’।

‘আপনার কি অভিযাত্রী জীবন শেষ’, জিজ্ঞেস করলাম।

‘না না, শেষ হবে কেন’, প্রতিবাদের ভঙ্গীতে বলে উঠলেন স্যর এডমাণ্ড। এই ভারতেই কতো কিছু দেখা বাকি। কিছুই দেখা হয় নি বলতে গেলে এখনও’।

এডমাণ্ড হিলারী ও নীল আর্মস্ট্রং

বললাম, ‘এত কীর্তির অধিকারী যিনি, তাঁকে নিশ্চয়ই অনেক কিছু হারাতেও হয়েছে’?

ম্লান হাসলেন। একটু বিষণ্ন যেন। বললেন, ‘কিছু করতে গেলে কিছু হারাতেই হয়। এটাই তো নিয়ম। ব্যক্তিগত জীবনে হারাতে হয়েছে অনেক। তার জন্য কষ্ট আছে, কোনও অনুতাপ নেই’।

তাকিযে রইলাম খানিক এভারেস্টম্যানের দিকে। একটুক্ষণের নীরবতা সারা ঘরে। ওঁর সঙ্গিনী টেবল ল্যাম্প জ্বেলে বই পড়ছিলেন একটা কোণায় বসে। হয়তো শুনছিলেন আমাদের আলাপচারিতাও। মুখ তুলে তাকালেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম। উঠে দাঁড়ালেন স্যর এডমাণ্ডও। ‘অনেক গল্প হল তোমার সঙ্গে। এবার আমার ছুটি তো’?

আমি কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে হাত বাড়ালাম। হ্যাঁ, অবশ্যই, অনেক ধন্যবাদ।

দরজা অবধি এগিয়ে দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, চারটে বাজে। আমরা একটু নিউ মার্কেট যাবো’।

3 COMMENTS

  1. কি দারুণ অভিজ্ঞতা. আর কি চমৎকার লেখা. বালিহাঁস আর চন্ডিকাদা দু’জনকেই অভিনন্দন.

Comments are closed.