আজ থেকে একশো বছর আগে বাংলা সিনেমায় চুমু! 

বেডসিন কিংবা যৌনতার দৃশ্য দেখে যাঁরা বাংলা সিনেমা সাবালক হয়েছে বলে ভেবে থাকেন, তাঁরা জেনে রাখুন, আজ থেকে একশো বছর আগে— হ্যাঁ, একশো বছরেরও বেশি সময় আগে এই বাংলার একটি সিনেমাতে চুম্বনের (kiss) একাধিক দৃশ্য ছিল। আর সেই ছবিটি দাঁড়িয়েছিল একটি অসাধারণ গল্পের উপর। নেহাত বাণিজ্য করতে সেখানে যৌনতার কথা আসেনি বরং সিনেমাটির ভিতরে প্রোথিত ছিল গভীর জাতীয়তাবোধ।

নির্বাক চলচ্চিত্র। সিনেমার নাম ‘বিলাত ফেরত’ (England Returned)। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন এন সি লাহিড়ী। প্রযোজক ও মুখ্য অভিনেতা হিসেবে এই ছবিতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।  ‘বিলাত ফেরত’  ১৯২১ সালের বাংলা চলচ্চিত্র যা শুরু থেকে শেষ একটি  অসাধারণ কমেডি। এটিই প্রথম ভারতীয় ফিচার ফিল্ম, যেখানে অন্তরঙ্গ চুম্বন দৃশ্য ছিল। ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সুশীলাবালা দেবী। 

‘বিলাত ফেরত’-এর কমেডি অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল। এই সিনেমাটি দিয়েই ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রেম এবং রোমান্সের অন্তহীন পথচলা শুরু হয়। সিনেমার বিষয় ছিল, বিলাত ফেরত মানে ইংল্যান্ড থেকে যাঁরা শিক্ষা গ্রহণ করে ফিরে আসতেন, তাঁদের সঙ্গে  রক্ষণশীল ভারতীয়দের দ্বন্দ্ব। অর্থাৎ, পশ্চিমী বনাম ভারতীয় সংস্কৃতি। এন.সি. লাহিড়ী ও ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এই সিনেমায়  অত্যন্ত বাস্তবসম্মত প্রেমের দৃশ্যগুলি দেখিয়ে ছিলেন। 

ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে বলা হয়, ‘ফাদার অব বেঙ্গলি সিনেমা’। সিনেমা জগতে অসামান্য ভূমিকার জন্য ১৯৭৫-এ তাঁকে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছিল।

বরিশালের ডেপুটি কালেক্টর ধীরেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা, মেকআপম্যান সর্বোপরি ফটোগ্রাফার। ১৯২১ সালে, অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই তিনি সেই সব দেশী সাহেবদের উপহাস করার উদ্যোগ নেন, যাঁরা ইংরাজিতে কথা বলতেন, লিখতেন এমনকি স্বপ্নও দেখতেন! সাহেবিয়ানায় ভরপুর মানুষগুলির সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের যোগাযোগ ছিল না। ম্যানচেস্টারে বৃষ্টি হলে এঁরা মুম্বাইতে ছাতা খুলতেন। দেশের মানুষের সঙ্গে যোগসূত্রহীন সেই সব  মানুষদের বিদ্রুপ করেই ধীরেন্দ্রনাথ তৈরি করেন ‘বিলাত ফেরত। তার আগে পর্যন্ত ভারতীয় সিনেমার গল্পগুলি পৌরাণিক কাহিনী থেকে নেওয়া হতো। ‘বিলেত ফেরত’-ই প্রথম সিনেমা যেখানে সাধারণ মানুষ ও সমাজকে নিয়ে ভাবা হয়েছিল। সিনেমার গবেষকদের অনেকেরই মত, ধীরেন্দ্রনাথই প্রথম যিনি ভারতীয় সিনেমাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তাঁর আগে দাদাসাহেব ফালকে কিংবা হীরালাল সেন মূলত পৌরাণিক পটভূমিতে সিনেমা করতেন। তবে ধীরেন্দ্রনাথ সমসাময়িক সমাজের কথা বলেছেন এবং ধর্মের বেড়াজাল ছাড়িয়ে সিনেমাকে সমাজের দিকে মোড় ঘুরিয়েছেন।  তবে সুশীলাবালা দেবী সর্ম্পকে খুব বেশি তথ্য সামনে আসেনি। যতটুকু জানা যায়, তিনি ছিলেন অভিনয় অন্তপ্রাণ। তাঁর অভিনয়ের শিক্ষাগুরু, প্রবাদ-প্রতিম আচার্য অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফী। প্রধানত তিনি একজন মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। সুশীলাবালা অনেক থিয়েটারে গিরিশচন্দ্র ঘোষের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন।