বৃক্ষরোপনের জন্য সরকারি দফতরগুলি থেকে গাছ দেওয়া হয়ে থাকে। আম-জাম-কাঁঠাল কিংবা রাস্তার ধারের শোভা বাড়াতে কৃষ্ণচূড়া কিংবা রাধাচূড়া। অঞ্চল ভেদে গাছও বদলে যায়। যে এলাকায় যে গাছ বড় হয়ে উঠতে পারে, তাকেই মানুষের মধ্যে বিলি করে সরকারি দফতরগুলি।

ভারত কেন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই এমন ভাবেই নাগরিকদের হাতে গাছের চারা তুলে দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু কেউ কখনও শুনেছেন কি, চাষ করার জন্য বাড়িতে বাড়িতে বিনামূল্যে গাঁজা(cannabis) গাছ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনও দেশের সরকার?

হ্যাঁ, এমনটাই ঘটছে থাইল্যান্ডে।

অবাক হবেন না, ঘটনাটা ঠিক। নাগরিকরা যাতে নিজেদের বাড়িতে গাঁজা গাছ রাখতে পারেন, সে জন্য আগামী মাস থেকেই তাঁদের বাড়িতে সরকারের থেকে বিলি করা হবে গাঁজা গাছের চারা। ব্যাংকক থেকে সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল ঘোষণা করেছেন,  গাঁজা চাষ ও সংগ্রহে রাখা নিয়ে আগামী মাসে আইনি  কিছু বিধিনিষেধ কেটে যাবে। তারপরেই গোটা থাইল্যান্ড জুড়ে ১০ লক্ষ গাঁজা গাছের চারা বিতরণ করা হবে নাগরিকদের মধ্যে। মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, আগামী ৯ই জুন আইনগত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে ফুল এবং বীজ-সহ গাঁজা গাছের সমস্ত অংশ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে গাছ থেকে উৎপাদিত গাঁজা অবৈধ হবে যদি এতে সাইকোঅ্যাকটিভ উপাদান দশমিক দুই শতাংশের এর বেশি থাকে। গাঁজায় দশমিক দুই শতাংশের বেশি সাইকোঅ্যাকটিভ থাকলে তা টেট্রাহাইড্রোকানাবিনল বা THC তৈরি করে।  টেট্রাহাইড্রোক্যানবিনোল কোনও ব্যক্তির স্মৃতি, আনন্দ, গতিবিধি, চিন্তাভাবনা প্রভাবিত করে।

আনুতিন দীর্ঘদিন ধরে গাঁজা গাছ লাগানো ও তার সেবন অপরাধমুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে গাঁজাকে নিয়ন্ত্রিত ওষুধের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পদক্ষেপে সই করেছিলেন। ২০১৮ সালে গাঁজার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বৈধ করা হয়েছিল, তারপর থেকে ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।

থাই কর্মকর্তারা আশা, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতি বছর সরকার কয়েক কোটি ডলার  উপার্জন করবে। গাঁজার উৎপাদন বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। ফলে থাইল্যান্ডের পর্যটন ব্যবসার উন্নতি ঘটবে।

তবে বড় মাপে গাঁজা জাতীয় পণ্য উৎপাদনের জন্য এখনও সেখানকার খাদ্য ও ওষুধ সংক্রান্ত প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হবে।

ব্যাংকক পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন গাঁজা  আমদানি এবং উৎপাদনের লাইসেন্সের জন্য গত মাসের শেষের দিকে প্রায় ৪৭০০টি আবেদন পেয়েছে। এই বিভাগের একজন আধিকারিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, যে পণ্যগুলি উৎপাদনের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, পানীয়, সস, জেলি ক্যান্ডি এবং ফাস্ট ফুড।

অনুতিনের ভুমজাই থাই পার্টি, থাইল্যান্ডের জোট সরকারের গুরুত্বর্পূণ শরিক। গাঁজা উৎপাদন বৈধ করতে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তারা জোর প্রচার চালিয়েছিল। যুক্তি ছিল, এই সিদ্ধান্ত দেশের কৃষকদের সাহায্য করবে।