সোনা কাহাঁ হ্যায়— রোজ-রোজ যে ভাবে সোনার দাম চড়ছে, তাতে এই প্রশ্নটা বোধ হয় সবারই। এবং একটা উত্তর বোধ হয় মিলল অবশেষে। ‘অচ্ছে দিন’-এর ইঙ্গিত এলো বিহার থেকে। একাধিক সরকারি সূত্রের দাবি, কুবেরের ধন রয়েছে বঙ্গের এই পড়শি রাজ্যে। বলা হচ্ছে, দেশের ৪৪ শতাংশ সোনা রয়েছে বিহারের জামুই জেলায়। দীর্ঘ টালবাহানার পরে সম্প্রতিই খননকার্যে অনুমতি দিয়েছে বিহারে নীতীশ কুমারের সরকার।
গল্প, নাকি সত্যি? উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্র থেকে যে গল্প চাউর হয়েছিল, এটাও তেমন কিছু নয় তো? বছর দুয়েক আগের ঘটনা। রটেছিল, সোনভদ্রে নাকি ৩,৫০০ টন সোনার সন্ধান পেয়েছে জিএসআই। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই নয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও অনেকে সোনভদ্রে স্বর্ণসন্ধান নিয়ে টুইট করতে শুরু করেন। পরে যদিও জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া একটি বিবৃতি জারি করে জানায়— ইতনা সোনা কাহাঁ! সোনভদ্রে শেষবার সোনা-সমীক্ষা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। যাতে মাত্র ১৬০ কেজি সোনার হদিশ মিলেছিল। তাই সাড়ে তিন হাজার টন সোনার গল্প নেহাতই গুজব বলে জানিয়ে দেয় জিএসআই।
বিহারের গল্পটা সত্যিই ‘গোল্ডরাশ’ বলে একাধিক সরকারি সূত্রের দাবি। বলা হচ্ছে, আপাত দৃষ্টিতে রুখাসুখা কারমাটিয়া, ঝাঝা ও সোনো এলাকায় মাটির নীচেই হয়তো লুকিয়ে রয়েছে অন্তত ২৩ কোটি টন সোনা। যার মধ্যে ৩৭.৬ টন নাকি উৎকৃষ্ট খনিজ সোনা! জিএসআই সরাসরি এ নিয়ে কোনও বিবৃতি না-দিলেও বিশেষজ্ঞদের অনুমান, দেশের বৃহত্তম এই স্বর্ণভাণ্ডার বিহারের তো বটেই, গোটা দেশের অর্থনীতিই বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সোনার দামও এর জেরে রাতারাতি অনেকটাই কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিহারের এই স্বর্ণভাণ্ডার নিয়ে খবর কিন্তু প্রথম পাওয়া গিয়েছিল ১৯৮২ সালে। রাজ্য প্রশাসন সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি। এর পর ২০১১ সালে আবার শিরোনামে আসে কারমাটিয়া। নির্দিষ্ট এলাকা ধরে খননের তোড়জোড় শুরু করে জিএসআই৷ কিন্তু খরচের চাপে মাথায় ওঠে খনন। কার্যত ঠাণ্ডা ঘরেই চলে যায় স্বর্ণসন্ধান। ২০২১-এ ফের বিষয়টি সংসদে তোলেন কেন্দ্রীয় খনন মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী। তিনিই জানান যে, এই মুহূর্তে কর্নাটক নয়, বিহারের মাটির নীচেই রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সোনার ভাণ্ডার। কিন্তু ঘোষণাই সার। কেন্দ্র নিজে থেকে এগোয়নি। দীর্ঘদিন ‘করছি-করব’ করে শেষমেশ হালে খননে সম্মতি দিয়েছে বিহার সরকার। নীতীশের প্রশাসন জানিয়েছে, তৃতীয় স্তরের অন্বেষণের জন্য এ মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে মউ সই করবে তারা।
কিন্তু মাওবাদী-অধ্যুষিত এলাকার নীচে এত প্রাচীন এই ভাণ্ডারের কথা মানুষ জানল কী করে? শোনা যায়, পিঁপড়েই নাকি বিশেষ সংবাদদাতা। কী ভাবে? লোকশ্রুতি, বহু বছর আগে ওই এলাকায় একটি বিশাল বটগাছ ছিল, প্রখর রোদের থেকে বাঁচতে পিঁপড়ের দল সেই বটগাছের নীচেই মাটি খুঁড়ে বাসা তৈরি করতে শুরু করে। মুখে করে মাটি তুলে আনছে সার-সার পিঁপড়ে। কিন্তু মাটির সঙ্গে হলুদ-হলুদ ও-সব কী? সোনালি আভা দেখা গিয়েছিল তখনই। এ বার তাল-তাল সোনা তোলার পালা।
[…] […]