উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রামের বাসিন্দা নগেন্দ্র রাউত (নাম পরিবর্তিত), সংসদ ভবনের খানসামা। সকাল থেকে মন্ত্রীদের গাড়ি এসে দাঁড়ায়, নগেন্দ্র এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে স্যালুট করে।কিন্তু সেদিন ১৬ই মার্চ এক্কেবারে নতুন ধরনের গাড়িটা যখন নিঃশব্দে এসে দাঁড়াল, সে একেবারেই হতবাক। অবশ্য সাংবাদিকদের জমা হতে দেখে আগেই একটা সন্দেহ হয়েছিল, কিছু একটা হতে চলেছে। নগেন্দ্র এসে দরজা খুলে স্যালুট করে। সেইসঙ্গে কৌতূহল আর স্বপ্ন তাঁর মনের মধ্যে ডানা মেলতে শুরু করে।
গাড়িটা থেকে নেমেই পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর ঘোষণা, এটা টয়োটা কোম্পানির ‘মিরাই’। ভারতেরও মিরাই, ভবিষৎ। দেশে টয়োটা ও কিলস্কারের যৌথ উদ্যোগের পাইলট প্রকল্পের প্রথম নিবেদন হাইড্রোজেন কোষের ইলেকট্রিক গাড়ি (FCEV)। এক কোষে (হাইড্রোজেন জ্বালানি কোষের) ৬৫০ কিলোমিটার পার। খরচ মাত্র ২টাকা/কিমি। কোষ পাল্টাতে ৫ মিনিট। যেখানে ইলেকট্রিক কার চার্জ করতে লাগে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা।
পেট্রল-ডিজেলের চরম সঙ্কটে বিশ্ব যখন জেরবার, তখন এ কি দিবাস্বপ্ন !
না। তবে বহু চড়াই-উৎরাই পেরতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ভারতের মতো যে দেশকে ৮০% পেট্রল-ডিজেল আমদানি করতে হয়, তার কাছে এ কাজ অবশ্য কর্তব্য। ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে বেশি নাচানাচি করে লাভ নেই। মূল উপাদান লিথিয়াম আমাদের সেভাবে নেই। এই “সাদা সোনার” প্রধান উৎস দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের “লিথিয়াম ত্রিভুজ”, আর্জেন্টিনা-বলিভিয়া-চিলি। সে বাজারে ইতিমধ্যেই আমেরিকা, ইউরোপ ও চিন গেড়ে বসেছে। সেখানেও আমদানি নির্ভরতা আর আমাদের সুযোগও কম।। সবদিক বিচারে হাইড্রোজেনই ভবিষ্যৎ হয়ে উঠতে পারে। জ্বালানি হিসাবেও এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার। এক কেজি পেট্রলে গাড়ি যায় বড়জোর ২০ কিলোমিটার, সেখানে এক কেজি হাইড্রোজেনে ১০০-১৩০ কিলোমিটার। উৎপাদন খরচ ক্রমহ্রাসমান। ২০১৫ সালে খরচ ছিল প্রতি কেজিতে ৬ ডলার সেটা ২০২৫ সালে নেমে আসবে ২ ডলারে।
হাইড্রোজেন উৎপাদন পদ্ধতিকে ধরে এর বর্ণপ্রথা প্রচলিত, যদিও H2 বর্ণহীন গন্ধহীন গ্যাস। যখন কার্বন গ্যাস (গ্রিনহাউজ) প্রায় অনুপস্থিত, তখন হয় গ্রিন হাইড্রোজেন। অপ্রচলিত শক্তির সাহায্য জলের তড়িৎ বিশ্লেষণে বা বায়োগ্যাস থেকে উৎপন্ন। খুবই খরচ সাপেক্ষ বলে বর্তমানে মাত্র ০.১% হল গ্রিন। ৯৯% ধূসর হাইড্রোজেন। জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। যেখানে থাকে কার্বন ডাই অক্সাইড আটক ও মজুত (CCS) ব্যবস্থা। এছাড়াও রয়েছে নীল, টারকোয়েজ, হলুদ, পাটল ইত্যাদি বর্ণের হাইড্রোজেন ।
আশার কথা, এক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। একদিকে ব্যক্তি পুঁজি অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত নবরত্ন সংস্থা— গেইল, অয়েল ইন্ডিয়া, এনটিপিসি। সুতরাং নগেন্দ্রের স্বপ্ন, পরিবহণ মন্ত্রীর মতো টয়োটা মিরাই গাড়ি নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে যাওয়া, একদিন হয়তো বাস্তব হবে।