তালিমেরেন আও— নামটি শুনে কি পরিচিত মনে হয় ? না বোধহয়। ঠিক আছে, সবাই নয়— মোহনবাগান সমর্থকদের থেকেই শোনা যাক। নামটি কি শোনা শোনা লাগছে? লাগছে না!

কি বলছেন! ১৯৪৩ সাল  থেকে এই মানুষটি মোহনবাগানের হয়ে খেলেছেন। শুধু খেলেন নি, ১৯৪৮ ও ১৯৪৯ -এ  তিনি ছিলেন মোহনবাগানের ক্যাপ্টেন। নাক কুঁচকাচ্ছেন আপনারা? ও তো কত প্লেয়ার খেলেছে মোহনবাগানে! কত প্লেয়ারই তো ক্যাপ্টেন হয়েছেন। কে এতো নাম মনে রাখে! হবে কেউ সেই রকম একজন।

এই ভদ্রলোক কিন্তু তেমন কেউ নন। একটু পরিচয় দেওয়া যাক। মানুষটি ছিলেন ভারতের প্রথম ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন। ১৯৪৮ সালের ভারতীয় টিম যখন লন্ডন অলিম্পিক খেলতে যায়, সেই টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন তালিমেরেন আও। মনে হয়, এবার একটু মনযোগ দিয়ে লোকটির কথা শোনা যায়।

 শুনুন তা হলে— ফুটবলে তালিমেরেন আও-এর দক্ষতা এতটাই ছিল যে আর্সেনালের মতো টিম তাঁকে তাদের হয়ে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু  ভদ্রলোক তাতে রাজি হননি। ভাবা যায় ! আর্সেনালে সুযোগ পেয়েও কেউ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছে? শোনা যায়, চুনী গোস্বামীও নাকি টোটেমহাম হাসপারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে তার যথাযথ প্রমাণ মেলেনি।

ফিরে যাওয়া যাক  তালিমেরেন আও-এর কথায়। কেন তিনি আর্সেনালের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন না? আসলে তাঁর জীবনের লক্ষ্য শুধু ফুটবলার হওয়া ছিল না। তিনি আর একটি কাজ করতে নাগাল্যান্ড থেকে বাংলায় এসেছিলেন। সেই কাজটি হল, ডাক্তারির পড়াশুনা। সেই সময় নাগাল্যান্ডে ভাল ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম।  ফলে তাঁকে ডাক্তারি পাশ করতেই হবে। ফুটবল মাঠে লড়াইয়ের মধ্যেই  তিনি আর জি কর হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করলেন। ১৯৬৩ সালে বাংলা থেকে ফিরে  গেলেন নাগাল্যান্ডে। হলেন সেখানকার হাসপাতালের সহকারী সিভিল সার্জেন। পরে তিনি নাগাল্যান্ড স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিচালক নিযুক্ত হন। সেই পদ থেকে ১৯৭৮ সালে অবসর নেন।

তালিমেরেন আও বা টি আও একজন দৃষ্টান্ত। একই সঙ্গে খেলা ও শিক্ষাকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার জলন্ত উদাহরণ তিনি।