পরনে একটুও সুতো নেই। আব্রুহীন। সর্ম্পূণ নগ্ন। জন্ম-পোশাকে। উন্মুক্ত। 

এমন ভাবেই বলা হয়ে থেকে। এমন বিবরণই দেওয়ার রেওয়াজ। তা-ও সম্পূর্ণ বোঝানো যায় কি না, আমার সন্দেহ। আসলে নগ্নতা একটা অনুভূতি। পোশাকের আড়াল, পোশাকের রহস্য। পোশাক কী ভাবে শরীরকে জড়িয়ে রেখেছে, এ সবই আলোচনায় উঠে আসে। পোশাক কী ভাবে শরীরকে উন্মুক্ত করে। শাড়ি, ব্লাউজ, স্কার্ট, গাউন, রাতপোশাক, ন্যুডল স্ট্র্যাপ, পিঠ খোলা, কাঁধ খোলা, কোমর খোলা, বুকের খাঁজ তোলা—এমন সব নানা পোশাকের নানা ভাষা। তারা নানা ইঙ্গিত করে। নানা ইশারায়। সবই যৌন ভাষা, যৌনতায় ভরা। যৌন আবেদন। যৌন ইঙ্গিত। 

ছবি সৌজন্যে -হিরন মিত্র

নগ্নতা (Nudity) কি যৌনতা না পোশাক? ঠিক মতো বললে, নগ্নতায় কোনও যৌনতা নেই। তাতে যৌনতার আরোপ রয়েছে। যৌনতার চশমা পরে দেখা। স্কার্টটা উরুর পাশ থেকে অনেকটা চেরা। প্রায় কোমর পর্যন্ত চেরা। হাঁটার সময় বারবার উন্মুক্ত হচ্ছে। শুভ্র উরু তার পেলবতা নিয়ে বারবার তার চেহারা দেখিয়ে যাচ্ছে। আবার ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। শরীরের রহস্য…আড়ালের রহস্য।

ছবি সৌজন্যে -হিরন মিত্র

উর্দ্ধাঙ্গ উন্মুক্ত, খোলা। শুধু স্তনের উপর দুটি গোল চাকতি বসানো ছোট মাপের। নিপলের মাথায় ওইটুকুই আব্রু। ওইটুকুতেই ছাড়। খুবই পেলব,গোল, সুন্দর, যুবতী স্তন দুটি। সামান্য ভারে নেমে আছে। আলতো, উন্মুখ হয়ে ছেয়ে আছে। কারণ,তার মধ্যে বসানো আছে দু’টি কালো চোখ। চোখ তুলে তাকানো মতো। কোনও লজ্জা নেই। কেউ এসে অতি আদরে যদি স্তন দু’টি তুলে ধরে, তখনই তার উষ্ণতা বোঝা যাবে। আবেগে থরথর কেঁপে উঠেছে। নাভির উপর তর্জনী এসে থামল। নাভিও উন্মুক্ত। নাভির গভীরতা টের পাওয়া যাচ্ছে। যৌনতার বার্তা বয়ে আনছে।

শরীর সম্পুর্ণ উন্মুক্ত হলে যৌনতাও খসে পড়ে। আবরণেই যৌনতা বাসা বাধে। তখন তাকে আমরা নগ্ন বলে ডাকি। আসলে নগ্নতা একটা অবস্থান।

একটি তরুণী এক এক করে পোশাক ছাড়ছে। প্রতিটি পোশাক, যা তাঁর শরীর আঁকড়ে ছিল, তারা খসে পড়ল। যেন লজ্জা হারাচ্ছে। শরীর থেকে সামান্য দূরে পোশাকগুলো নিজেদের মতো তাল পাকিয়ে পড়ে আছে। তার সাথে পড়ে আছে তাঁর যৌনতা। পোশাকের গায়ে লেপটে। নগ্ন শরীর থেকে যৌনতা বিদায় নিলে একটা অপূর্ব অনুভূতি শরীরটাকে ঘিরে রাখে। যাকে আমরা পবিত্র বলে ডাকি। কোনও সংস্কার নেই, আব্রু নেই, আড়াল নেই। উপলব্ধির চরম স্তর।

ছবি সৌজন্যে -হিরন মিত্র

আমি যখন এই নগ্নতাকে আঁকতে (Drawing of Nudity) যাই, এঁকে তুলি, এঁকে রাখি— কালো কাঠকয়লা শরীরের প্রতিটি বাঁকে ঘন হয়ে তা গভীর দাগ কাটে। প্রতিটি ভাঁজ চিহ্নিত হয়ে যায়। নরম শরীরের পেলব মোচড় কাঠকয়লায় অদ্ভত চেহারা নেয়। নগ্নতা এমনই সৌন্দর্যময়। এমনই উপভোগ্য, এমনই আলোকিত।

ছবি সৌজন্যে -হিরন মিত্র

নগ্নতার নিজস্ব এক রূপ আছে। তাকে আগলে রাখতে হয়। তাকে বোঝা খুবই দুষ্কর। সাধারণ দৃষ্টিতে বোঝা যায় না। কোনও কৌতূহল নেই— এক চমকে ওঠা আছে। চমকে তাকানো আছে। চমকানোর বিস্ময় আছে। তাকে ধীরে ধীরে সয়ে উঠতে হয়। সে তখন নগ্নতার ডানা মেলে নিজেকে প্রকাশ করে। প্রকাশিত রূপ ধীরে ধীরে নগ্ন হয়।