কমনম্যান কান্তি

তিনটি তাসে ভারতকে মহাকাশে আরও উচ্চতায় পৌঁছে দিতে চলেছে ইসরো।

 তাস-এক: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) আগামী বছরেই মহাকাশ স্টেশন’ তথা ভারতীয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের প্রথম পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছে।

 তাস-দুই: ভারতের মহাকাশযানগুলি বর্তমানে তৈরি হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্রে। কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে গড়ে উঠছে নতুন একটি উৎক্ষেপণ যান উৎপাদন কেন্দ্র। মহাকাশযান গবেষণা ও উন্নয়নেও যা প্রভূত অবদান রাখতে চলেছে। ২০২৫-এই এটি চালু করার লক্ষ্যে কাজ চলছে জোর কদমে। যা চালু হলে ভারতের মহাকাশযান উৎপাদনের ক্ষমতাকে দ্বিগুণ করে তুলবে।

 তাস-তিন: এ সবের আগে, চলতি বছরেই চালু হওয়ার আশা ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ উড়ান কেন্দ্র। আপাতত যা গগনযান অরবিটাল কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। অর্থাৎ দু’বছরে ভারতের ইসরো মহাকাশ চর্চা, মহাকাশ শিল্প ও মহাকাশ অর্থনীতির বিশ্ব মানচিত্রে এক লাফে অনেকটাই বড় জায়গার দখল নিতে চলেছে।

ভারতীয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন

ইসরো সূত্রের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতীয় মহাকাশ স্টেশন চালু এবং ২০৪০ সালের মধ্যে একজন ভারতীয় মহাকাশচারীকে চাঁদে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর থেকেই তাঁরা দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করছেন। ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ সম্প্রতি ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। তাঁর কথায়, “আগামী বছরেই আমরা ভারতীয় মহাকাশ কেন্দ্রের প্রথম পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছি। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) আমি এই কেন্দ্রের নকশা পর্যালোচনা করেছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা এতগুলি অসাধারণ নকশা নিয়ে কাজ করছেন যে, কোনটি বেছে নেব, সেটা ভেবেই আমি কিছুটা দ্বিধায় আছি।”

তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ইসরোর ভিতরে এক নতুন উৎসাহ জাগিয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে মহাকাশ স্টেশনটি নির্মাণ, পরীক্ষা এবং উৎক্ষেপণের জন্য ইসরো ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শিল্প সংস্থার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।”

সোমনাথ ইঙ্গিত দেন, “এটি একটি মহাকাশ কেন্দ্র, কোনো ব্যক্তি নয়। মানুষ পাঠানো হবে যখন সেটি তাদের জন্য প্রস্তুত থাকবে। কিন্তু কেউ না থাকলেও কেন্দ্রটি কাজ চালিয়ে যাবে।” এটির অর্থ, শুরুতে মহাকাশ কেন্দ্রটি মানববিহীন হবে।

মহাকাশে ভারতের নিজস্ব একটি স্টেশন তথা কেন্দ্র তৈরি হলে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে। ভারতীয় মহাকাশ কেন্দ্র ভারতকে মহাকাশ গবেষণায় একটি বড় ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই কেন্দ্রটি বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হবে। এটি মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের দক্ষতা ও জ্ঞানকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

২০২৫ সালে প্রথম পরীক্ষার পর, ভারতীয় মহাকাশ স্টেশনটি ধীরে ধীরে তার পূর্ণ ক্ষমতা অর্জন করবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ মহাকাশ কেন্দ্রে পরিণত হবে। তখন এটি ভারতীয় মহাকাশচারীদের জন্য একটি অস্থায়ী বাসস্থান হবে। এটি বিভিন্ন মহাকাশ মিশনের জন্য একটি লঞ্চপ্যাড হিসেবেও কাজ করবে। ভারতকে এটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মহাকাশ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

 

মহাকাশযান তৈরির দ্বিতীয় কেন্দ্র

 

বর্তমানে, PSLV, GSLV-MkIII এবং আরও বড় আকারের উৎক্ষেপণ যান উৎপাদন করা হয় সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র (SDSC)-এ। SDSC ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায়।

ভারতের উৎক্ষেপণ যান উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ করার জন্য, ইসরো একটি নতুন উৎক্ষেপণ যান উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এই কেন্দ্রটি কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে নির্মিত হবে। এই কেন্দ্রটি ২০২৫ সালের মধ্যে চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন উৎক্ষেপণ যান উৎপাদন কেন্দ্রে PSLV, GSLV-MkIII এবং আরও বড় আকারের উৎক্ষেপণ যান উৎপাদন করা হবে। এই কেন্দ্রটি SDSC-এর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ করবে।

নতুন উৎক্ষেপণ যান উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ইসরো ২০,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

  • উৎক্ষেপণ যান প্রস্তুতকারক নতুন কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন ধরনের উৎক্ষেপণ যান তৈরি করা হবে। এই কেন্দ্রে ছোট, মাঝারি এবং বড় আকারের উৎক্ষেপণ যান তৈরি করা হবে।

 

  • মহাকাশযান প্রস্তুতকারক কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন ধরনের মহাকাশযান তৈরি করা হবে। এই কেন্দ্রে উপগ্রহ, চন্দ্রযান, মঙ্গলযান, এবং অন্যান্য মহাকাশযান তৈরি করা হবে।

 

  • মহাকাশযান পরীক্ষা কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন ধরনের মহাকাশযান পরীক্ষা করা হবে। এই কেন্দ্রে মহাকাশযানের স্থিতিশীলতা, নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করা হবে।

 

  • মহাকাশ গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রটিতে মহাকাশ গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই কেন্দ্রে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করা হবে।

 

 জোড়া মহাকাশ কেন্দ্রের গুরুত্ব

ভারতকে মহাকাশ গবেষণায় স্বনির্ভর করবে: ভারত মহাকাশ গবেষণায় একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ। ভারত এখনও মহাকাশ গবেষণায় কিছু ক্ষেত্রে বিদেশের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের নিজস্ব উৎক্ষেপণ যান উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত। এছাড়াও, ভারতের মহাকাশযান নির্মাণে ব্যবহৃত অনেকগুলি প্রযুক্তি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। মহাকাশযান এবং মহাকাশযান উৎক্ষেপণ যানগুলির বেশির ভাগ অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে।

এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং ভারতের মহাকাশ শিল্পের বিকাশে বাধা দেয়। দেশে আর একটি একটি মহাকাশযান উৎপাদন কেন্দ্রের নির্মাণ এই সমস্যাগুলি সমাধান করবে। এর নির্মাণ ভারতকে মহাকাশ গবেষণায় স্বনির্ভর হতে সাহায্য করবে। এর ফলে, ভারতকে বিদেশ থেকে মহাকাশযান এবং মহাকাশযান উৎক্ষেপণ যান আমদানি করতে হবে না।

ভারতীয় মহাকাশ শিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে: দু’টি মহাকাশ কেন্দ্র ভারতীয় মহাকাশ শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই কেন্দ্রটিতে ভারতীয় মহাকাশ শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়াও, নতুন কেন্দ্রটি ভারতীয় মহাকাশ শিল্পের দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সাহায্য করবে।

ভারতীয় মহাকাশ শিল্প বর্তমানে দ্রুত বর্ধনশীল। ভারতীয় মহাকাশ কেন্দ্র এই শিল্পের বিকাশে আরও গতি যোগ করবে। এই কেন্দ্রটিতে ভারতীয় মহাকাশ শিল্প উদ্যোগ ও তাদের নিজস্ব মহাকাশযান এবং মহাকাশযান উৎক্ষেপণ যান তৈরি করতে পারবে। এটি ভারতীয় মহাকাশ শিল্পের দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা করবে।

ভারতের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে: দু’টি মহাকাশ কেন্দ্র ভারতের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। নতুন কেন্দ্রটি তৈরি এবং পরিচালনার জন্য প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়াও, এই কেন্দ্রটি ভারতীয় পণ্য ও পরিষেবা রফতানি বাড়াতে সাহায্য করবে। নতুন মহাকাশ কেন্দ্র তৈরির জন্য প্রচুর শ্রম ও সম্পদ প্রয়োজন হবে। এই কেন্দ্রটি তৈরির ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়াও, ভারতীয় মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানি করে ভারত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।

মানব মহাকাশ উড়ান কেন্দ্র এ বছরই

 ভারতের ইতিমধ্যেই একটি মহাকাশ কেন্দ্র রয়েছে, সেটি হল অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় অবস্থিত সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র (SDSC)।  ভারতের একটি আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য রয়েছে, সেটি হল একটি গ্রাউন্ড বেসড অরবিটাল কমপ্লেক্স চালু করা। এই প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক নাম হল ইসরো হিউম্যান স্পেসফ্লাইট সেন্টার তথা মানব মহাকাশ উড়ান কেন্দ্র (HSFC), এটিকে গগনযান অরবিটাল কমপ্লেক্সও বলা হচ্ছে।

মানব মহাকাশ উড়ান কেন্দ্র (HSFC) নির্মাণের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হলেও, বর্তমানে নির্মাণ কাজ এখনও চলছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে, HSFC-এর নির্মাণ কাজের প্রায় ৭০% সম্পন্ন হয়েছিল। তবে, কোভিড-১৯ অতিমারি এবং অন্যান্য কিছু কারণে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি কিছুটা ধীর হয়ে যায়।

ইসরো ২০২৪ সালের শেষের দিকে HSFC-এর নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে, HSFC-এর নির্মাণকাজের ৮০% সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। ইসরো আশা করছে যে, ২০২৪ সালের শেষের দিকে HSFC-এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং ২০২৫ সালের শুরুতে HSFC-এর কার্যক্রম শুরু হবে।

HSFC নির্মাণের কাজ শেষ হলে, এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। এই কেন্দ্রটি ভারতকে মানব মহাকাশযান অভিযানে আরও এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

SDSC এবং HSFC এর মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি হল:

সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র (SDSC):

 

  • প্রধান উদ্দেশ্য: বিভিন্ন মিশনের জন্য উৎক্ষেপণ যান এবং উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা, যার মধ্যে রয়েছে পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, যোগাযোগ, নেভিগেশন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা।
  • সুবিধা: উৎক্ষেপণ প্যাড, যান সমাবেশ ভবন, প্রোপেল্যান্ট স্টোরেজ এবং পরিচালনা সুবিধা, ট্র্যাকিং এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, ইত্যাদি। এ ছাড়াও আছে, একটি ভূ-উপগ্রহ ট্র্যাকিং ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (GSTC) এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (MRC)।
  • ক্ষমতা: বিভিন্ন পেলোড ক্ষমতা এবং কক্ষপথের প্রয়োজনীয়তা সহ বিভিন্ন মিশনকে সমর্থন করে।

 

মানব মহাকাশ উড়ান কেন্দ্র (HSFC):

 

  • প্রধান উদ্দেশ্য: মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ, মানব মহাকাশযান এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি উন্নয়ন ও পরীক্ষা এবং ভবিষ্যতের মানব মহাকাশযান মিশনগুলিকে সমর্থন করা।
  • সুবিধা: মহাকাশযান মডিউলের মকআপ, মহাকাশচারী প্রশিক্ষণের জন্য সেন্ট্রিফিউজ, জীবন সহায়তা সিস্টেম পরীক্ষা ল্যাব, মিশন কন্ট্রোল সেন্টার, ইত্যাদি।
  • ক্ষমতা: মহাকাশচারী প্রশিক্ষণ, মহাকাশযান উন্নয়ন এবং মিশন নিয়ন্ত্রণ সহ মানব মহাকাশযানের প্রয়োজনীয়তাগুলিতে বিশেষভাবে ফোকাস করে।

SDSC যেখানে মানবহীন মিশন এবং উপগ্রহ উৎক্ষেপণে মনোযোগ দেয়, সেখানে HSFC মহাকাশে মানুষের উড়ান সম্পর্কিত প্রচেষ্টায় নিবেদিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ, গগনযান মহাকাশযান এবং উৎক্ষেপণ যান উন্নয়ন এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের প্রথম মানব মহাকাশযান মিশন সফল করা এবং তার পরেও ভবিষ্যতের অভিযানগুলিকে সম্ভব করে তোলা।

নিশানায় শুক্র এবং আরও

ইসরোর লক্ষ্য হল ভারতকে একটি মহাকাশ শক্তিতে পরিণত করা। ইসরো-র বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মসূচিগুলি এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।

ইসরো প্রধান সোমনাথ জানান, ২০২৮ সালে শুক্র গ্রহেও একটি মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এই মিশনের খরচ কমানোর উপায় খুঁজে পেতে কাজ করছেন। তা ছাড়া, শুক্র গ্রহ একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। সেখানে জীবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। ভারতের এই অভিযান শুক্র গ্রহ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। ২০২৮ সালে শুক্র গ্রহের অভিযানও ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য হবে। তবে সোমনাথ এ-ও জানান, শুক্র মিশনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্ধারিত কাজগুলোই ইসরোর প্রধান লক্ষ্য।

এ ছাড়াও, ভারী পেলোড উৎক্ষেপণের জন্য একটি নতুন রকেট তৈরির কাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে। আগের চেয়েও ভারী পেলোড উৎক্ষেপণের জন্য একটি নতুন রকেটের উন্নয়ন ভারতের মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি। এই রকেটটি ভারতকে আরও ভারী ওজনের মহাকাশযান উৎক্ষেপণের ক্ষমতা দেবে। এটি ভারতের চাঁদে মানুষ পাঠানো এবং মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের মতো মহান লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সামগ্রিকভাবে, ইসরোর এই সাম্প্রতিক ঘোষণাগুলি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এই সাফল্যগুলি ভারতকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মহাকাশ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।

এক নজরে ইসরো

ভারতের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। এর সফল কর্মসূচির তালিকায় রয়েছে পৃথিবী কক্ষপথে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে অভিযান, এবং মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা।

১৯৭৫ সালে ইসরো ভারতের প্রথম উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ করে। ১৯৮০ সালে ভারতের প্রথম উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে। ২০০৮ সালে ইসরো চাঁদে প্রথম সফল ভাবে একটি মহাকাশযান অবতরণ করায়। ২০১৯ সালে ইসরো চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম বারের মতো একটি রোভার অবতরণ করায়।

ভারতের অর্থনীতি ও প্রযুক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইসরো। এর তৈরি উপগ্রহ ও প্রযুক্তি ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন যোগাযোগ, টেলিভিশন, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, এবং কৃষি। ইসরো-এর গবেষণা ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

 ইসরো-র বর্তমান কর্মসূচি

ইসরো বর্তমানে নিম্নলিখিত কর্মসূচিগুলি বাস্তবায়ন করছে:

 

  • গগনযান:গগনযান হল ইসরো-এর প্রথম মানববাহী মহাকাশযান। এই মহাকাশযানে দু’জন মহাকাশচারী থাকবেন। গগনযান ২০২৪ সালের মধ্যে উৎক্ষেপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
  • দেশে দ্বিতীয় একটি মহাকাশ যান উন্নয়ন ও উৎপাদন কেন্দ্র:ইসরো ভূমিতে আর একটি স্থায়ী মহাকাশ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এই মহাকাশ কেন্দ্র বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা পরিচালনা করবেন।
  • মঙ্গল গ্রহে অভিযান:ইসরো ২০৩০ সালের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে একটি রোভার পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এই রোভার মঙ্গল গ্রহে জল ও অন্যান্য জীব-উপাদানের সন্ধান করবে।

 ইসরো-র সাফল্য

ইসরো ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই সাফল্যগুলির মধ্যে রয়েছে:

 

  • ১৯৭৫ সালে প্রথম সফল উপগ্রহ আর্যভট্ট উৎক্ষেপণ
  • ১৯৮০ সালে ভারতের প্রথম উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু
  • ২০০৮ সালে চাঁদে প্রথম সফলভাবে একটি মহাকাশযান অবতরণ
  • ২০১৯ সালে চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে প্রথমবারের মতো একটি রোভার অবতরণ