(ড্রাগ চক্রের পিছনে ছুটে বেড়ানো সঞ্জয় গুপ্ত-র কাজ। মাদক চক্রের অপারেশন নিয়ে তাঁর ধারাবাহিক উপন্যাস ‘একটি অসমাপ্ত কাহিনী’।)

মেয়েটির ডাক শুনে অমিত অবাক হলেও, জজসাহেব একটু অপ্রভিত হয়ে পড়লেন।
—আমার মেয়ে ঈপ্সিতা। আসলে আজ ওর জন্মদিন।
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসলো অমিত। “হ্যাপি বার্থডে। “
তারপর সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, “তাহলে আমি চলি স্যার। কালকে কোর্টে পেশ করবো।”
এমন সময় বড় পোস্টে থাকা লোকেরা একটু অসুবিধা বোধ করেন। এই মানুষটিকে পার্টিতে ডাকাটা ঠিক হবে কি না, ভাবতে গিয়ে। কিন্তু লোকটি নিপাট ভদ্রলোক।
একটু ইতস্তত করে বল্লেন, ‘‘অফিসার, অসুবিধা না থাকলে,ভেতরে চলে আসুন। মেয়ের জন্মদিনের পার্টিটা জয়েন করুন।”
ভেতর থেকে, ওদের দেরি দেখেই হয়তো, পরিপাটি করে সাজা, পাটভাঙা শাড়ি পরে এক ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এসেছেন। অমিত দেখেই চিনলো। বনানীদি। অনুষ্ঠানে আলাপ হয়েছিল।
প্রথমে, আলো-আধারির খেলায় বনানীদি চিনতে পারেননি। তারপর নতুন ভাবে জজসাহেবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর অবশ্য আর কোনও ওজর আপত্তি চললো না।
খুব বেশি মানুষ অবশ্য ডাকেননি ওরা। জজদের অনেক প্রটোকল মেনে চলতে হয়।

দু-দশ জন শহরের গণ্যমান্য লোক। বনানীদির মাসতুতো ছোট বোন আর তার বান্ধবী। তারাই বাইরে থেকে এসেছেন।
কেক কাটা শেষ। ন্যাপকিন কাগজে করে এক টুকরো কেক সবাইকে দিয়ে গেল ঈপ্সিতা। এই সুযোগে ফিস ফিস করে ওর পছন্দের চকোলেট আর স্কুলটা জেনে নিলো অমিত। একেবারে খালি হাতে বাচ্চাদের জন্মদিনে কি করে যাওয়া যায়? আজ তো উপায় নেই, কাল এক ফাঁকে স্কুল ছুটির সময় দিতে পারলেই হবে।
খুব চমৎকার গান গাইছেন বনানীদির মাসতুতো বোনের বান্ধবী। রবীন্দ্রসংগীত থেকে শুরু করে আধুনিক। একজন ভদ্রলোক তবলায় প্রাণপণে সঙ্গত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বোঝাই যায়, ভদ্রমহিলা পেশাদার গায়িকা। তার সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন কাজ।
ভদ্রমহিলা বুঝতে পেরেই যেন, রবি ঠাকুরের তালছাড়া গানগুলো ধরলেন। তবলচি ভদ্রলোক হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
গোনাগুনতি দর্শক। তবে রসিকজন কম হলেও গাইতে আনন্দ। সবাই একটা দু’টো করে গানের ফরমায়েশ করছে। ভদ্রমহিলা গাইছেন। কোনও গানের টুকরো অংশ গেয়েই অন্য গানে চলে যাচ্ছেন।
একসময়, লোকেদের ফরমায়েশ কমে এলো। খুব বড় নয় ঘরটি। নিজের মনেই গাইতে গাইতে ভদ্রমহিলা মুখ তুলে তাকালেন। তারপর, নিবিষ্ট মনে গান শুনতে থাকা অমিতের উদ্দেশে বললেন, আপনার কোনও পছন্দের গান বললেন না। ভাল লাগছে না?
চমকে মুখ তুলে তাকালো অমিত। তারপর অন্য কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, মৃদুস্বরে বললো, “আমার লোকগীতি বা ভাটিয়ালি গান শুনতে খুব ইচ্ছে করছে।”
(ক্রমশ)