(ড্রাগ চক্রের পিছনে ছুটে বেড়ানো সঞ্জয় গুপ্ত-র কাজ। মাদক চক্রের অপারেশন নিয়ে তাঁর ধারাবাহিক উপন্যাস ‘একটি অসমাপ্ত কাহিনী’।)

গানের অনুষ্ঠান হয়তো আরও অনেকক্ষণ চলতো। কিন্তু ভদ্রমহিলার ফ্লাইট কাল খুব সকালে। মাসতুতো বোন অবশ্য থাকছেন জজসাহেবের বাড়িতেই। কিন্তু তার বান্ধবী, শহরের নামকরা হোটেলে। নামী গায়িকা, যে সে জায়গায় থাকা মানায় না। রাত থাকতেই তাকে বেরিয়ে যেতে হবে। সেই জন্য, ইচ্ছে না থাকলেও থামলো অনুষ্ঠান। খাওয়াদাওয়ার পালা চুকোবার পর এবার সবাই বিদায় নিচ্ছে।

অমিতের সঙ্গে জিপসি আছে। সুতরাং ফেরা নিয়ে চিন্তা নেই। সবাই চলে যাচ্ছে। বেশ রাত হয়েছে। প্রায় এগারোটা।  ভদ্রমহিলাকে হোটেলে পৌঁছে দিতে হয়।

জজসাহেবের ড্রাইভার চলে গেছে। তিনি নিজেই নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। অমিত বললো,  পৌঁছে দিচ্ছি। তাছাড়া, সকালে এয়ারপোর্টে পৌঁছবার ব্যবস্থাও আমিই করে দেবো।

যে পদে কাজ করে, সেখানে হামেশাই এই রকম ভরসা জাগানো কথা বলতে হয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের। তারাও ভরসা করেন।

ভদ্রমহিলাও আপত্তি করলেন না।

হোটেলটি খুব দূরে নয়। খুব তাড়াতাড়িই পৌঁছে যাওয়া। ভদ্রমহিলা নামলেন। একটু ইতস্তত করে বললেন, সকাল চারটায় নাকি বেরুতেই হবে?

অমিত হাসলো। তারপর বললো, মোবাইল নম্বরটা নিয়ে রাখুন। সকালে তৈরি হয়েই ফোন করবেন। গাড়ি নীচেই পেয়ে যাবেন।

একটুখানি দাঁড়ানো। তারপর কোনও কথা না বলে দ্রুত হেঁটে অদৃশ্য হয়ে গেলেন মহিলাটি।

এত সকালে, ভোর চারটেয় ফের আসার কোনও মানে হয় না। রাত প্রায় বারোটা বাজতে চলেছে। বাড়ি না গিয়ে, পার্কিংয়ে ভোর অবধি থেকে গেলেই হয়ে যায়।

অনেক বড় জায়গা পার্কিংয়ে। গাড়িটা গুছিয়ে রাখতে রাখতেই ফোন বাজলো।

উতলা সুরে, জিজ্ঞেস করলো , “তুমি কি চলে গেছো? “

—না।

—আমি আসছি। এক্ষুনি আসছি।

খুব বেশি সময় নেয়নি। অথচ এইটুকু সময়ের মধ্যেই পোশাক পাল্টে নিয়েছে। সেই সুসজ্জিতা গায়িকার সঙ্গে শুধু চেহারাটাই মেলে এখন। এখন মহিলা নয়, আটপৌরে মেয়ের মতো লাগছে।  দৌড়ে এসেছে পার্কিং লটে। হাঁপাচ্ছে। চোখের দিকেই প্রথম নজর পড়লো অমিতের। সেই টলটলে চোখ। একটু যেন ভেজা।

কিন্তু গলার স্বরে তার কোন আভাস নেই।

বললো, “মনে হয়েছিল, তুমি থাকবে।  নামিয়ে দিয়েই  চলে যাবে না।”

অমিত বললো, “সকালে আসতেই হতো। তাই ভেবেছিলাম, রাতটা এখানেই কাটিয়ে দেবো।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেয়েটি।

তারপর বললো, তোমার শহরে রাতে কোথাও কফি পাওয়া যায় না? একটু কফি খাওয়াবে?

(ক্রমশ)