পেট্রল, ডিজেলের পর ভারতে এবার আকাশছোঁয়া দাম হতে চলেছে ভোজ্য তেলের (Edible Oil)। এমনিতেই বেশ কিছুদিন থেকে সর্ষের তেলের বাজার আগুন। এবার বড় ধরনের আশঙ্কা পাম তেল (Palm oil), সূর্যমুখী তেল নিয়েও।
যুদ্ধ চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের। কৃষ্ণসাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ। সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেল ঢুকছে না রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভোজ্য তেল রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়াকে জরুরি ভিত্তিতে ভারত সরকার অনুরোধ করেছে তেলের যোগান বাড়াতে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় (Indonesia) ইতিমধ্যেই ভোজ্য তেল নিয়ে শুরু হয়েছে সমস্যা। সেখানকার নাগরিকেরাই এখন ঠিক ভাবে ভোজ্য তেল পাচ্ছেন না। বিক্ষোভ দানা বাধছে ইন্দোনেশিয়ায়। জনগণকে শান্ত করতে সে দেশের সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভোজ্য তেল রফতানির উপর। রয়টার্স এমন খবর জানিয়েছে।
গোটা দুনিয়ার মধ্যে ভারতই সবচেয়ে বেশি ভোজ্য তেল আমদানি করে। মূলত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে ভোজ্যতেল আমদানি করে থাকে ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই সেই দু’টি দেশ থেকে ভোজ্য তেলের রফতানি কমে গিয়েছে। সূর্যমুখী তেলের সবচেয়ে বড় উৎপাদক ইউক্রেন ও রাশিয়া , দুনিয়ার প্রায় ৫৩ শতাংশ উৎপাদন হয় সেখানে। যুদ্ধের কারণে এই সব অঞ্চল থেকে গোটা পৃথিবীতে তেল রফদানি বন্ধ। সর্বত্র তাই চড় চড় করে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম।
ভোজ্য তেল নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ ভারতের জন্য সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেদেশে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভোজ্য তেলের জন্য দোকানের সামনে লাইন দিচ্ছেন। জাভা শহরে ভোজ্য তেলের একটি লাইন ছিল প্রায় ২ কিলোমিটার লম্বা। এমনকি, খবর এসেছে এই লাইনে দাঁড়িয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইন্দোনেশিয়া সরকার জরুরি ভিত্তিতে রফতানির উপর কিছু নতুন নিয়ম আরোপ করেছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাজারে ভোজ্য তেল বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার এই কড়াকড়িতে সেখান থেকে আনা অপরিশোধিত পাম তেলের ল্যান্ডিং কস্ট প্রায় ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। পাম তেলের পর ভারতে দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত সোয়া তেলের দাম এই বছর ২৯ শতাংশ বেড়েছে, আর সূর্যমুখী তেলের আমদানি যুদ্ধের কারণে আপাতত বন্ধ। ইতিমধ্যে ভিন্ন কোম্পানির ভোজ্যতেলের দাম গত একবছরে দ্বিগুন হয়ে গেছে। ধারা পরিশোধিত সূর্যমুখী তেল 220/লিঃ জেমিনি পরিশোধিত সূর্যমুখী তেল ২২৪/লিঃ , মন্ত্র অর্গানিক এক্সপেলার প্রেসড সানফ্লাওয়ার অয়েল ৩৩৫/লিঃ. আশঙ্খা আরো দাম বাড়বে। গত বছর ভারতে মোট ভোজ্য তেল আমদানির প্রায় ১৩ শতাংশ (১ কোটি ৬০ লক্ষ টন) ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে এসেছে ।
ভারতে পাম তেলের আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে সরকারি আধিকারিকেরা এই সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের সাথে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার সরকারকে তাঁরা বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ায় বায়ো-ডিজেলের ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে , তাকে শিথিল করে পাম তেলের রফতানি বাড়ানো হোক। ইন্দোনেশিয়া তাদের মোট পাম তেলের ৩০ শতাংশ বায়ো-ডিজেল উৎপাদনে ব্যবহার করে। ভারত সরকারের একজন আধিকারিক বলেন, ‘‘কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ইন্দোনেশিয়ার উচিত জ্বালানির চেয়ে খাবারকে অগ্রাধিকার দেওয়া।’’ ভারত তার ভোজ্য তেলের চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে, যার মধ্যে পাম তেলের পরিমাণ ৬০%-এর বেশি।
ভারত গত আট মাসে চারবার উদ্ভিজ্জ তেল আমদানির উপর কর কমিয়েছে। এমনকি, শুধুমাত্র অপরিশোধিত তেলের পরিবর্তে বিদেশি পরিশোধিত পামতেল কেনার অনুমতি দিয়েছে। তবুও দাম এখনও বেড়ে চলেছে। সরকারের একটি সূত্রের কথায়, “ভোজ্য তেলের দাম আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমরা বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করছি। “
ভারত দক্ষিণ আমেরিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন তেল এবং ইউরোপ থেকে রেপসিড তেল আমদানি করার চেষ্টা করছে। তবে দূরত্ব ও প্রাপ্যতা এখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।