সুখেন্দু হীরা

সুকুমার রায় লিখেছিলেন, “গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।”

‘বইয়ের আমি, বইয়ের তুমি…’ , গোঁফ দিয়ে মানুষ চেনা গেলেও বই দিয়ে কি মানুষ চেনা যাবে? তবে মানুষ পুরোপুরি চেনা না গেলেও তাঁর আগ্রহের বিষয়গুলো জানা যাবে, এর থেকে তাঁর কিছুটা মানসিকতার আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে। তাই অস্কার ওয়াইল্ড বলেছেন, “একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবেন, সেটি অন্য কিছু দিয়ে বোঝা না গেলেও তার পড়া বইয়ের ধরন দেখে তা অনেকাংশেই বোঝা যায়।” বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেন, “কোন ব্যক্তির মানসিকতা বোঝা যায় তিনি কোন সংবাদপত্র বা পত্রিকা নিয়মিত পড়েন, তা দেখে।”

যাই হোক, সাধারণত যারা বই পড়তে ভালোবাসেন বা যারা গ্রন্থ পাঠে আসক্ত তাদের বলা হয় ‘বইপোকা’। ভদ্র ভাষায় বলে গ্রন্থকীট। ইংরাজীতে বলে Bookworm। বইয়ের পোকা কিন্তু সত্যি সত্যি আছে। যে পোকা বই কেটে দেয়। এই পোকাদেরও ইংরাজিতে Bookworm বলে। এরকম একটি পোকার নাম সিলভারফিস (Silverfish)। সিলভারফিস একটি ডানা বিহীন পতঙ্গ, হালকা ধূসর বর্ণের। মাছের মতো দেখতে বলে পোকার নাম হয়ে গেল মাছ। অবশ্য চিংড়ি মাছও দেখতে সাধারণ মাছের মতো নয়। চিংড়ি মাছ নাকি প্রকৃত মাছ নয়, জলের পোকা।

জলের পোকা, বইপোকা তো বুঝলাম, কিন্তু ‘বইরাক্ষস’ কথাটি কি আপনারা শুনেছেন? অনেকদিন আগে আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়তে পড়েছিলাম এক রাশিয়ান ভদ্রলোকের কথা; তিনি সেসময় ১০ হাজার বই পড়ে ফেলেছিলেন। তাই তাঁকে বইপোকা না বলে পুস্তকরাক্ষস বলা হচ্ছিল। তিনি শুধু বই পড়েছেন তা নয়; তিনি যে বইটি পড়লেন, তার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে (Gist) লিখে রাখতেন। আমিও অনুপ্রাণিত হয়ে পড়ে ফেলা বইয়ের সারসংক্ষেপ লেখা শুরু করলাম। কিন্তু আমার বয়স প্রায় অর্ধশতক হতে চলল, এখনও হাজারটি বই পড়ে উঠতে পারলাম না। আর কতদিন বাঁচব! কটা আর বই পড়তে পারব?

পশ্চিমবঙ্গের একজন প্রাক্তন রাজ্যপাল কোনও এক জনসমাবেশে বলেছিলেন, আমি বাংলাকে চেনার জন্য, বাংলা সংস্কৃতিকে জানার জন্য তিনমাসে হাজারটা বই পড়ে ফেলেছি। আমি তখন ভাবলাম, স্যর যদি এই গতিবেগে পড়া চালিয়ে যান, তাহলে আড়াই বছরের মধ্যে ‘পুস্তকরাক্ষস’ উপাধি পেয়ে যাবেন।

যে রাশিয়ান ব্যক্তি ১০,০০০ বই পড়েছেন, তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে কত বই ছিল জানিনা। বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ৮৪ হাজার বইয়ের মালিক ছিলেন, তিনি সারা জীবনে কতগুলি বই পড়েছিলেন আমরা জানা নেই। তাঁর সংগ্রহ সসম্মানে ঠাঁই পেয়েছে কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে।

বই মানুষের জীবনে কত জরুরি সে কথা যুদ্ধবাজ নেপোলিয়ান বোনাপার্ট পর্যন্ত বুঝেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল।” আমাদের গর্ব হয়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তার থেকে বেশি বই সংগ্রহ করেছিলেন। তার একটা বড় অংশ নিশ্চয়ই কিনেছিলেন। এজন্য তার কত অর্থ ব্যয় হয়েছিল? অবশ্য সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, “বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয় নি।”

ঠিকই বলেছেন, বই কিনে যেমন দুর্গাদাস মণ্ডল দেউলিয়া হননি। দুর্গাদাসবাবুর সংগ্রহে আট হাজার বই ছিল। তিনি সামান্য প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন এবং ১৯৯৯ সালে পয়লা ডিসেম্বর ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে সাড়ে পাঁচ হাজার বই বিলিয়ে দিয়েছেন। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি তাঁর ১৫০০ বই ও অন্যান্য সংগ্রহ দান করলেন। দুর্গাদাসবাবুর নিবাস বাঁকুড়া জেলায় বড়জোড়া থানা এলাকার মনোহরপুর গ্রামে।

বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সংগ্রহ দিয়ে এসে আমাকে আবেগতাড়িত হয়ে ফোন করছিলেন, “আজ আমার সদ্য কন্যা বিদায় দেওয়া পিতার মতো অনুভূতি হচ্ছে। কন্যাকে পাত্রস্থ করার পর কন্যার পিতার যেমন আনন্দ ও দুঃখ যুগপৎ হয়, আজ সেই রকম লাগছে। আমার এতদিনের সযত্নে সংগৃহীত, লালিত জিনিস বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে তাই মনে হচ্ছে”।

দুর্গাদাসবাবু রাশিয়ান পুস্তক রাক্ষসের মতো বইয়ের সারসংক্ষেপ লিখে না রাখলেও নানা বিষয় টুকে রাখতেন। যেমন ‘মা’ বিষয়ে বিভিন্ন উদ্ধৃতি, ‘মানুষ’ নিয়ে নানা উক্তি। আমি বললাম, “মাটি বিষয়ে উবাচ সংগ্রহ করে ফেলুন।” ব্যস উনি ‘মা, মাটি, মানুষ’ নামে একটি
উদ্ধৃতি সংকলন বার করে ফেললেন।

এর থেকে প্রমাণ হয় দুর্গাদাসবাবু প্রচুর বই পড়েন। অনেকে বই কেনেন বা সংগ্রহ করেন কিন্তু পড়েন না; আসবাবের মতো সাজিয়ে রাখেন। অবশ্য তাদের আর দোষ কী! ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রসজ্ঞ লেখক সিডনি স্মিথ (১৭৭১ – ১৮৪৫) বলেছিলেন, “কোন আসবাবপত্রই বইয়ের মতো সুন্দর নয়”।

আগে দূরদর্শনে দু’টি চ্যানেল ছিল; ডিডি-১ এবং ডিডি-২। ডিডি-২- এ রোজ সম্ভবত রাত দশটা থেকে একটি সাহিত্য নির্ভর বাংলা নাটক হতো। একদিন একটা নাটকে দেখেছিলাম- এক ধনী ব্যক্তির বাড়িতে বুক সেলফে রবীন্দ্র রচনাবলী সাজানো আছে। ওরা সেগুলি পড়েন না। ওরা সাধারণত ম্যাগাজিন পড়েন, বলা ভালো দেখেন। ওদের বাড়িতে একজন কলেজ পড়ুয়া আত্মীয় থাকতে আসে, রবীন্দ্র রচনাবলী পড়তে চাইলে বাড়ির সবাই আতঁকে ওঠেন। পড়ার জন্য একটি খণ্ড বার করে দিলেও ঘনঘন খোঁজ নিতে থাকেন, বইয়ের যেন কোন ক্ষতি না হয়। অবশেষে ছেলেটি বই ফেরত দিয়ে আত্মীয় বাড়ি ছেড়ে হস্টেলে আশ্রয় নেয়।

রবীন্দ্র রচনাবলী বাঙালির পরম সম্পদ। সরকারি ভাবে দু’বার রবীন্দ্র রচনাবলী বেরিয়েছে। প্রথমে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হয়েছিল, খণ্ডে খণ্ডে বহুদিন ধরে বেরিয়েছিল। আবার ২০১১ সালে রবীন্দ্র সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে। এবার আগের মতো ধীর গতি না হলেও এখনও পর্যন্ত ২০টি খণ্ড বেরিয়েছে। বিশ্বভারতীতে আছে সুলভ সংস্করণ ও রাজ সংস্করণ। অন্যান্য প্রকাশকরাও বিভিন্ন আঙ্গিকে রচনাবলী বার করেছেন। সবগুলোই ভালো ব্যবসা দেয়।

তবে বাংলার প্রকাশনা জগতটা এখনও পুরোপুরি পেশাদার হয়ে ওঠেনি। প্রকাশক লেখক ও পাঠকের মধ্যে সাঁকোর কাজ করে। তবে সাঁকোটা বড্ড নড়বড়ে। পাঠক বলে, “বইটা ‘আউট অফ প্রিন্ট’ করে রেখে দিয়েছে’, ‘ইচ্ছা মতো দাম বাড়িয়েছে’। লেখক বলে, ‘লেখাটা নিয়ে ফেলে রেখেছে, ছাপাচ্ছে না, প্রচার করছে না, পয়সা দিচ্ছে না।’ প্রকাশক বলছেন, “লোকে বই পড়ছে না, কাগজের দাম বেড়েছে, বাঁধাই খরচ বেড়েছে।” অন্যান্য ব্যবসার মতো বই ছাপানোটাও একটা ব্যবসা। লাভজনক না হলে প্রকাশকরা বই ছাপাবেন কেন! এই টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়েও এগিয়ে চলেছে বই ব্যবসার জগৎ।

বই ব্যবসার অনেক অনুসারী শিল্প রয়েছে। তার মধ্যে আছে লেখার টাইপিং (ডিটিপি), বইয়ের অলংকরণ, প্রচ্ছদ অঙ্কন, তারপর ছাপানো। তার জন্য ছাপাখানা, কাগজ, কালি, সেলাই, বাঁধাই। আর বাঁধাইয়ের জন্য আঠা, সুতো, বোর্ড। বই পাঠকের হাতে এলে মলাট। বইয়ে নাম লেখার জন্য পেন, দাগ দেওয়ার জন্য পেনসিল, চিহ্নিত করার জন্য বুকমার্ক, বই রাখতে আলমারি, বই বাতিল হয়ে গেলে কিলো দরে কেনার লোক, বই পুরনো হয়ে গেলে বাঁধাইয়ের দোকান ইত্যাদি। বই ভরে দেওয়ার প্যাকেট বা ব্যাগ, বই পাঠানোর জন্য প্যাকিং এবং ক্যুরিয়ার সার্ভিসের লোক। বই জনপ্রিয় হলে টিভি সিরিয়াল বা সিনেমা। শেষ লাইনটা মনে হয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল!

বই রাখার আলমারি প্রসঙ্গে মার্ক টোয়েনের কথা মনে পড়ে গেল। মার্ক টোয়েনের ঘরের মেঝেতে গাদা গাদা বই স্তুপাকৃতি হয়ে পড়ে থাকতো। তাই দেখে তাঁর এক বন্ধু বললেন, “বইগুলো নষ্ট হচ্ছে, গোটা কয়েক শেলফ জোগাড় করছ না কেন?” মার্ক টোয়েন ঘাড় চুলকে উত্তর দিলেন, “বইগুলো যে ভাবে জোগাড় করেছি, শেলফ তো আর সে ভাবে জোগাড় করা যায় না। শেলফ তো আর কারও কাছ থেকে ধার করে আনা যায় না।”

বই ব্যবসার একটা বড় প্লাটফর্ম হল বইমেলা। বইমেলাতে স্টল তৈরি, স্টলে ইন্টিরিয়র (যদি কেউ করেন), খাবারের দোকান, ফুটপাতে অন্যান্য জিনিসের পসরা, মাঝের মঞ্চে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসবই অনুসারী শিল্পের মধ্যে ফেলতে পারি।

এই বইমেলাতে আমি দু’টি অভিনব অনুসারী শিল্প দেখেছিলাম। ময়দানে বা মিলনমেলাতে বইমেলার প্রবেশ পথের বাইরে একজন বসে থাকতেন সেলোফেন পেপার নিয়ে। তিনি তাই নিয়ে বইয়ে মলাট দিয়ে দিতেন। এই স্বচ্ছ মলাটে বইয়ের প্রচ্ছদ স্পষ্ট বোঝা যেত; আর বইটি সহজে পুরনো হতো না। করোনার প্রথম ধাক্কার পর কলকাতায় অনেকগুলি বই বাজার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এইসব বই বাজারে ছিল ৫০% পর্যন্ত ছাড়। এতো ছাড়ে পাঠকের জিভে জল চলে এসেছিল। দু’হাত ভরে বই কিনেছেন তারা। এত বই নিয়ে যাবেন কীভাবে। দেখি ক্যাশ কাউন্টারের কাছে বড় থলে বিক্রি হচ্ছে বই নিয়ে যাওয়ার জন্য, দাম ৩০ টাকা। অনেক সময় পাঠককে আগেই থলে ধরিয়ে দিচ্ছেন বই পছন্দ হলে থলেতে রাখার জন্য। যেমন শপিং মলে গেলে হাতে বাস্কেট বা ট্রলি ধরিয়ে দেয়।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বই পড়াকে যথার্থ হিসাবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।” তিনি বই পড়ার আনন্দ নিয়ে বলেছেন; কিন্তু বই কিনতে না পারার দুঃখ নিয়ে কিছু বলেননি।

প্রতিভা বসু বলেছেন, “বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয় যার সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া হয় না, কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।” বইয়ের সাথে ঝগড়া হয় না বটে; কিন্তু বইপড়া নিয়ে বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এই নিয়ে আমরা একটি জোক্‌সের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এক বইপোকা স্বামীকে স্ত্রী মুখ ঝামটা দিয়ে বলেন, “সারাদিন মুখে বই গুজে পড়ে থাকো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি বই হলেই ভালো হতো!” স্বামী সহাস্যে উত্তর দেয়, “তাহলে পঞ্জিকা হয়ো, প্রতিবছর পাল্টাতে পারব।”

আপনারা কি জানেন, বাংলার বেস্ট সেলার বই হল এই পঞ্জিকা! সবচেয়ে বেশি ছাপানো হয়, যার সামান্য অংশই অবিক্রিত থাকে। পঞ্জিকা তো দৈনন্দিন কাজে লাগে। বই কাজে লাগে জ্ঞান আহরণে ও চিত্ত বিনোদনে। অন্যান্য কাজেও বই লাগে! উদাহরণ দিতে গিয়ে মার্ক টোয়েনের কিছু উক্তি ধার করি – আমেরিকান সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনকে একবার এক তরুণী ২৫ ডিসেম্বরের কিছুদিন আগে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “বড়দিনে বই উপহার পেতে কেমন লাগে আপনার?”

উত্তরে মার্ক টোয়েন বলেছিলেন, “বইটা যদি কাজের হয়, তবে খুব ভালো লাগে। যেমন ধরো চামড়ার বাঁধাই হলে সেটা ক্ষুর শান্‌ দেওয়ার কাজে লাগে। ছোটখাটো বই হলে টেবিলের নড়বড়ে পায়ার নীচে লাগানো যায় স্বচ্ছন্দে। শক্তপোক্ত বই হলে সেটি ছুড়ে কুকুর তাড়াতে সুবিধা হয়। আর যদি আমার ঘরের জানালার শার্সি ভেঙে যায়, তবে আমি আশা করব একখানা ঢাউস সাইজের বই, যা ঢাকা দেওয়ার পক্ষে আদর্শ।”

আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নাড শ ছিলেন আরও এক কদম এগিয়ে। বার্নাড শ-কে একবার এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন, “আপনার কাছে কোন বইটা লাভজনক?” জর্জ বার্নাড শ-য়ের চটপট উত্তর, “আমার চেক বই।”

বর্তমানে বাঙালির মতিগতি বোঝা যাচ্ছে না। দুর্মুখেরা বলছেন – এর কারণ, বাঙালি বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে। বই পড়া দেখে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তাই বাঙালির ভবিষ্যৎ কী সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। বাঙালি কেন বই পড়ছে না? এর উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী তার “বই কেনা” প্রবন্ধের শেষে দিয়েছেন। সেটা আরব্যোপন্যাসের গল্প। আমি সেই গল্প ও তাঁর বক্তব্য হুবহু তুলে দিয়ে আমার এই লেখা শেষ করব।

“এক রাজা তাঁর হেকিমের একখানা বই কিছুতেই বাগাতে না পেরে তাঁকে খুন করেন। বই হস্তগত হল। রাজা বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে বইখানা পড়ছেন। কিন্তু পাতায় পাতায় এমনি জুড়ে গিয়েছে যে, রাজা বার বার আঙুল দিয়ে মুখ থেকে থুথু নিয়ে জোড়া ছাড়িয়ে পাতা উল্টোচ্ছেন। এদিকে হেকিম আপন মৃত্যুর জন্য তৈরি ছিলেন বলে প্রতিশোধের ব্যবস্থাও করে গিয়েছিলেন। তিনি পাতায় পাতায় কোণের দিকে মাখিয়ে রেখেছিলেন মারাত্মক বিষ। রাজার আঙ্গুল
সেই বিষ মেখে নিয়ে যাচ্ছে মুখে।

রাজাকে এই প্রতিহিংসার খবরটিও হেকিম রেখে গিয়েছিলেন কেতাবের শেষ পাতায়। সেইটে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা বিষবাণের ঘায়ে ঢলে পড়লেন।

বাঙালির বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে মনে হয়, সে যেন গল্পটা জানে, আর মরার ভয়ে বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।”

অলংকরণ – রাতুল চন্দরায়