লন্ডনের হাসপাতালে মৃত্যু আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর

যে গানটি শুনলে কোটি কোটি বাঙালির রক্তে শিহরণ জাগে, ভাষা আন্দোলনের সেই বিখ্যাত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-র রচয়িতা আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি বার্ধক্য জনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর গোটা বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। অসমের বরাক উপত্যকায় ভাষা শহিদদের স্মরণ করা হচ্ছে যখন, সেই দিনটিতেই বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের অমর গানের স্রষ্টার প্রয়াণের খবর সামনে এল।
১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে জন্ম। ব্রিটেন-প্রবাসী স্বনামধন্য সাংবাদিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে প্রকাশিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’-র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫০-এ ‘দৈনিক ইনসাফ’পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু। ১৯৫১ সালে ‘‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশ-সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সীমান্ত পেরিয়ে সপরিবার আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছন। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’য় লেখালেখি করেন। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী কলকাতার কয়েকটি বিখ্যাত দৈনিকেও লেখালেখি করতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে তিনি ‘দৈনিক জনপদ’ পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথাও লিখেছেন। লিখেছেন কয়েকটি নাটকও।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে তাঁর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিটি বাঙালিকে উদ্বেলিত করে এসেছে।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘‘সম্রাটের ছবি’, ‘‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’’, ‘‘বাঙালি না বাংলাদেশী’’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’’, ‘‘একজন তাহমিনা’’ ও ‘‘রক্তাক্ত আগস্ট’’।