‘তৃতীয়া’ তিথিটি সারা বছরে কতোবারই তো আসে যায়, কেই-বা সযত্নে রাখে তার খোঁজখবর? টালমাটাল জীবনের হাল ধরতেই মানুষ নাজেহাল। কিন্তু চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লাতৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথির কদরই আলাদা, বিশেষ করে হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে। এই তিথিটি হয়ে ওঠে জেরবার মানুষের জীবনের বাতিঘর। মানুষ নিষ্ঠাভরে বেছে নেয় এই তিথিটিকে তার সৌভাগ্যের অণ্বেষণের দিন হিসেবে। তার পেছনে রয়েছে অজস্র কারণ।

পৌরাণিক নানা ঘটনার ঘনঘটায় ভরা এই দিন। যা কিছু শুভ হিসেবে গণ্য, তার সূচনার পক্ষে এই দিনটির কোনও বিকল্প নেই। আর সেই সুবাদেই ‘অক্ষয়’ হিসেবে মান্যতা পায় এই তিথি। এই দিনটিতেই জন্ম গ্রহণ করেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। বেদব্যাস ও গণেশ এই দিনে মহাভারত রচনা আরম্ভ করেন। আজকের এই দিনেই ত্রেতা যুগ শেষ হয়ে দ্বাপর যুগের সূচনা। আবার এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে আসেন। এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। কুবেরের লক্ষ্মী লাভও হয়েছিল এই দিনে। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাল্যসখা সুদামার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন আজকের দিনটিতে।

এই তিথিকে উপলক্ষ করেই পুরীতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার জন্য রথ নির্মাণ শুরু হয়। বৈদিক বিশ্বাস এই যে, এই পূত তিথিতে যে কোনও শুভকাজ হলে তা অক্ষয় হয়। চারধামের যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে, এইদিনেই তার দ্বারোদ্‌ঘাটন হয়। দ্বার খুললে দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল। আর সেজন্যই এদিনে সকলের নজরে পড়ে সেই দৃশ্য — উখিমঠ থেকে তুষার আচ্ছাদিত পাহাড় বেয়ে ভক্তবৃন্দের কাঁধে চেপে কেদারনাথ ফিরে চলেছেন তাঁর নিজের মন্দিরে।

আজকের দিনে সোনা-রূপোর গয়না কেনা হয় এই বিশ্বাসে যে এই শুভ তিথিতে সোনাদানা বা মূল্যবান জিনিসপত্র কিনলে গৃহে শুভ যোগ হবে। সুখ-শান্তি ও সম্পদ বৃদ্ধি হবে, এই প্রত্যাশাতেই বহু মানুষ কিছু না কিছু কিনে থাকেন।

মানুষের জীবনে জাগতিক দুর্যোগের ছায়া যত বেশি ঘনায়মান হবে, অসহায় মানুষ ততই মরিয়া হয়ে সৌভাগ্যসন্ধানী হবে, এ এক অমোঘ সত্য। এই অসহায়তার পেছনে তার নিজের ভূমিকা কতখানি, তার খোঁজ নেবার দায়িত্ব মানুষ কোনও দিনই নেবে না, কিন্তু পরিত্রাণের পথ খুঁজে খুঁজে হয়রান হবে। সেই পরিত্রাণের অন্তত একটি পন্থার নাম ‘অক্ষয় তৃতীয়া’।