টাকার জোরে নাতি-নাতনির বয়সিদের সঙ্গে বিছানায় বুড়োবুড়িরা। কোন সর্বনাশের পথে দুনিয়া?

কর্তার আছে সুগার বেবি। কর্ত্রীও কম যান না, তারও আছে।

অঢেল পয়সা। আর সেই টাকা ওড়াতে দুই বুড়োবুড়ি আলাদা ভাবে উদ্দাম জীবন বেছে নিয়েছেন। দু’জনেরই সঙ্গী ‘সুগার বেবি’-রা। চলছে একেবারে খুল্লামখুল্লা বেলল্লাপনা।

কারা এই সুগার বেবি? ব্যাপারটাই বা কী? চোখকান খোলা রেখে ডেটিং ওয়েবসাইটগুলিতে নজর রাখুন। সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। বুঝে যাবেন, আজকের দিনে বিত্তশালী ধনকুবের বুড়োবুড়িরা কী ভাবে নাতি-নাতনির বয়সি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একেবারে শর্ত রেখে বিছানায় যাচ্ছেন। হ্যাঁ, যে-সে সম্পর্ক নয়, একেবারে লিখিত ভাবে যৌন সম্পর্ক। এটাই এখন সমাজের এক নতুন ট্রেন্ড। পয়সা ফেকো ফুর্তি লোটো— হাঁটুর বয়সি মেয়ে বা ছেলের সঙ্গে।

সামাজিক সম্পর্কগুলিকে জলাঞ্জলি দিয়ে খুলে বসা হয়েছে এই ব্যবসা। বুড়োবুড়িদের গালভরা নাম সুগার ডাড্ডি, সুগার মাম্মি। কী ক্রাইটেরিয়া সুগার ডাড্ডি বা সুগার মাম্মি হওয়ার?  বলা হচ্ছে, A rich older man or woman who lavishes gifts on a young man or woman in return for his or her company or sexual favours…

ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো ? পয়সা আছে, গিফট দাও। যুবক-যুবতীদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করো। কোনো বাধা নেই। ভারতবর্ষে পতিতাবৃত্তি বৈধ হলেও বহু বাধানিষেধের জালে আটকে। কিন্তু এখানে? ডেটিং ওয়েবসাইট রয়েছে। নাম লিখিয়ে কত খরচ করতে পারবে বলো। সেই মতো সুগার বেবি আসবে, ফুর্তির জন্য নিয়ে তাকে যাওয়া যাবে কোনও রিসর্ট কিংবা দেশ-বিদেশে। তারপর সবটাই তোমার নিয়ন্ত্রণে। দামি মদ- হাত বাড়ালেই সুগার বেবি-আরাম-আয়েস দুনিয়ায় কমতি কিসের? একেবারে ফুলটুস মোস্তি!

আজকের দিনে পুরো আমেরিকা ,অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা এমনকি ভারতেও এই ব্যবসার রমরমা। ‘ইন্ডিয়া টুডে’ তাদের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুগার ড্যাডি এই ভারতে!  একটি সুগার ডেটিং অ্যাপের রিপোর্টের কথা তুলে ধরে জানানো হয়েছে, ভারতে সুগার ড্যাডির সংখ্যা ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার। এটা এশিয়ার যে কোনও দেশের তুলনায় বেশি। সুগার ডেটিংয়ে ভারতের শহরগুলির মধ্য সবচেয়ে এগিয়ে মুম্বই। সেখানে ৬,২৪৬ জন রেজিস্ট্রার্ড সুগার বেবি। ২১,৪৬৪ জন সুগার ড্যাডি রয়েছে সেখানে। দিল্লিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার সুগার বেবি। ১৩,১২৭ জন সুগার ড্যাডি রয়েছে দেশের রাজধানীতে। এছাড়া, পুণে, আমেদাবাদ, চেন্নাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, সুরাত, জয়পুরের মতো শহরগুলিও ক্রমশই এই ডেটিং কালচারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

এসব পড়ে চমকে উঠবেন না।  এটা একটা নতুন ব্যবসা। খুল্লামখুল্লা বিজ্ঞাপন  চলছে অনেক ওয়েবসাইটে । আহ্বান করা হচ্ছে যুবক-যুবতীদের নিজেদের সুগার বেবি হিসেবে নথিবদ্ধ  করানোর জন্য। আশ্চর্যের বিষয় হল, আবেদনপত্রে একটি জায়গায় লেখা থাকছে—ওই  যুবক-যুবতী তাঁদের কনসেন্ট দিচ্ছেন যে সুগার ড্যাডি বা সুগার মাম্মি তাঁদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারবেন। আর কতজন ধনী প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ শুধু ভারতে নানা সাইটে নাম লিখিয়েছেন, শুনলে হতবাক হতে হবে। ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার রেজিস্টার সুগার ড্যাডি! ওই সব সাইটে যাঁরা নিজেদের নাম লিখিয়েছেন নাতনির বয়সি মেয়েদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার জন্য!

ভারতে যৌনবৃত্তির সমস্ত বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ। অথচ এসব চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।

ভারতীয় সুগার ড্যাডিদের কোনও সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমেরিকা, ইউরোপের  দেশগুলিতে সুগার ড্যাডিরা প্রকাশ্যে এইসব সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন। নিউ ইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৫৪ বছর বয়সি, রব নামে এক সুগার ড্যাডি বলেছেন, ‘‘আমি সুগার বেবিদের পতিতা ভাবি না।’’ পেশায় স্টক ব্রোকার ওই ব্যক্তির যুক্তি, ‘‘মেয়েটির পয়সা প্রয়োজন। আর আমার দরকার তাঁর সাহচর্য্যের। আমাদের মধ্যে যেটা রয়েছে, তা হল, পরস্পরের উপকার হয়, এমন একটা সম্পর্ক।’

একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূলত দু’টি কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আর্থিক অসাম্য (inequality) ও বেকারত্ব (unemployment)। এর উপরে জুড়েছে কোভিড মহামারী। যুবক-যুবতীদের জীবনে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কাজের বাজারে নো ভেকেন্সি।  যে করে হোক পয়সা রোজগার করতে হবে। কিছু পয়সার তাই বিনিময়ে অনেক যুবতী বাপের বয়সি কিছু ক্ষেত্রে দাদুর বয়সি লোকেদের সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন। হাজার হোক জীবনটাকে চালাতে হবে। আবার কেউ কেউ শুধু অর্থের প্রলোভনে সুগার বেবি হওয়ার রাস্তা বেছে নিচ্ছেন। ধনী বৃদ্ধের সঙ্গে অবলীলায় বিছানায় যাচ্ছেন নাতনির বয়সি যুবতীরা।